বৃত্তি পরীক্ষার কথায় আসি। পরীক্ষা ছিল ২ দিন। প্রথম দিনের ৩ পেপার মোটামুটি ঝামেলা ছাড়াই শেষ হলো। ২য় দিন অংকেই ঘটলো বিপদ। বর্গের ক্ষেত্রফলের প্রশ্নে পরিসীমা বের করে ফেললাম। আর দশমিকের আরেকটা অংক তাড়াহুড়োয় ভুল করে বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনাকেই মোটামুটি ব্যাকফুটে ঠেলে দিলাম। মন খুব খারাপ হলো। বাইসাইকেলও হাত ছাড়া। কী আর করা!
মন ভালো হওয়ার মতো ঘটনা ঘটলো দু’ এক মাস পরেই, না বৃত্তি নয়। আব্বা বাইসাইকেল কিনে দিলেন, শর্ত পূরণ ছাড়াই! উজ্জ্বল হলুদ রঙের নতুন Avon সাইকেল, দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। বড় কথা এই রং বা ব্র্যান্ডের সাইকেল তখন ক্যাম্পাসে কারোরই নেই। দাম ১৮০০ টাকা, একজন মধ্যবিত্ত বাবার জন্য সে সময় এটি অনেক।
আমার ক্ষুদ্র মাথায় অবশ্য এই ‘বৃহৎ’ চিন্তা কাজ করল না। আমি ঝাঁপিয়ে পড়লাম সাইকেল নিয়ে, বীরদর্পে ঘুরে বেড়াই, মাঝে মাঝে সাইকেল রেস দেই। কিসের বৃত্তি, আর কিসের শর্ত !
মজার ঘটনা ঘটলো আরো কয়েক মাস পর। বৃত্তি পরীক্ষার ফল। শুন্য সম্ভাবনাকে ব্যাকফুটে ঠেলে একদম ফার্স্ট গ্রেডে বৃত্তি পেয়ে গেলাম ! সত্যিই, নিয়তির খেলা বোঝা আসলেই দুঃসাধ্য।
আব্বা কি কিছু বুঝতে পেরেছিলেন? আমি যে বৃত্তি পাবো তা কি আঁচ করেছিলেন?! আমার তা মনে হয়না। আব্বা আসলে এমনিতেই সাইকেলটা কিনে দিতেন, বৃত্তির শর্ত ব্যাপার টা নিছক একধরনের ‘টান’।
জীবন চলার পথে বাবা-মা এক বিনি সুতার টানে সন্তান নামের রঙিন ঘুড়িটা তাদের হৃদয়-আকাশে ধরে রাখেন, কখনো ছেড়ে দেন, কখনো উড়তে দেন। তবে কখনোই কেটে যেতে দেন না। আমরা ক’জনা ই বা তখন বুঝতে পারি?!
সব বাবা ও মায়ের প্রতি আমার অনেক অনেক শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা। ভালো থাকুন পৃথিবীর সকল বাবা-মা!