আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই? আশা করি আল্লাহর রহমতে সবাই ভাল আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আনেক ভালো আছি। আজকের পোস্টে হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায়, স্ট্যাটাস, উক্তি নিয়ে বিস্তারিতভাবে বলতে যাচ্ছি। তো আর দেরি না করে চলুন শুরু করা যাক।
দৈনন্দিন জীবনে কেউ কখনো হতাশাগ্রস্থ হয়নি, এমন ব্যক্তি পৃথিবীতে নেই বললেই চলে। আজকাল আমরা প্রত্যেকেই কম বেশি বিভিন্ন কারণে হতাশার শিকার হই। স্কুল পড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী থেকে শুরু করে চাকরীজীবী পর্যন্ত কেউ এই হতাশার তালিকায় বাদ নই। তবে হতাশার এই ফ্রিকোয়েন্সির মাত্রা দিনে দিনে আগের তুলনায় অনেক বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আর মনস্তাত্ত্বিক অনেক বিজ্ঞানী ব্যক্ত করেছেন যে, অধিক হতাশা ব্যক্তির জীবনে নিয়ে আসতে পারে চরম বিপর্যয়। তাই আজকের আর্টিকেলে আমরা কথা বলব কিভাবে হতাশা একজন ব্যক্তির ওপর ভর করে এবং তার জীবনে কী কী বিপর্যয় নিয়ে আসে। তাহলে চলুন শুরু করা যাক-
হতাশার কারণ:
সাধারণত মানুষ যখন কোনো কিছুর তীব্র আকাঙ্খা করে আর সেই জিনিসটি পায় না, কিংবা যখন বিশেষ কোনো কাজে বিফল হয় তখনই সে হতাশায় পড়ে। আর এই বিফল হওয়ার পেছনে মুখ্য ভূমিকা রাখে যেই জিনিসটি, সেটি হলো নিজের আত্মবিশ্বাস। যে ব্যক্তির কর্মে ও কথায় আত্মবিশ্বাস কম, সে ব্যক্তি তত বেশি হতাশায় ভুগে।
কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে যে, আত্মবিশ্বাসই হচ্ছে ব্যক্তির সফলতার প্রথম গুঢ়তত্ত্ব। তাই কখনো নিজের আত্মবিশ্বাস হারানো যাবে না। আত্মবিশ্বাসের বাইরেও ব্যক্তির হতাশা হওয়ার পেছনে মুখ্য যেই নিয়ামকগুলি কাজ করে, সেগুলো হলো- অর্থনৈতিক সমস্যা, সামাজিক সমস্যা, রাষ্ট্রীয় সমস্যা, পারলৌকিক সমস্যা, পারিবারিক সমস্যা, দুর্ভাগ্যজনিত সমস্যা ও জন্মগত সমস্যা।
হতাশা সমাজের সংক্রামক ব্যাধি:
কথায় বলে, হতাশা হলো সমাজের সংক্রামক ব্যাধি। আসলেই তাই। যদিও এটি কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়, তবু এটি এক ব্যক্তির থেকে আরেক ব্যক্তিতে খুব দ্রুত ছড়ায়। ফলে প্রত্যেক হতাশাগ্রস্থ অনেক ব্যক্তিই কম বেশি বিভিন্ন মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে কয়েকটি জরিপে দেখা গেছে যে, একবিংশ শতাব্দীতে পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ানক মানসিক ব্যাধি হলো হতাশা।
কেননা আমি যদি বর্তমান সময়েরই কথা বলি, তাহলে পৃথিবীতে আজকাল যত মানুষই বিভিন্ন দূর্ঘটনা কিংবা শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছে কেন, এর চাইতে কয়েকগুণ বেশি মানুষই হতাশাসৃষ্ট মানসিক রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালেই জীবমৃত হয়ে নির্দিষ্ট সময়ের আগেই মারা যাচ্ছে। আর আমাদের জন্য সবচেয়ে করুণ সংবাদ এই যে, বিভিন্ন জীববিজ্ঞানীরা বলেছেন যে, প্রতিদিন সারা বিশ্বে যে পরিমাণ মানুষ শারীরিকভাবে আহত বা অসুস্থ হয় এরা কমবেশি প্রত্যেকেই শারীরিক চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে সুস্থ হয়ে থাকে।
কিন্তু এর এক শতাংশও মানসিক হতাশা আক্রান্ত ব্যক্তির চিকিৎসা সঠিকভাবে আজো সম্পাদিত হয় না। তাই হতাশা, শারীরিক অসুস্থতার চাইতেও অনেক বেশি ভয়ংকর। কারণ শারীরিক সমস্যাজনিত ব্যক্তিও সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে জানে, কিন্তু মানসিক হতাশা আক্রান্ত ব্যক্তি সার্বিকভাবে একবারে ভেঙ্গে পড়ে এর্ব তার জীবন দুর্ভিষহ হয়ে পড়ে।
হতাশা ব্যক্তির কী কী সমস্যার সৃষ্টি করে?
হতাশা কী থেকে আসে এটা তো জানলাম, কিন্তু এখন আমরা জানব হতাশা ব্যক্তির কী কী সমস্যার সৃষ্টি করে। পূর্বেই বলেছি, হতাশা মানুষের শারীরিক আঘাতজনিত সমস্যার চেয়েও অনেক বেশি ক্ষতিকারাক। কেননা একজন হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তির জীবনে কী কী সমস্যার সৃষ্টি হয় তা বলে শেষ করা যাবে না। নিচে আমি উল্লেখযোগ্য কিছু সমস্যার কথা লিখছি। যেমন-
১. প্রথমত একজন হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তি নিজের ওপর আত্মবিশ্বাস একবারে হারিয়ে ফেলে এবং কোনো কাজের প্রতি মনোবাঞ্ছা তৈরি করতে পারে না।
২. হতাশাপ্রবণ মানুষেরা কখনো অপরের ভালো দিক সহ্য করতে পারে না। এরা সর্বদাই অন্যের ভুল-ভ্রান্তি ও খুঁত খুঁজে বের করার চেষ্টা করে।
৩. একজন হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তি জনসেবামূলক কাজের প্রতি অনীহা পোষণ করে।
৪. হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তিরা কমবেশি প্রত্যেকেই উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপনের প্রতি ধাবিত হয় এবং অনেক সময় বিপথগামী হয়ে অপরাধমূলক কাজে লিপ্ত হয়।
৫. অনেক সময় এরা অসামাজিক আচরণ করে থাকে।
৬. একজন হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তি সচরাচর নিদ্রাহীনতায় ভুগে থাকে।
৭. হতাশাপ্রবণ মানুষেরা সহজ জিনিসকেও কঠিনভাবে নেয়।
৮. একজন হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তির জীবনে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যাজনিত রোগ, যেমন- হজমশক্তি হ্রাস, আমাশয়, আলসার, প্রহাদ ও কিডনিজনত সমস্যার দেখা দিতে পারে।
৯. হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তিদর অনেকেরই সংসার ও কর্মজীবনে অশান্তির সূত্রপাত ঘটে।
১০. অনেক সময় অভিমানী হয়ে এরা আত্মহননের প্রতি আকৃষ্ট হয়। আর আত্মহত্যার প্রবণতা তরুণ প্রজন্মদের মাঝেই বেশি দেখা যায়।
১১. হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তিরা জীবন দুর্ভিষহ মনে হলে নেশাদ্রব্য সেবন করে থাকে।
১২. হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তির ত্বকের লাবণ্যতা খুব দ্রুত হারায়।
১৩. একজন হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তি বদরাগী স্বভাবের হয়।েএদের মাঝে অল্পতেই রাগী রাগী ভাব দেখা যায়।
১৪. হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তিকে যেকোনো কাজে উদ্যমহীন করে তোলে।
১৫. একজন হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তির বিচারবোধ ক্ষমতা হ্রাস পায়। এবং নিজের ভুল না দেখে অন্যের সামান্য ভুলের জন্য চরম শাস্তি পোষণ করে।
১৬. হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তির শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দ্রুত কমতে থাকে এবং অল্পতেই শারীরিক রোগে আক্রান্ত হয়।
১৭. একজন হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তি উদ্ভট ও ঝুঁকিপূর্ণ জিনিসের প্রতি অনেক বেশি মনোযোগী হয়।
১৮. হতাশাপ্রবণ মানুষেরা জ্যোতিষশাস্ত্র ও অপার্থিব বস্তুর দিকে অনেক বেশি আগ্রহী হয়।
১৯. একজন হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তি অনেক ক্ষেত্রে মানসিকভাবে একেবারে পাগল হয়ে যেতে পারে।
এগুলো ছাড়াও একজন হতাশাগ্রস্থ ব্যক্তির মধ্যে আরো বহু নেতিবাচক দিক প্রকাশিত হয় যা আমরা নিজেরাও কখনো কল্পনা করতে পারি না।। আর আমার কথাগুলো শুনে আপনার বিশ্বাস নাও হতে পারে। কিন্তু এগুলোর প্রত্যেকটা কথাই সত্যি। আপনি যদি কখনো স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট ঘেঁটে থাকেন বা ভালো চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন, তাহলে বুঝতে পারবেন যে উপরিউক্ত কথাগুলো আমি যথার্থই লিখেছি।
সবটুকু পড়ে আপনার হয়তো এটা মেনে নিতে কোনো দ্বিধা নেই যে, হতাশা মানবিক অধঃপতনের প্রধান কারণ এবং এটা নিজের ও অপরের সার্বিকভাবে সকলের ব্যাপক ক্ষতিসাধনে অত্যন্ত সক্রিয়।
আমাদের সবার জীবনেই কখনো কখনো হতাশা, বিষন্নতা আর অস্থিরতা বিরাজ করে। হতাশা থেকে মুক্তি পেতে কিছু বিষয় মেনে চললে আস্তে আস্তে সব ঠিক হয়ে যাবে আশা করা যায়। একটি কথা বলে রাখি, আমাদের মানবজীবনে আমরা মুক্তি প্রত্যাশা করি কিন্তু প্রকৃত অর্থে এসব থেকে পুরোপুরি মুক্তি আদৌও সহজ বিষয় নয়। যাহোক, হতাশা আর বিষন্নতা থেকে মুক্তি পেতে পাঁচটি বিষয় মনে রাখুন।
হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায়, স্ট্যাটাস, উক্তি
১. নিজেকে ব্যস্ত রাখুন:
হতাশা মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে। আর সেজন্য এই হতাশা থেকে বাঁচতে হলে নিজেকে ব্যস্ত রাখুন। বলা হয়ে থাকে, অলস মস্তিষ্ক শয়তানের কারখানা। কথাটা একদম উড়িয়ে দেওয়ার মতো কথা নয়। আপনি যখন অলসতা অবলম্বন করবেন তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আপনাকে দুশ্চিন্তা গ্রাস করবে আর আপনি তখন হতাশায় ভুগবেন। নিজেকে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে আপনি আপনার হতাশা ও বিষন্নতা থেকে রক্ষা পেতে পারেন। নিজেকে ব্যস্ত রাখতে সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ডে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে মানুষের যথাসাধ্য উপকার করতে পারেন।
২. অযথা চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হবেন না :
“নো টেনশন, ডু ফূর্তি ” এই ব্যাপারটা আয়ত্তে আনতে চেষ্টা করুন। আমাদের মাঝে অনেকেই এমন যে তারা অযথাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ও উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। হতাশাকে এড়িয়ে নিজেকে ভালো রাখার চেষ্টাটা নিজেকেই করতে হবে। প্রিয় মানুষটা হঠাৎ করে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে বা আপনাকে ছেড়ে দিয়েছে? যে আপনাকে ভালোবাসে সে আপনাকে ছাড়বে না কখনোই। আর কেউ ছেড়ে দিলে সে আপনাকে আদতে ভালোবাসেনি। অতএব মা-বাবা, পরিবার, আত্মীয় স্বজন ও আপনাকে যারা ভালোবাসে তাদেরকে নিয়ে সুস্থভাবে বাঁচুন। জীবন একটাই আর এই জীবনকে আনন্দময় করতে হতাশাকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে হলে অযথা চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন হবেন না।
৩. নতুন জায়গায় ভ্রমণ করুন ও বই পড়ে সময় কাটান:
সম্ভব হলে নতুন নতুন জায়গায় ভ্রমণ করুন। ভ্রমণ মানুষের জীবনকে নতুন করে বাঁচতে শেখায় এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য ভ্রমণের কথা সবাই বলেন। আপনি এখন যে পরিবেশে আছেন সেই পরিবেশ পরিবর্তন করুন। আশা করা যায় জায়গা পরিবর্তন করার সাথে সাথে মনের পরিবেশও ইতিবাচক সাড়া দিবে। মানুষের সর্বোত্তম বন্ধু ভালো মানের বই। তাই বইকে সঙ্গী হিসেবে বেছে নিন। বই পড়ে হতাশা থেকে মুক্তি পেতে পারেন।শুরুতে মনোযোগ আর মনোনিবেশ করাটা কঠিন হলেও আস্তে আস্তে অভ্যস্ত হয়ে গেলে তখন সব ঠিক হয়ে যাবে।
৪. সৃষ্টিকর্তার উপাসনা করুন ও মানুষের সাথে মিশুনঃ
আপনি মুসলিম হলে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার চেষ্টা করুন। এতে করে আপনি শারীরিক ও মানসিকভাবে অনেক বেশি প্রশান্তি পাবেন। অন্য ধর্মের যারা আছেন তারা নিজ নিজ ধর্ম পালন করুন। মানুষের সাথে হাসিমুখে কথা বলুন। একজন আরেকজনের সাথে হাসিমুখে কথা বলাটাও কিন্তু অনেক সওয়াবের কাজ। এটা হতাশা থেকেও মুক্তি পেতে সাহায্য করবে আপনাকে।
৫. নিজের লক্ষ্য ঠিক করুন ও লক্ষ্য অর্জনে নিরবচ্ছিন্ন কাজ করে যান:
বলা হয়ে থাকে লক্ষ্যহীন জীবন পাল বিহীন নৌকার মতো। তাই জীবনে হতাশা থেকে মুক্তি পেতে হলে নিজের লক্ষ্য ঠিক করুন এবং সেই লক্ষ্য অর্জনে নিরবচ্ছিন্নভাবে কাজ করে যান। তবে একটি বিষয় মনে রাখবেন জীবনে প্রত্যাশা বেশি করবেন না। প্রত্যাশা কম করবেন কিন্তু কাজ করে যাবেন বেশি। তাহলে আশা করা যায় হতাশা আর বিষন্নতা আপনাকে গ্রাস করতে পারবে না।
সর্বোপরি নিজেকে ভালো রাখতে হলে কখন কি করণীয় সেটার জ্ঞান স্রষ্টা আপনাকেও দিয়েছে। হতাশা ও বিষন্নতা কাটিয়ে উঠুন আর নিজের জীবনকে আনন্দময় করার পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকে রক্ষা করুন।
তো আজকের জন্য এতটুকুই (হতাশা থেকে মুক্তির ইসলামিক উপায়)। পোস্টটি কেমন লাগলো দয়া করে কমেন্টে জানাবেন, যদি ভাল লেগে থাকে তাহলে অবশ্যয় শেয়ার করবেন, পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ। এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।