নিষিদ্ধ সময়ে নামাজ পড়লে কি হয় | নিষিদ্ধ সময় কখন ?

আজ আমরা জানবো নিষিদ্ধ সময়ে নামাজ পড়লে কি হয় ? নিষিদ্ধ সময় কোনটি? নামাযের গুরুত্ব কি? ইমানের পর ইসলামের দ্বিতীয় স্তম্ভ হলো নামায। নামায হলো বান্দা আর আল্লাহর মাঝে সেতুবন্ধন করে। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায়ের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা সম্ভব। ইসলামে বলা হয়েছে, মুমিন আর কাফেরদের মধ্যে সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো সালাত। আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয় নামাজ অশ্লীল ও মন্দকাজ থেকে বিরত রাখে।’ (সূরা আনকাবুত, আয়াত-৪৫)

আর ‘যারা কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে এবং নামাজ প্রতিষ্ঠা করে আমি এরূপ সৎকর্মশীলদের কর্মফল নষ্ট করি না’ (সূরা আরাফ, আয়াত-১৭০)। তাই কাজ বন্ধ রেখে হলেও ফরয সালাত আদায় করতে হবে। ইচ্ছাকৃত সালাত কাযা করা যাবে না।

তাছাড়া ফরয নামায ছাড়াও ইসলামে নফল নামাযেরও বিধান রয়েছে। নফল নামায আদায় করলে আল্লাহ বান্দার প্রতি তুষ্ট হন।

কোন সময়ে নামায পড়া নিষেধ ?

কোন সময়ে নামায পড়া নিষেধ

আমরা জানি, দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া ফরয। নামায আমাদের অশ্লীল ও খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখে। শরীর ও মন পাক- পবিত্র রাখতে সাহায্য করে। মহানবী রাসুল (সাঃ) বলেছেন- যদি ফরয নামাযে কোনো ঘাটতি থাকে, নফল নামায তা পূরণ করে দেয়। নফল নামাযের কোনো নির্দিষ্ট রাকায়াত সংখ্যা নেই। ফরয নামায আদায়ের পর এমনকি দিনের কিংবা রাতের যে কোনো সময় নফল নামায আদায় করা যাবে। তবে তিনটি নির্দিষ্ট সময়ে সালাত আদায় নিষেধ।

এই সময়ে সিজদাহ করা এমনকি জানাযার সালাত আদায়েও নিরুৎসাহিত করা হয়।

১. সূর্যোদয়ের পর থেকে এশরাকের আগ পর্যন্ত

ফযরের ওয়াক্ত থাকে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত। আর তারপর সূর্যোদয়ের পর থেকে সূর্যের হলুদ আভা দূর হওয়া পর্যন্ত নামায পড়া এবং সিজদাহ দেয়া নিষেধ। এই সময় নফল নামায পড়া থেকেও বিরত থাকতে হবে।

নফল নামায পড়ার উত্তম সময় হলো মাঝরাত থেকে ফযরের ওয়াক্ত শুরু হওয়া পর্যন্ত।

২. দুপুরে সূর্য যখন মাথার ওপরে থাকে

মূলত সূর্য যখন একপাশে কিছুটা হেলে পড়ে তখন জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। ঘড়িতে সময় ধরলে দুপুর ১২.৪৫ থেকে ১ টার দিকে জোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়।

কিন্তু দুপুর ১২ টার দিকে সূর্য যখন মাথার উপর থাকে সেইসময় নামায পড়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩. সূর্য ডোবার সময়

সৃর্য যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করা থেকে ডোবার আগ পর্যন্ত তথা গোধূলি থেকে শুরু করে সন্ধ্যা হওয়া পর্যন্ত নামায পড়া নিষেধ।

সূর্য যখন হলুদ বর্ণ ধারণ করে ডুবতে শুরু করে তারপর সূর্যোদয় পর্যন্ত সব ধরনের নামাজ পড়া নিষেধ।
বুখারি এবং মুসলিম হাদীস শরীফে আছে- এই তিন নিষিদ্ধ সময়ে মৃতদেহ দাফন করতেও নিষেধ করা হয়েছে।

তবে যদি একেবারে মৃতদেহ রাখা সম্ভব না হয়, তবে দাফন করা যাবে।

তবে আসরের নামায পড়তে দেরি হয়ে গেলে সূর্য ডুবতে শুরু করলে আসর কাযা পড়তে হবে।

নিষিদ্ধ সময়ে নামাজ পড়লে কি হয়

পৃথিবীর নিজস্ব একটা ম্যাগনেটিক ফিল্ড রয়েছে। এটাকে Geo magnetic field বলা হয়। অন্যদিকে মানুষের দেহেও ম্যাগনেটিক ফিল্ড রয়েছে। এটাকে bio magnetic field বলা হয়। আর এই নিষিদ্ধ সময়ে নামায পড়লে বা মাটিতে সেজদাহ দিলে earthing তথা শরীর এবং মনের মধ্যে সংযোগ ঘটে। আর মষ্তিস্কে নেগেটিভ এনার্জির উৎপত্তি ঘটে।

তখন মানসিক অস্বস্তি থেকে শুরু করে ডিপ্রেশন, ফ্রাসটেশন চলতে থাকে মনে।

অথচ সঠিক সময়ে নামায পড়লে শরীরে এবং মনে ইতিবাচক শক্তির সঞ্চার হয়।

এছাড়া ক্ষুধার্ত এবং প্রসাব- পায়খানার বেগ চেপে রেখে নামায আদায় করা মাকরুহ (মুসলিম, হাদিস:৮৬৯)।

একদম মনোযোগ দিয়ে নামায পড়তে হবে।

শুধু সিজদাহ করলেই আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা হয় না। শরীর এবং মনের সংযোগ করেই সালাত আদায় করতে হয়।

এতে আল্লাহ খুশি হন। এছাড়া নাপাক পোশাক- পরিচ্ছদ পরে নামায হবে না।

নামাজ পড়ার গুরুত্ব

নামায পড়ার গুরুত্ব অপরিসীম। নামাযই হচ্ছে একমাত্র মাধ্যম যার মাধ্যমে বান্দা আল্লাহ নৈকট্য লাভ করতে পারে।

কোনো অবস্থাতেই ফরয নামায বাদ দেয়া যাবে না।

আপনি হজ্ব করতে হলে আর্থিক সামর্থ্য থাকতে হবে। যাকাত দিতে হলেও তাই।

কিন্তু নামাযের ক্ষেত্রে আর্থিক সামর্থ্য থাকার দরকার নেই। ধনী- গরীব সকলের জন্য সালাত ফরয।

আসুন আমরা সকলে সালাত আদায় করি। কোনো অবস্থাতেই সালাত বাদ দেয়া যাবে না।

প্রতিদিন সিজদা দিয়ে বান্দা এটিই প্রমাণ করে যে, সে একমাত্র আল্লাহর কাছেই আত্মসমর্পণ করেছে এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো আনুগত্য করে না। একমাত্র নামাজের মাধ্যমেই মহান রবের কাছাকাছি আসা যায়। একমাত্র নামাজের মাধ্যমেই বান্দা তার প্রভুর সঙ্গে সরাসরি কথা বলার সুযোগ পায়। ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য হচ্ছে কোনো দালাল ছাড়াই সরাসরি আল্লাহর সঙ্গে বান্দা নামাজের মাধ্যমে সাক্ষাত্ করতে পারে এবং নিজের জন্য সাহায্য কামনা করতে পারে।

এ প্রসঙ্গে সূরা বাকারার ১৫৩ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনগণ, তোমরা ধৈর্য্য ও সালাতের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করো।’

নামাজের মধ্যে অন্যতম একটি সৌন্দর্য হচ্ছে, নামাজের সময় সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই একই কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করে।

সবাই আল্লাহর কর্তৃত্বের কাছে প্রকাশ্যে মাথা নত করে। এটিই নামাজের আসল সৌন্দর্যের প্রতিফলন।

তো পাঠকগণ আজ আমরা জানলাম নিষিদ্ধ সময়ে নামাজ পড়লে কি হয় ? নিষিদ্ধ সময় কোনটি? নামাযের গুরুত্ব কি? এমন সব দারুন দারুন পোস্ট পেতে Grathor এর সাথেই থাকুন এবং গ্রাথোর ফেসবুক পেইজ ও ফেসবুক গ্রুপ এ যুক্ত থাকুন, আল্লাহ হাফেজ।

Related Posts

13 Comments

মন্তব্য করুন