সেই সকাল থেকে পরী ,পুরোনো বইয়ের আলমারী খুলে বসেছে। লোক ডাউনে বাচ্চা গুলো খুব বেশি অস্থির হয়ে আছে। সবচেয়ে বেশি তাদের রুটিন ব্যাঘাত ঘটেছে। অনেকক্ষন যাবত আমার বযাবহারিক খাতায় লাগানো নকশী কাথা দেখে সে কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞাসা করল,
মা এটা কি এত সুন্দর পুতুলের কাথা???
হেসে বললাম না রে মা , এটা নকশী কাথা ।
নকশী কাঁথা কী?
বললাম আমরা যে গায়ে কাথা দেই , সেই কাথায় সুন্দর ডিজাইন করে আগে নানু দাদু রা বাসায় এই কাথা বানাত।
এত সুন্দর করে ডিজাইন করতে পারি? নকশী কাঁথার গল্প বলনা , কিভাবে বানাত কি করে?
কোথা থেকে আসল এমন কাথা???
মেয়ের কথায় নষ্টালজিক হয়ে মনে মনে পল্লী কবির সেই কবিতা মনে পরে গেল
“নকশী-কাঁথা বিছাইয়া সাজু সারারাত আঁকে ছবি,
ও যেন তাদের গোপন ব্যথার বাড়িয়া এক কবি |
অনেক সুখের দুঃখের স্মৃতি ওরি বুকে আছে লেখা,
তার জীবনের ইতিহাস খানি কহিছে রেখায় রেখা |
এই কাঁথা যবে আরম্ভ করে তখন সে একদিন,
কৃষাণীর ঘরে আদরিনী মেয়ে সারা গায়ে সুখ-চিন |
স্বামী বসে তার বাঁশি বাজাচ্ছে, সেলাই করেছে সেজে”
সুরে সুরে আবৃতি করে শোনালাম।মেয়ের বায়নায় বলা শুরু করলাম
আমদের দেশে আর ভারতের পশ্চিম বঙ্গের শত শত বছর পুরনো এক ঐতিহ্য হল নকশী কাথা, নাদী মাতৃক এই দেশে , বর্ষার সময় খাল বিল পথ ঘাট সব ডুবে যেত, তখন বাড়ির বউ , ঝি (মেয়েরা) মিলে বিকেলে বাড়ির উঠোনে গল্প করত , কেউ পাঁচালী বলত আর এই সুখ দুখের আলাপে কেউ কেউ পুরোন শাড়ি যেটা পরা যাবে না, সেই শাড়ি গুলো ফেলে না দিয়ে এক সাথে করে কাথা বানিয়ে তার মাঝে নানা নকশা করত।
যখন যেমন গল্প হত গল্পের সাথে মিলে যেত সেই নকশা, কত রকম সে কাথার ধরণ চলমান সেলাই,লহরী কাঁথা,আনারসি,বাঁকা সেলাই,সুজনি কাঁথা, তাতীদের থেকে নানা রং এর সুতো কিনে এনে , সবাই মিলে নকশা আকত, তাদের মনের মাধূর্য দিয়ে,কারো কোন ক্লান্তি ছিল না, কোন কোন কাথা শেলাই করতে বছর লেগে যেত তবু সখ করে নাত জামাই , মেয়ে শ্বশুর বাড়িতে উপহার দেয়ার জন্য বাড়ির নানা বয়সের নারীরা লেগে যেত এই কাথা সেলাইয়ে ,কত সুন্দর তাদের সেই নকশা,পদ্ম নকশা,সূর্য নকশা,চন্দ্র নকশা,চাকা নকশা,স্বস্তিকা নকশা,জীবনবৃক্ষ নকশা,কালকা নকশা। সত্যি আমাদের দেশ সোনার বাংলাদেশ। আমদের ঐতিহ্য আমাদের সাংস্কৃতি আমাদের দেশিয় পণ্য আমদের গর্ব।
একটা শীত নিবারণের বস্ত্রই ছিল এই নকশী কাথা ,লেপ কাথা আর গুজানী কাথা । কালের বির্বতনে তা হাড়িয়ে গিয়ে বিদেশী কম্বল আর ঢুবী,