বন্ধুরা! সবাই কেমন আছেন? আশা করি ভাল আছেন। আমার ঠিক এই মুহূর্তে একটি মজার গল্প মনে পড়ছে, ভাবছি সেটাই গ্রাথোরের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবো। জানিনা কার কেমন লাগবে। গল্পটা আমি শুনেছি মেডিকেল ভর্তি কোচিংয়ের একজন টিচারের কাছ থেকে। গল্পের প্রাথমিক প্লট আমাদের সবার পরিচিত। তারপরও একটু বলে রাখি, নয়তো মজা পাবেন না।
গল্পের পিছনের গল্পঃ
এক এলাকায় এক দরিদ্র কাঠুরিয়া বাস করত। সে দরিদ্র হলেও তার সততা ছিল সর্বজনবিদিত। তো, সে একদিন নদীর তীর সংলগ্ন বনে গেল কাঠ সংগ্রহের জন্য। গাছে উঠে যখন সে একটা ডাল কাটছিল, ওমনি তার হাত ফসকে কুঠারটা একদম নদীর মধ্যে পড়ে গেল। গাছ থেকে নেমে সে নদীতে অনেক খোঁজাখুঁজি করলো, কিন্তু কুঠারটা কোথাও খুঁজে পেলো না। যেহেতু কুঠারটাই ছিল তার জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্বল তাই সে প্রচণ্ড মন খারাপ করে নদীর তীরে বসে থাকল।
এমন সময় সেখানে আবির্ভূত হলো নদীর মৎস্যকুমারী। কাঠুরিয়ার মন খারাপ দেখে সে কাঠুরিয়ার কাছে তার মন খারাপের কারণ জানতে চাইলো। তখন কাঠুরিয়া তাকে বিস্তারিত ঘটনা খুলে বললো। ঘটনা শুনে মৎস্যকুমারী নদীতে ডুব দিলো হারানো কুঠার খোঁজার জন্য এবং কিছুক্ষণ পর একটা স্বর্ণের কুঠার তুলে এনে কাঠুরিয়াকে জিজ্ঞেস করলে এটাই কি তোমার কুঠার? কাঠুরিয়া না সূচক মাথা নাড়ালো। তারপর মৎস্যকুমারী আবার নদীতে ডুব দিয়ে একটা রূপার কুঠার তুলে আনলো এবং জিজ্ঞেস করলো এটাই কি তোমার সেই হারানো কুঠার? এবারো কাঠুরিয়া অস্বীকৃতি জানালো। অবশেষে তৃতীয়বারের মতো ডুব দিয়ে আসল কুঠারটা তুলে এনে কাঠুরিয়াকে জিজ্ঞেস করতেই কাঠুরিয়া বলে উঠলো, “হ্যাঁ, এটাই তো আমার কুঠার!” অতঃপর মৎস্যকুমারী কাঠুরিয়ার সততায় মুগ্ধ হয়ে তাকে স্বর্ণ ও রূপার কুঠারগুলোও উপহার হিসেবে তাকে দিয়ে দিলো ।
মুল গল্পঃ
স্বর্ণ ও রূপার কুঠারগুলো উপহার পাওয়ার পর অনেকদিন পেরিয়ে গেছে। কাঠুরিয়া কুঠারগুলা বিক্রি করে বেশ অর্থ-কড়ির মালিক বনে গেছে। ইতোমধ্যে কাঠুরিয়া বিয়ে-শাদিও করে ফেলছে। তো একদিন সে তার বউকে সাথে নিয়ে ঐ নদীর পাড় ধরে কোথাও যাচ্ছিল। একপর্যায়ে, হঠাৎ করে পা পিছলে তার বউ নদীতে পড়ে গেল। কিন্তু কাঠুরিয়ার মধ্যে তার বউকে উদ্ধার করার কোন তোরজোড় দেখা গেল না। বরং সে একটা নির্লিপ্ত ভাব নিয়ে নদীর তীরে বসে রইলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তার সামনে সেই মৎস্যকুমারীর আগমন ঘটলো। এসেই তাকে জিজ্ঞেস করলো
ঃ আরে তুমি সেই কাঠুরিয়া না’?
ঃ জ্বি’
ঃ কী ব্যাপার, এমন মনমরা হয়ে বসে আছো যে? কী হয়েছে?
ঃ না, তেমন কিছু না’
ঃ তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে। কী হয়েছে আমাকে বলো।
ঃ আরে না। বাদ দেন তো।
কিন্তু মৎস্যকুমারীর পীড়াপীড়িতে শেষমেশ কাঠুরিয়া ঘটনা বললো ,
ঃ আসলে মৎস্যকুমারী হয়েছে কি, আমার বউ তো নদীতে পড়ে গেছে।
ঃ কী! তুমি আগে বলবা না? বলেই মৎস্যকুমারী নদীতে ডুব দিলো।
কিছুক্ষণ পর……
মৎস্যকুমারী জিতের ঝিংকু নাকুর গানের নায়িকা শুভশ্রীকে নিয়ে হাজির হলো। শুভশ্রী কোমরে একগাদা টিফিনবক্স বেঁধে ঝিংকু নাকুর গানের তালে তালে কাঠুরিয়ার দিকে কেমন কেমন করে তাকিয়ে কোমর দুলাতে থাকলো। মৎস্যকুমারী কাঠুরিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো,
ঃ এটাই কি তোমার বউ?
প্রশ্ন শুনে কাঠুরিয়া সম্ভিত ফিরে পেয়ে জবাব দিল ঃ না, এটা না।
ঃ ঠিক আছে, সমস্যা নেই। আমি দেখছি বিষয়টা, বলেই আবার নদীতে ডুব দিল। কিছুক্ষণ পর ক্যাটরিনা কাইফকে সাথে করে উঠে এলো।
ঃ এটাই কি তোমার বউ?”
ঃ ‘না, এটাও না।
ঃ আচ্ছা, দেখতেছি। বলে আবার ডুব দিল এবং কিছুক্ষণ পর তার আসল বউকে নিয়ে আসলো এবং কাঠুরিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,
ঃ এটাই কি তোমার বউ?
কাঠুরিয়া নির্বিকার ভঙ্গিতে উত্তর দিল
ঃ না, এটাও না
কিন্তু মৎস্যকুমারী জানতো যে এটাই তার বউ। তাই সে রাগত স্বরে বললো,
ঃ ঠিক করে বলো।
কিন্তু কাঠুরিয়া আগের মতোই নির্বিকার ভঙ্গিতে উত্তর দিলো,
ঃ না, এটা আমার বউ না।
কোনভাবেই যখন কাঠুরিয়া তার বউকে নিজের বউ বলে স্বীকার করছিল না, তখন মৎস্যকুমারী প্রচণ্ড রেগে গেল এবং বলল,
ঃ দেখো আমি তোমার সততার জন্য তোমাকে এত টাকা পয়সার মালিক বানিয়েছিলাম। কিন্তু তুমি আজকে অসৎ মিথাবাদী হয়ে গেছো। আমি চাইলে তোমাকে আগের মতো হতদরিদ্র বানিয়ে দিতে পারি। এখন তুমি সত্যিটা বলবে কি না?
অবস্থা বেগতিক দেখে কাঠুরিয়া বললো,
ঃ সত্যি বলতে এটাই আমার বউ। কিন্তু মৎস্যকুমারী, আমি চিন্তা করতেছি, আমি যদি একে আমার বউ বলে স্বীকার করে নেই তাহলে আপনি যদি আগের সেই কুঠারের ঘটনার মতো এবারো আমার সততায় মুগ্ধ হয়ে আসল বউয়ের সাথে আগে যেই দুইজন দেখিয়েছিলেন, তাদেরকেও উপহারস্বরুপ আমার বউ হিসেবে গছিয়ে দেন! আমার তো একটাকে নিয়েই জীবন একেবারে ভাজাভাজা। তিনটা হলে আমার অবস্থা কী হবে একবার ভেবে দেখেছেন?
গল্পটা কেমন লাগলো? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না যেন!
ধন্যবাদ সবাইকে।
আল্লাহ্ হাফিজ।