আসসালামু আলাইকুম,,
আশা করি সবাই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন।
সেই কামনাই করি।
আজকে আমি এই পোস্টে সরকার কর্তৃক প্রকাশিত ২০২১ সালের ষষ্ঠ শ্রেণির সপ্তম সপ্তাহের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা অ্যাসাইনমেন্ট এর প্রশ্ন ও ও আপনাদের সুবিধার্থে একটি নমুনা উত্তর এই পোস্টে লিখে দিব।
নমুনা উত্তরটি হুবুহু না লিখে ধারণা নিয়ে নিজেদের মতো করে আপনার অ্যাসাইনমেন্ট টি লেখার অনুরোধ রইল।
অ্যাসাইনমেন্ট প্রশ্ন-
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যে সকল ইবাদত করা যায় তার একটি তালিকা তৈরি করো।
উত্তর-
ইবাদাত আরবি শব্দ। এর অর্থ দাসত্ব বা আনুগত্য। আল্লাহর দাসত্ব আনুগত্যই হল ইবাদত। ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহর সকল আদেশ নিষেধ মেনে চলার নামই ইবাদত।
মহান আল্লাহ আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনি আমাদের লালন পালন করেন। তিনি আমাদের রব। আমরা তার বান্দা। মহান আল্লাহ তা’আলা আমাদের সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে তৈরি করেছে। আল্লাহর দেওয়া অফুরন্ত নিয়ামত ভোগ করার পর তার শুকরিয়া আদায় করতে হবে। নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করে আল্লাহর দেওয়া বিধান মত চলার নামই ইবাদত। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন –
‘এবং তুমি তোমার ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং সকাল সন্ধ্যায় তোমার প্রতিপালকের সপ্রশংস পবিত্রতা ও মহিমা গোসল করো’।
ইবাদত কে তিন ভাগে ভাগ করা যায়-
১/ ইবাদতে বাদানি বা শারীরিক ইবাদত
২/ইবাদত মালি বা আর্থিক ইবাদত
৩/ইবাদতে মালি ও বাদানি বা শরীর ও অর্থ উভয়ের সংমিশ্রণে এবাদত।
শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাহায্যে ইবাদত করা হয় তাকে বলা হয় ইবাদতে বাদানি বা শারীরিক ইবাদত। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা, রমজান মাসে রোজা রাখা। ইবাদতের মধ্যে শারিরীক ইবাদত সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অর্থের দ্বারা যে ইবাদত করা হয় সেগুলো কে বলা হয় ইবাদতের মালি বা আর্থিক ইবাদত। যেমন- যাকাত দেওয়া, সাদাকা দান, খয়রাত করা ইত্যাদি।
উল্লিখিত দুই প্রকার ইবাদত ছাড়াও এমন কিছু ইবাদত রয়েছে যা শুধু শরীর দ্বারা কিংবা অর্থ দ্বারা করা যায় না বরং শরীর এবং অর্থ উভয়ের এর প্রয়োজন হয়। যেমন- হজ করা, জিহাদ করা ইত্যাদি
অজু, গোসল ইত্যাদির মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা যায়। ইবাদতের জন্য পবিত্র থাকা একান্ত প্রয়োজন। অপবিত্রার সাথে নামাজ আদায় করলে নামাজ আদায় হয় না। এ প্রসঙ্গে মহানবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন-‘ অপবিত্র নামাজ কবুল হয় না এবং এবং আত্মসাৎ করা মাল দান হয় না’
পবিত্রতা় থাকলে শরীর সুস্থ থাকে, মন প্রফুল্ল থাকে। লেখাপড়া ও কাজে মন বসে। আল্লাহ তাআলা পবিত্রতা অর্জনকারীকে ভালোবাসেন।
ওজু আরবী শব্দ। এর অর্থ সুন্দর, পরিষ্কার ও স্বচ্ছ। ওজুর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব বর্ণনা করে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে-
‘ যারা ঈমান এনেছে জেনে রেখো যখন তোমরা নামাজের জন্য দাঁড়াবে তার আগে নিজেদের মুখমণ্ডল ধুয়ে নিবে, তোমাদের দুই হাত কনুই পর্যন্ত ধুয়ে নেবে, মাথা মাসাহ করবে এবং উভয় পা গিরাসহ ধুয়ে নিবে।’ সূরা আল মায়েদা আয়াত ৬।
তাওরাত আরবী শব্দ। এর অর্থ ইচ্ছে করা। ইসলামী পরিভাষায় পবিত্র মাটি বা ঐ জাতীয় পবিত্র বস্তু যেমন- পাথর, চুনা পাথর, বালি ইত্যাদি দ্বারা পবিত্র হবার নিয়তে মুখমণ্ডলসহ উভয় হাত কনুইসহ মাসেহ করাকে তায়াম্মুম বলে। ওযু ও গোসলের পরিবর্তে করা যায়। বস্তুত পবিত্রতা অর্জনের প্রকৃত মাধ্যম হলো পানি। আল্লাহ তা’আলা তাঁর বান্দাদের জন্য প্রচুর পরিমাণে পানি সরবরাহ করে রেখেছে। তথাপি এমন অবস্থা হতে পারে যে পানি পাওয়া যাচ্ছে না অথবা পাওয়া গেলেও পানি ব্যবহারের প্রাণ নাশের আশঙ্কা রয়েছে। এসব অবস্থায় আল্লাহতালা মাটি দিয়ে পবিত্রতা অর্জনের অনুমতি দিয়েছেন।
গোসল আরবি শব্দের। এর অর্থ ধৌত করা। ইসলামী পরিভাষায় আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে পবিত্র পানি দ্বারা সমস্ত শরীর ধোয়া কে গোসল বলে।
গোসল এর ফরয তিনটি।
যথা :
১/গড়গড়া করে কুলি করা।
২/ নাকের নরম জায়গা পর্যন্ত পানি পৌঁছানো।
৩/ সমস্ত শরীর পানি দিয়ে ধোয়া।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে এবং রাতে ঘুমাতে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত যে সকল ইবাদত করা যায় তার একটি তালিকা প্রস্তুত করা হলো –
১/নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা।
২/ প্রত্যেক দিয়ে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা।
৩/খেতে বসে বিসমিল্লাহ বলে খাওয়া শুরু করা। তাহলে যতক্ষণ পর্যন্ত খাওয়া চলবে ততক্ষণ পর্যন্ত সওয়াব পেতে থাকবে। এটি হচ্ছে এক ধরনের ইবাদত।
৪/ পড়ার সময় বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা। যতক্ষণ পর্যন্ত পড়ালেখা করব ততক্ষণ পর্যন্ত ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে।
৫/ স্কুলে যাওয়ার সময় বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা। তাহলে পথে-ঘাটে বিপদ-আপদ থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করবে।
৬/রাস্তায় চলার সময় যদি দেখি একজন অন্ধ লোক রাস্তা পার হওয়ার চেষ্টা করছে তখন তাকে রাস্তা পার করে দিল আল্লাহ তাআলার নিকট ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে।
৭/ঘুমানোর সময় ঘুমের দোয়া পড়ে ঘুমানো, তাহলে যতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকবো ততক্ষন মহান আল্লাহর নিকট ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে।
এভাবে সবসময় দিনরাত আমরা আল্লাহর ইবাদত অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারি। ইবাদত করলে আল্লাহ খুশি হয়। ইবাদতকারীদের জীবন সুখময় হয়, পরকালেও শান্তি লাভ করা যায়।যারা আল্লাহর ইবাদত করে না, আল্লাহর নির্দেশ মতো চলে না আল্লাহ তায়ালা তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হন। তারা দুনিয়াতে শান্তি পায় না, পরকালেও তাদেরকে জাহান্নামের কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হয়।
এই ছিল ষষ্ঠ শ্রেণীর সপ্তম সপ্তাহের ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়ে এসাইনমেন্ট এর একটি নমুনা উত্তর।
আশা করি আপনাদের উপকারে আসবে ভুলত্রুটি থাকলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ধন্যবাদ।