শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের আসলেই কোন সূত্র আছে কি? হ্যাঁ আছে। বিভিন্ন শেয়ার বিশ্লেষক ও বিশেষজ্ঞগণ বিভিন্নভাবে বিনিয়োগের সূত্র দিয়ে থাকেন। কিন্তু কোন সূত্রই লাভের ১০০% নিশ্চয়তা দিতে পারে না। রসিকতা করে বিনিয়োগের সূত্রকে অনেকে তিন চমক বলে থাকেন। এই তিন হলো Buy, Hold and Sell. অর্থাৎ ক্রয় করা, ধরে রাখা এবং বিক্রয় করা। কখন কোন শেয়ার কি দরে ক্রয় করবেন, কতদিন ধরে রাখবেন এবং কখন কি দরে বিক্রি করে লাভবান হবেন মূলত এটাই বিনিয়োগের সংক্ষিপ্ত সূত্র। সঠিক কোম্পানির শেয়ার সঠিক মূল্যে ক্রয়, সঠিক সময় পর্য়ন্ত ধরে রাখা এবং সঠিক মূ্ল্যে সঠিক সময়ে বিক্রি করা কঠিন কাজ। নির্বাচিত কোম্পানির দৈনিক শেয়ারের মূল্য ও পরিমাণের রেখাচিত্র (গ্রাফ) তৈরী করে সর্বোচ্চ দাম এবং সর্বনিম্ন দাম অনুমান করা সম্ভব। দাম বাড়তে থাকার প্রাথমিক পর্য়ায়ের ক্রয় এবং সর্বোচ্চ চুড়ায় ওঠার আগে বিক্রয় করলে লাভবান হওয়া যায়। যে সকল কোম্পানির মৌলিক তথ্য ভালো সে সকল কোম্পানির শেয়ার নিম্ন (বটম) মূল্যে বা বটমের কাছাকাছি মূল্যে সাহস করে ক্রয় করে কয়েকদিন বা মাস বা বছর রাখলে বেশি লাভ করা যায়। শেয়ার বাজারের সূচক যখন ক্রমাগত পড়তে থাকে তখন অনেক বিনিয়োগকারী মূল্য আরো কমে যাবে এই ভয়ে নিজের হাতে থাকা শেয়ার বিক্রি করতে শুরু করে। এতে করে বিক্রেতার সংখ্যা বেড়ে যায় এবং দর আরো কমে যায়। এই ধরণের বিক্রিকে সেল আউট অব ফিয়ার (Sell out of Fear) অর্থাৎ ভয়ে বিক্রির দৌড়ে সামিল হওয়া বলে। কোনো বিনিয়োগকারী ভালো মৌলিক ভিত্তি আছে এই ধরণের কোম্পানির শেয়ার এই ধরণের পরিস্থিতিতে সাহস করে ক্রয় করলে পরে অধিক মূল্যে বিক্রি করে লাভবান হতে পারেন। স্রোতের উল্টো দিকে সাতার কাটার সাহস যারা সঞ্চয় করতে পারেন তারাই বেশি লাভের আনন্দ উপভোগ করতে পারেন। মনে রাখতে হবে শেয়ার বাজারে দাম বৃদ্ধি বা হ্রাস এর ক্ষেত্রে অনেকটা প্রভাবক হিসেবে কাজ করে ‘Supply & Demand’ অর্থাৎ ‘যোগান ও চাহিদা’। যদি কোন কারণে কোন শেয়ারের বিক্রেতা বেশি হয় অর্থাৎ শেয়ারের যোগান বেশি থাকে এক কথায় যদি কোন শেয়ারের ছড়াছড়ি থাকে সেক্ষেত্রে সেই শেয়ারের মূল্য কমতে শুরু করে। পক্ষান্তরে যদি কোন শেয়ারের যোগান কম থাকে, অর্থাৎ চাইলেও শেয়ার পাওয়া যাচ্ছে না এমন অবস্থার মতন হয়, তাহলে সেই শেয়ারের দাম আকাশচুম্বি হয়ে যায়। প্রত্যেক সফল বিনিয়োগকারীর মধ্যে দুইটি গুণ অবশ্যই থাকা প্রয়োজন, তা হলো ধৈর্য় (Patience) থাকতে হবে এবং লোভ (Greed) করা যাবে না। শেয়ার ব্যবসায় সবচেয়ে বড় শত্রু হলো লোভ এবং ধৈর্য়হীন হওয়া। আর একটি দিক অবশ্যই বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, ‘গুজবে কান দেওয়া যাবে না।’ জাতী হিসাবে আমাদের একটা বদনাম আছে, ‘হুজুগে মাতাল বাঙ্গালী।’ আমাদের দেশের শেয়ার বাজারে অনেক বিনিয়োগকারী আছেন যারা হুজুগে মেতে শেয়ার কেনেন এবং পরবর্তীতে লস খেয়ে স্বর্বশান্ত হন। আবার অনেক বিনিয়োগকারী গুজবে কান দিয়ে শেয়ার দ্রুত বিক্রি করে দেন অথবা সাধারণ কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনে পরবর্তীতে লসের মুখে পড়েন। মনে রাখতে হবে শেয়ারের মূল্য একাধারে বাড়বেও না এবং কমবেও না। উঠানামা শেয়ারবাজারের নিয়ম। সফল বিনিয়োগাকারীদের এটা জানা ও মানা প্রয়োজন। এইগুলোই শেয়ার বাজারে বিনিয়োগের সংক্ষিপ্ত ফান্ডামেন্টাল সূত্র।
তবে শুধু এটুকু জ্ঞান নিয়ে তো আর এত জটিল ব্যবসা করা সম্ভব নয়। তাই এই ব্যবসা করতে হলে যে সকল বিষয়ে জ্ঞান রাখলে আপনি একজন ভালো শেয়ার ব্যবসায়ী, বা পুঁজিবাজারের সফল বিনিয়োগকারী হয়ে উঠতে পারবেন, সে সম্পর্কিত ধারাবাহিক প্রশ্নোত্তরের দ্বিতীয় অংশঃ
প্রশ্ন ০৬: মিউচুয়াল ফান্ড কি?
উত্তরঃ বিশেষভাবে স্বীকৃতিপ্রপ্ত কোনো প্রতিষ্ঠান কয়েকটি কোম্পানির শেয়ারকে একত্র করে একক ইউনিট (অর্থভান্ডার) করে সিকিউরিটিজ এক্সচেঞ্জের মিউচুয়াল ফান্ড রুলস্-2001 মোতাবেক যে ফান্ড তৈরী করে তাকে মিউচুয়াল ফান্ড বলা হয়। মিউচুয়াল ফান্ড ছাড়ার জন্য এসইসি’র পূর্ব অনুমতির প্রয়োজন হয়। প্রতিটি মিউচুয়াল ফান্ডের জন্য একজন উদ্যোক্তা, একজন ট্রাস্টি এবং ফান্ড ম্যানেজার প্রয়োজন হয়। মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগকারীর ঝুঁকি কম। নতুন বিনিয়োগকারীর জন্য এটি বেশ নিরাপদ। আইসিবি’র ১১টি, বিএসআরএস-এর ১টি, এইমস-এর ২টি, রেইস-এর ১টি ইত্যাদি সহ আরও বেশ কতকগুলো মিউচুয়াল ফান্ড বাজারে প্রচলিত আছে। আমাদের সবকটি মিউচুয়াল ফান্ড ক্লোজ এন্ড একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। অর্থাৎ ফান্ডের আকার পুরো মেয়াদকালে একই থাকবে। প্রত্যেকটির মেয়াদকাল ১০ বছর। মেয়াদ শেষে ফান্ডের সকল বিনিয়োগ বিক্রি করে প্রাপ্ত অর্থ বিনিয়োগকারীদেরকে ফেরত দেওয়া হবে। আইসিবি ১ম মিউচুয়াল ফান্ড সবচেয়ে বেশি মুনাফা দিয়ে থাকে। একটি কোম্পানির শেয়ারের তুলনায় একটি মিউচুয়াল ফান্ডের ঝুঁকি কম থাকে। মোটামুটি ১৫-২০টি কোম্পানির শেয়ার একত্রে একটি মিউচুয়াল ফান্ডে থাকে বিধায় এতে ঝুঁকি কম। কম টাকা বিনিয়োগকারীদের জন্য মিউচুয়াল ফান্ড ভালো। প্রত্যেক বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিওতে দু’চারটি মিউচুয়াল ফান্ড থাকা ভালো। মিউচুয়াল ফান্ড যারা পরিচালনা করেন তাদের অভিজ্ঞতা যেকোনো বিনিয়োগকারীর থেকে ভালো। অভিজ্ঞ ও বিজ্ঞ ফান্ড ম্যানেজার মিউচুয়াল ফান্ড পরিচালনা করে থাকেন। যে মিউচুয়াল ফান্ডের ম্যানেজার দক্ষ সেই ফান্ডের উপর বেশি ডিভিডেন্ড পাওয়ার সম্ভাবনাও বেশি থাকে। আমাদের পুঁজিবাজারে এখনও অনেকগুলো মিউচুয়াল ফান্ড এসইসি-এর অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। আমাদের পুঁজিবাজারে মিউচুয়াল ফান্ডের সংখ্যা বেশি হলে শেয়ারের বাজার দরের ওঠানামার ব্যাপ্তি কমে যাবে। এতে বিনিয়োগ ঝুঁকি কমবে।
প্রশ্ন ০৭: মিউচুয়াল ফান্ড-এ বিনিয়োগ থেকে কেমন লাভ পাওয়া যায়?
উত্তরঃ মিউচুয়াল ফান্ড এর নিয়ম অনুযায়ী ফান্ডের প্রতি বছর আয়ের ৮০% ডিভিডেন্ড হিসেবে দিয়ে দিতে হয়। কোম্পানির শেয়ারের মতো বাৎসরিক লাভের একটি অংশ রেখে দেওয়ার নিয়ম নেই। এতে করে মিউচুয়াল ফান্ডের কোনো বছর আয় বেশি হলে ডিভিডেন্ডের হারও বেশি হবে। উল্লেখ করা প্রয়োজন, লভ্যাংশ সবসময় ফেইস ভ্যালুর উপর প্রদান করা হয়। লাভের হার ও প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ ঝুঁকির তুলনায় মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ তুলনামূলকভাবে নিরাপদ বলা যায়। মিউচুয়াল ফান্ডের যারা পরিচালনা করেন তারা প্রাতিষ্ঠানিক সংস্থা। সাধারণত তারা দক্ষ ও অভিজ্ঞ হয়। এতে করে লাভালাভের সম্ভাবনাও বেশি থাকে। যেহেতু লাভ প্রতি বছর বিতরণ করা হয়ে থাকে সেহেতু মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার দর নিট অ্যাসেটস্ ভ্যালুর কাছাকাছি থাকা উচিত। এই জন্য এসইসি প্রতি সপ্তাহে এনএভি (NAV) ঘোষণা দেওয়ার জন্য রুল করেছেন। বিনিয়োগকারীদের এনএভি দেখে ক্রয়-বিক্রয় করা উচিত। ইন্ডিয়াতে এনএভি’র থেকেও কম মূল্যে মিউচুয়াল ফান্ড ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকে।
প্রশ্ন ০৮: ট্রেজারি বিলস্ কি এবং শেয়ারের দাম ওঠা-নামার সাথে এর সম্পর্ক কি?
উত্তরঃ বাজারে নানান ধরনের ঋণের প্রচলন আছে। ট্রেজারি বিল এর মধ্যে একটি। এটি স্বল্পমেয়াদি ঋণপত্র। এর বিক্রেতা কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ক্রেতা সাধারণত ব্যাংক সহ আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ঋণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ। ট্রেজারি বিলে সুদের হার সবচেয়ে কম হয়। বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বেড়ে গেলে সেন্ট্রাল ব্যাংক ট্রেজারি বিল বিক্রি করে বাজার থেকে কিছু মুদ্রা তুলে নেন। অর্থাৎ অর্থের যোগান কমিয়ে ফেলেন। বাজার অর্থ সরবরাহ কমে গেলে ট্রেজারি বিল পুনরায় ক্রয় করে বাজারে মুদ্রা সরবরাহ বাড়িয়ে দেন। সাধারণ নিয়ম অনুসারে মুদ্রা সরবরাহ বেশি হলে শেয়ারের দাম বাড়তে পারে এবং মুদ্রা সরবরাহ কমলে শেয়ারের দাম কমতে পারে। আমাদের কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহের পরিসংখ্যান নির্দিষ্ট সময় অন্তর প্রকাশ করে থাকেন। বিনিয়োগ বিশ্লেষণের জন্য এটি একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। ট্রেজারি বিল মুদ্রা বাজারের একটি পণ্য।
প্রশ্ন ০৯: স্টক এক্সচেঞ্জ (Stock Exchange) কি?
উত্তরঃ শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, ডিবেঞ্চার, সরকারি বন্ড, প্রাইভেট বন্ড ইত্যাদি কেনাবেচার মাধ্যম-ই হলো স্টক এক্সচেঞ্জ। স্টক এক্সচেঞ্জ একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। স্টক এক্সচেঞ্জ সরাসরি কোনো শেয়ার জনগনের নিকট ক্রয় বা বিক্রয় করে না। স্টক এক্সচেঞ্জ এর প্রধান কাজ হলো শেয়ার বিক্রয়ে ইচ্ছুক প্রতিষ্ঠানের তালিকাভুক্তি, তালিকায় থাকাকালীন সময়ে তালিকাভুক্তির সময় দেওয়া শর্তসমূহ পালিত হয়েছে কি না তা দেখাশুনা করা। স্টক এক্সচেঞ্জ এর সদস্যগণ পুঁজিবাজারের সংশ্লিষ্ট আইন-কানুন, নিয়ম-নীতি ইত্যাদি পরিপালন হয়েছে কিনা তার দেখাশুনা করা, ক্রয় ও বিক্রয়কৃত শেয়ারের লেনদেন সম্পাদনের ব্যবস্থা করা, বিনিয়োগকারীদেরকে পুঁজিবাজার বিষয়ে প্রশিক্ষণ পরিচালনা করা, বিনিয়োগকারী ও স্টক এক্সচেঞ্জ এর সদস্যদের মধ্যে কোনো বিরোধ দেখা দিলে তা নিষ্পত্তি করা, অনলাইনে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়, ক্রয়-বিক্রয়কৃত শেয়ারের সেটেলমেন্ট ও মূল্য পরিশোধের জন্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা নিশ্চিক করার জন্য বড় ধরনের আইটি স্থাপনা ও সফটওয়্যার ব্যবস্থা করা। স্টক এক্সচেঞ্জ সফটওয়্যারের মাধ্যমে যেকোনো শেয়ারের মূল্য নির্ধারণের একটি চমৎকার ব্যবস্থা। হাজার হাজার বিনিয়োগকারী নিজেদের মধ্যে দর কষাকষির মাধ্যমে যেকোনো শেয়ারের ক্রয়-বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন করে থাকেন। স্টক এক্সচেঞ্জ আমাদের দেশের কোম্পানি আইন-1994 এর অধীনে নিবন্ধিত একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ এর সদস্য সংখ্যা (মালিক) ২৩৮টিরও অধিক ব্রোকার প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এর সদস্য সংখ্যা ১৩৯টিরও বেশি। স্টক এক্সচেঞ্জ এর সদস্যগণ স্টক এক্সচেঞ্জ এর শেয়ার ক্রয় বিনিয়োগের উপর কোনো ডিভিডেন্ড পায় না। সদস্যগণ কেবলমাত্র ব্রোকারেজ লাইসেন্স পাওয়ার জন্য অধিকারপ্রাপ্ত। বিগত কয়েক বৎসর ধরে বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন দেশে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোকে লাভজনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করা শুরু হয়েছে। পুঁজিবাজারের আইনের ভাষায় একে ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন (Demutualization) বলে। ঐ সকল দেশে এ ধরনের স্টক এক্সচেঞ্জগুলো সরাসরি ব্রোকারেজ লাইসেন্স বিক্রয় করে। লাইসেন্স পাওয়ার জন্য স্টক এক্সচেঞ্জ এর সদস্য হওয়ার প্রয়োজন পড়ে না। ইউরোপের বড় বড় স্টক এক্সচেঞ্জগুলো এশিয়ার কিছু কিছু ডিমিউচ্যুয়ালাইজড স্টক এক্সচেঞ্জ এর আংশিক মালিকানা ইতিমধ্যে কিনে নিয়েছে। নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জ, লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ এর আংশিক মালিকানা ক্রয় করেছে। আমাদের দেশে স্টক এক্সচেঞ্জগুলোর আয়ের প্রধান উৎস লিস্টিং ফি, ক্রয়-বিক্রয়ের উপর কমিশন, কন্ট্রাক্ট চার্জ, লিস্টেড কোম্পানির উপর বাৎসরিক ফি এবং নিজেদের উদ্বৃত্ত অর্থের বিনিয়োগের উপরে সুদ ইত্যাদি। খরচের বড় খাত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন, যন্ত্রপাতি ক্রয় ও রক্ষণাবেক্ষণ, ট্রেডিং সফটওয়্যার ক্রয়, নবায়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ, বিদ্যুৎ ও টেলিফোন বিল, প্রকাশনা ইত্যাদি। স্টক এক্সচেঞ্জ সরকারের পক্ষ হয়ে ব্রোকারের কাছে থেকে অগ্রিম আয়কারও আদায় করেন। সরকার প্রতি বছর জাতীয় বাজেটে এই অগ্রিম আয়করের হার নির্ধারণ করে দেন। বর্তমানে এই হার প্রতি 100 টাকা ক্রয় বা বিক্রয়ের উপর 0.05 টাকা।
প্রশ্ন ১০: সিডিবিএল (CDBL) কি এবং এর কাজ কি?
উত্তরঃ সিডিবিএল এর পূর্ণ রূপঃ সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি অব বাংলাদেশ লিমিটেড। 20শে আগস্ট 2000-এ কোম্পানি আইন 1994 এর অধীনে নিবন্ধনকৃত একটি ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। এর কর্মকান্ড শুরু হয় 2003 সালের শেষের দিকে। শেয়ার লেনদেন শুরু হয় জানুয়ারী 2004 থেকে। কোনো একক ব্যক্তি সিডিবিএল এর মালিক নন। স্টক এক্সচেঞ্জ, কয়েকটি ব্যাংক, আইসিবি, কয়েকটি বড় কোম্পানি এর মালিক। পেশাদার একজন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)- এর দৈনন্দিন কর্য়ক্রম পরিচালনা করেন। সিডিবিএল এর মূল কাজ হলো ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে শেয়ার, মিউচুয়াল ফান্ড, ডিবেঞ্চার ইত্যাদি মালিকানার হিসাব সংরক্ষণ করা। ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে মালিকানা পরিবর্তনের তাৎক্ষণিক সমন্বয়সাধন সিডিবিএল-এর একটি দৈনন্দিন প্রধান কাজ। আগে কোম্পানির শেয়ার বিভাগ যে কাজ করতেন, সিডিবিএল সেই কাজটাই এখন ইলেক্ট্রনিক পদ্ধতিতে করে থাকেন। সিডিবিএল-এর কার্য়ালয় ঢাকায় অবস্থিত। সিডিবিএল শেয়ার ডিমেটের উপর, আইপিও’র উপর এবং দৈনন্দিন ক্রয়-বিক্রয়ের উপর সরকার কর্তৃক নির্ধারিত হারে কমিশন নেন। বিও এ্যাকাউন্ট খোলার জন্য সরকার নির্ধারিত হারে ফি এবং প্রতি বিও এ্যাকাউন্টের ওপর বাৎসরিক মেইন্টেনেন্স ফি নিয়ে থাকেন। সিডিবিএল বাংলাদেশের শেয়ারবাজারের অবকাঠামোর একটি বড় ধরনের মাইলফলক। সিডিবিএল কোনো বিনিয়োগকারীকে শেয়ারের মালিকানা, দলিল জালিয়াতি, হস্তান্তর জালিয়াতিসহ নানা ধরনের ঝক্কি ঝামেলা থেকে মুক্তি দিয়েছে। প্রতিদিনের ট্রেড শেষে ব্রোকার, স্টক এক্সচেঞ্জ ও সিডিবিএল-এর মাধ্যমে অনেকটা স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে শেয়রের মালিকানা হস্তান্তর সম্পন্ন হয়। শেয়ার সার্টিফিকেট চুরি হওয়া, আগুনে পুড়ে যাওয়া, হারিয়ে যাওয়া বা লুটপাট হওয়ার সকল সম্ভাবনা থেকে মুক্ত। বর্তমানে যে হারে সিডিবিএল বিভিন্ন চার্জ নিয়ে থাকেন, যৌক্তিকভাবে এগুলো আরো কমানো যায়।
প্রশ্ন ১১: বিও এ্যাকাউন্ট বলতে কি বোঝায়?
উত্তরঃ ব্যাংকে টাকা জমা রাখার জন্য যে রকম এ্যাকাউন্ট খোলা প্রয়োজন, ঠিক তেমনিভাবে শেয়ারবাজারে ব্যবসা করার জন্য দুইটি এ্যাকাউন্ট খুলতে হয়। এর একটির নাম বিও এ্যাকাউন্ট। আর একটির নাম ট্রেডিং এ্যাকউন্ট। ডিজিটাল শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য বিও এ্যাকাউন্ট প্রয়োজন হয়। এই এ্যাকাউন্টটি কেবলমাত্র সিডিবিএল থেকে লাইসেন্স প্রাপ্ত ডিপি’র মাধ্যমে খোলা যায়। অনেক ব্রোকার হাউজ এবং কিছু কিছু ব্যাংকের ডিপি লাইসেন্স আছে। বিও এ্যাকাউন্ট মানে বেনিফিশিয়ারী ওনার্স হিসাব। সিডিবিএল তাদের অফিস থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে এই হিসাবের নম্বর দিয়ে থাকেন। এই হিসাবের ডিজিটের সংখ্যা 16টি । প্রথম 6টি ডিপি’র নম্বর, পরের 10টি সংখ্যা বিও নম্বর। এক কথায় ক্রয়-বিক্রয়কৃত শেয়ারের পরিমাণের হিসাব রাখার জন্য এই এ্যাকাউন্ড খোলা হয়। বিও এ্যাকাউন্ট হচ্চে হিসাবের শেয়ারের বিস্তারিত খতিয়ান। ব্যাংক এ্র্যাকাউন্ট আপনি যেকোনো ব্যাংকে খুলতে পারেন, কিন্তু বিও এ্যাকাউন্ট শুধুমাত্র সিডিবিএল-এর লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে খুলতে হবে। একজন ব্যক্তি শুধু একটি বিও এ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। দুইজন ব্যক্তি আলাদা আলাদাভাবে দুইটি বিও এ্যাকাউন্ট এবং উভয়ে মিলে আরো একটি যৌথ বিও এ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। কেউ একবার কারো সঙ্গে যৌথ এ্যাকউন্ট খুললে আর কারো সঙ্গে যৌথ এ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না।
প্রশ্ন ১২: ডিপি বলতে কি বোঝায়?
উত্তরঃ ‘ডিপোজিটরি পার্টিসিপ্যান্টস’-কে সংক্ষেপে ডিপি বলে। ডিপি সিডিবিএল এর একটি পরিভাষা। ডিপি দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমনঃ ফুল ডিপি এবং ট্রেডিং ডিপি। ফুল ডিপি কেই সংক্ষেপে ডিপি বলে। ফুল ডিপি সরাসরি বিও এ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। নিজের অফিসে বসে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের সেটেলমেন্ট সম্পন্ন করতে পারে। অর্থাৎ নিজ অফিসের টার্মিনাল থেকে সরাসরি ঢাকায় অবস্থিত সিডিবিএল-এর টার্মিনালের সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে বিও এ্যাকাউন্ট খোলা, আইপিও, বোনাস, রাইট শেয়ার গ্রহণসহ প্রয়োজনীয় কাজ সম্পাদন করতে পারে। কিন্তু যারা শুধু ট্রেডিং ডিপি, তাদের অন্য কোনো ডিপি’র মাধ্যমে বিও এ্যাকাউন্ট খুলতে হয় এবং সিডিবিএলভুক্ত শেয়ারের সেটেলমেন্ট সম্পন্ন করতে হয়। ট্রেডিং ডিপি’তে বিও এ্যাকউন্ট সরাসরি খোলা যায় না। বড় অঙ্কের জামানত দিয়ে সিডিবিএল থেকে ডিপি লাইসেন্স নিতে হয়। যেসকল ব্রোকার ফুল ডিপি তারা দ্রুতগতিতে বিনিয়োগকারীকে সেবা দিতে পারে।
প্রশ্ন ১৩: ডিমেট (Demat) কি?
উত্তরঃ কাগজের শেয়ারকে ডিজিটাল শেয়ারে রূপান্তর করাকে ডিমেট বলে। যে সকল কোম্পানি সিডিবিএলভুক্ত হয়েছে সেসব কোম্পানি শেয়ার ডিমেট না করে ক্রয় বা বিক্রয় করতে পারবে না। ডিমেট করার জন্য শেয়ার সার্টিফিকেটকে ফরম-117 পূরণ করে কোম্পানিতে জমা দিতে হবে। জমা দেওয়ার পর বিনিয়োগকারীর নামে নিবন্ধিত হলে ঐ শেয়ার ডিমেট করার উপযুক্ত হবে।
প্রশ্ন ১৪: বিও এ্যাকাউন্ট খুলতে কি কি কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়?
উত্তরঃ বিও এ্যাকাউন্ট খুলতে যে সকল কাগজপত্রের প্রয়োজন তা নিম্নে বর্ণনা করা হলোঃ
১) সিডিবিএল-এর নির্ধারিত হিসাব খোলার আবেদনপত্র পূরণ করে আবেদন করতে হবে।
২) আবেদনকারীর দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি। ছবির পিছনে আবেদনকারীর নাম ও স্বাক্ষর থাকতে হবে। (স্বাক্ষরটি ব্যাংক এ্যাকউন্টে ও বিও এ্যাকাউন্টের আবেদনপত্রে প্রদানকৃত একই স্বাক্ষর হতে হবে।)
৩) নমিনির দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ রঙিন ছবি, ছবির পিছনে নমিনির নাম ও স্বাক্ষর এবং আবেদনকারী কর্তৃক সত্যায়িত হতে হবে।
৪) আবেদনকারী কর্তৃক সত্যায়িত পাসপোর্টের প্রথম চার পৃষ্ঠার ফটোকপি অথবা, জাতীয় পরিচয় পত্রের ফটোকপি অথবা, জাতীয়তার সনদপত্রের ফটোকপি অথবা, ড্রাইভিং লাইসেন্স এর ফটোকপি।
৫) ব্যাংক সার্টিফিকেট অথবা, ব্যাংক পাস বুক অথবা, অরিজিনাল ডিপোজিট স্লিপ।
৬) বিও এ্যাকাউন্ট খোলার জন্য নির্ধারিত ফরমে আবেদন জমা দিতে হবে। আবেদনপত্রে একজন শনাক্তকারীর নাম, ঠিকানা ও স্বাক্ষর বাধ্যতামূলক।
প্রত্যেক ফটোকপির উপর আবেদনকারীর স্বাক্ষর থাকতে হবে।
প্রশ্ন ১৫: লিংক বিও এ্যাকাউন্ট বলতে কি বোঝায়? যে এ্যাকাউন্টের সাথে লিংক বিও এ্যাকাউন্ট করা হয় ঐ এ্যাকউন্ট কি সক্রিয় থাকবে?
উত্তরঃ আইন অনুযায়ী এক ব্যক্তি একটি বিও এ্যাকাউন্ট খুলতে পারে। এক ডিপিতে বিও এ্যাকাউন্ট খুলে অন্য ডিপি (ব্রোকার হাউজ)’এর মাধ্যমে বেচা-কেনার প্রয়োজন দেখা দিলে লিংক বিও এ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। কর্মস্থল পরিবর্তন বা কোনো ব্রোকারের সেবার মান ভালো না হলে লিংক বিও খুলে অন্য ব্রোকারের মাধ্যমে শেয়ার লেনদেন অব্যাহত রাখা যায়। বিও এ্যাকাউন্ট এক ডিপি থেকে অন্য ডিপিতে ট্রান্সফার করা যায় না বিধায় আইন লিংক বিও এ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। লিংক বিও খুলতে হলে অরিজিনাল বিও খোলার কনফার্মেশন প্রিন্ট এবং বিও খোলার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পছন্দ ও সুবিধামতো নতুন ব্রোকার হাউজে জমা দিতে হবে। লিংক বিও খুলে সরাসরি ক্রয়-বিক্রয় করা যায় অথবা, অরিজিনাল বিও থেকে শেয়ার লিংক বিওতে ট্রান্সফার করে ক্রয়-বিক্রয় করা যায়। শেয়ার ট্রান্সফার করতে হলে সিডিবিএল ফি প্রযোজ্য হবে। সিডিবিএল-এর 19-1 ট্রান্সমিশন রিকোয়েস্ট ফরম এ আবেদন করতে হবে। যে সকল বিনিয়োগকারী সিএসই’তে বিও এ্যাকাউন্ট খুলেছেন তাদের সবার ব্রোকার হাউসে লিংক বিও এ্যাকাউন্ট খুলতে হয়েছে। প্রয়োজনে একের অধিক লিংক বিও এ্যাকাউন্ট খোলা যায়। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী যেখানে অরিজিনাল বিও এ্যাকাউন্ট রয়েছে সেখানে এবং লিংক বিও তে মেইনটেন্যান্স ফি জমা দিতে হবে। তাহলে অরিজিনাল বিও এ্যাকাউন্ট ও লিংক বিও এ্যাকাউন্ট উভয়ই সচল থাকবে। একজন ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয়ের সুবিধার্থে একের অধিক লিংক বিও রাখতে পারবে। কিন্তু আইপিওতে আবেদন করার সময় শুধুমাত্র অরিজিনাল বিও অথবা যে কোনো একটি লিংক বিও-তে আবেদন করতে পারবে। লিংক বিও’র কিছু কুফল বাজার বিশেষজ্ঞদের নজরে পড়েছে। একই বিনিয়োগকারী 5/10টি ব্রোকার হাউসে লিংক বিও করে শেয়ারবাজারে কারো সাহায্য ছাড়া মেনিপ্যুলেশন করতে পারেন। একই বিনিয়োগকারীর একাধিক লিংক বিও থাকলে তার পরিসংখ্যান অথবা ঐ সকল হিসাবের লেনদেনের উপর কর্তৃপক্ষের নজরদারি রাখা প্রয়োজন।
প্রশ্ন ১৬: সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (এসইসি) কি এবং এর কাজ কি কি?
উত্তরঃ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড একচেঞ্জ কমিশনকে সংক্ষেপে এসইসি বলে। এটি অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। চেয়ারম্যান ও ৪ জন সদস্য নিয়ে কমিশন গঠিত। ৮ জুন ১৯৯৩ সনে এসইসি আইন ১৯৯৩ অধীনে এটি প্রথম গঠিত হয়। কমিশনের ২৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি উপদেষ্টা কমিটি আছে। কমিশনের প্রধান অর্থাৎ চেয়ারম্যান এবং সদস্যগণ সরকার কর্তৃক নিয়োগ করা হয়। এসইসি প্রধানকে চেয়ারম্যান বলা হয়। কমিশনের বাকিদের সদস্য বলা হয়। পুঁজিবাজারের যাবতীয় আইন-কানুন প্রণয়ন, প্রয়োগ ও তদারকির দায়িত্ব এসইসি’র। এসইসি’র অধিনে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে স্টক এক্সচেঞ্জ, সিডিবিএল এবং ব্রোকার ফার্মস, মার্চেন্ট ব্যাংক, অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি অন্যতম। এক অর্থে লিস্টেড পিএলসি গুলো এসইসি’র নিয়ন্ত্রণাধীন। সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিনেন্স ১৯৬৯ এর ধারা ৮ অনুসারে কমিশনের কমিশনের কার্য়াবলী নিম্নরূপঃ
১) এই আইনের বিধান এবং বিধির বিধানাবলী সাপেক্ষে, সিকিউরিটি যথার্থ ইস্যু নিশ্চিতকরণ, সিকিউরিটিতে, বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ এবং পুঁজি ও সিকিউরিটি বাজারের উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রন করাই হবে কমিশনের দায়িত্ব ও কার্য়াবলি।
২) বিশেষ করে এবং উপরিউক্ত বিধানাবলীর সামগ্রীকতা ক্ষুণ্ন না করে, অনুরূপ ব্যবস্থার মধ্যে নিম্নরূপ যেকোনো বিষয় থাকতে পারে। যথাঃ
ক) স্টক এক্সচেঞ্জ বা কোন সিকিউরিটি বাজারের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ।
খ) স্টক ব্রোকার, সাব ব্রোকার, শেয়ার হস্তান্তরকারী প্রতিনিধি, ইস্যুর ব্যাংকার, মার্চেন্ট ব্যাংকার, ইস্যুর নিবন্ধক, ইস্যুর ম্যানেজার, অবলেখক, পোর্টফোলিও ম্যানেজার, বিনিয়োগ উপদেষ্টা, ট্রাস্ট দলিলের ট্রাস্টি, সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি, হেফাজতকারী, ক্রেডিট রেটিং কোম্পানি এবং সিকিউরিটি মার্কেটের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারে এইরূপ অন্যান্য মাধ্যবর্তী প্রতিষ্ঠানের কার্য় নিরূপন ও নিয়ন্ত্রণ।
গ) মিউচুয়াল ফান্ডসহ যেকোনো ধরনের যৌথ বিনিয়োগ পদ্ধতির নিবন্ধন, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা।
ঘ) কর্তৃত্বপ্রাপ্ত আত্ম-নিয়ামক সংগঠনসমূহের উন্নয়ন, পরিবীক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ।
ঙ) সিকিউরিটি ও সিকিউরিটি বাজার সম্পর্কিত প্রতারণামূলক এবং অসাধু ব্যবসা বন্ধকরণ।
চ) বিনিয়োগ সংক্রান্ত শিক্ষার উন্নয়ন এবং সিকিউরিটি বাজারের সকল মাধ্যমের প্রশিক্ষণ।
ছ) সিকিউরিটির ক্ষেত্রে সুবিধাভোগী ব্যবসা নিষিদ্ধকরণ।
জ) কোম্পানি শেয়ার বা স্টক ও কর্তৃত্ব গ্রহণ এবং কোম্পানির অধিগ্রহণ ও নিয়ন্ত্রন।
ঝ) সিকিউরিটি ইস্যুকারী, স্টক এক্সচেঞ্জ এবং উহাদের মাধ্যমে এবং সিকিউরিটি বাজারের আত্ম-নিয়ামক সংগঠনের নিকট হতে তথ্য তলব, উহাদের পরিদের্শন, তদন্ত ও অডিট।
ঞ) সিকিউরিটি ইস্যুকারী আর্থিক কর্মকান্ড সম্পর্কিত কর্মসূচি সংকলন, বিশ্লেষণ ও প্রকাশন।
ট) এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে ফিস বা অন্যান্য খরচ ধার্য়।
ঠ) উপরি-উক্ত উদ্দেশ্যের বাস্তবায়নের প্রয়োজনে গবেষণা পরিচালনা এবং তথ্য ও উপাত্ত প্রকাশ করা।
ড) এই আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে [বিধি] দ্বারা নির্ধারিত অন্যান্য কার্য়াবলি সম্পাদন ও কর্তব্য পালন।
সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেষ আশ্রয়স্থল হলো এসইসি। এসইসি কিভাবে সংশ্লিষ্ট সকলকে পরিচালনা করে কিভাবে বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করবে তার একটি ধারণা দেওয়ার জন্য সংক্ষিপ্তভাবে এসইসি’র দায়দায়িত্ব তুলে ধরা হলো।
যাদেরকে নিয়ে কমিশনের পরামর্শক কমিটি তাদের মধ্যে আছেন কমিশনের চেয়ারম্যান, সদস্য (প্রশাসন ও অর্থ), সদস্য (আইন), সদস্য (সিএফ), অতিরিক্ত সচিব (অর্থমন্ত্রণালয়), বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্ণর, সভাপতি আইসিএবি, বিএপিএলসি, এসোসিয়েশন অব ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন, এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, ডিসিসিআই, ডিএইই, সিএসই। চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল চেম্বার-এর সভাপতিগণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের একজন অধ্যাপক, বিআইডিএস-এর একজন প্রতিনিধি, আইসিবি-এর একজন প্রতিনিধি, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আইসিবি ও সিডিবিএল। নিকট অতীতে পরামর্শক কমিটির সভার কোনো খবর বিনিয়োগকারীরা পত্র-পত্রিকায় দেখতে পায়নি। বাজার বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন পরামর্শক কমিটিকে সচল রাখলে পুঁজিবাজারের অবকাঠামো সময় উপযোগী রাখা সহজ হবে।
প্রশ্ন ১৭: সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন কিভাবে গঠিত হয়?
উত্তরঃ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন আইনের 1993-এর ধারা 5-এ কমিশনের গঠন কিভাবে গঠিত হবে তা উল্লেখ আছে। ধারা 5: কমিশনের গঠনঃ
১) কমিশন একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য সমন্বয়ে গঠিত হবে।
২) চেয়ারম্যান ও সদসগণ সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হবেন। তবে শর্ত থাকে যে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন একজন বেসরকারী ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে নিয়োগ করতে হবে।
৩) চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ কমিশনের সার্বক্ষণিক চেয়ারম্যান ও সদস্য হবেন।
৪) কোম্পানি ও সিকিউরিটি মার্কেট সংক্রান্ত বিষয়ে পারদর্শিতা অথবা আইন, অর্থনীতি, হিসাবরক্ষণ ও সরকারের বিবেচনায় কমিশনের জন্য প্রয়োজনীয় অন্য কোনো বিষয়ে বিশেষ জ্ঞান থাকা চেয়ারম্যান ও সদস্য নিয়োগের প্রয়োজনীয় যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে।
৫) চেয়ারম্যান কমিশনের প্রধান নির্বাহী হবেন।
৬) চেয়ারম্যান ও সদস্যগণ তাদের নিয়োগের তারিখ হতে তিন বৎসর মেয়াদের জন্য স্ব স্ব পদে বহাল থাকবেন এবং অনুরূপ একটি মাত্র মেয়াদের জন্য পুনঃনিয়োগের যোগ্য হবেন, তবে শর্ত থাকে যে, কোনো ব্যক্তির বয়স পয়ষট্টি বৎসর পূর্ণ হলে তিনি চেয়ারম্যান বা সদস্য পদে নিযুক্ত হবার যোগ্য হবেন না বা চেয়ারম্যান বা সদস্য পদে বহাল থাকবেন না।
৭) চেয়ারম্যান ও যেকোন সদস্য তাঁদের চাকুরির মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বে যেকোনো সময় সরকারের উদ্দেশ্যে অনুর্ধ তিন মাসের অগ্রিম নোটিশ প্রদান করে স্ব স্ব পদ ত্যাগ করতে পারবেন। তবে শর্ত থাকে যে, সরকার কর্তৃক পদত্যাগ গৃহীত না হওয়া পর্য়ন্ত চেয়ারম্যান বা ক্ষেত্রমতো সদস্য স্ব স্ব কার্য় চালিয়ে যাবেন।
বাজার বিশেষজ্ঞদের ধারণা উপরিউক্ত যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়ে কমিশন গঠিত হলে আমাদের দেশের পুঁজিবাজার অবকাঠামো সময়োপযোগী হতে বাধ্য। পুঁজিবাজারের ব্যাপকতা সঠিকভাবে অনুধাবন করে যোগ্য লোকদের নিয়োগ দিতে পারলে পুঁজিবাজার নিরাপদ হবে। কাজটি মোটেও সহজ নয়। তবুও যোগ্য লোক খুঁজে নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। এ ব্যাপারে অসতর্ক হলে যে পরিমাণ ক্ষতি হবে তা অনুমান করা প্রায় অসম্ভব।
শেয়ার বাজার বিষয়ক কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা ও তার উত্তর (প্রথম অংশ)