শ্রমের মর্যাদা দিতে শিখুন
কেউ হয়তো জীবনের প্রয়োজনে জুতা সেলাই করে কিংবা কেউ কাঁপড় ও কাচে, তাই বলে কি সে মানব হিসেবে তুচ্ছ! আপনি যেটা করেন, সেটা একটা পেশা, সে যা করে সেটাও একটা পেশা। জীবনের প্রয়োজনে আপনি একজায়গায়, তার অসময়ের প্রয়োজনে সে একজায়গায়। তাই বলে আপনি তার থেকে খুব বেশী কিছু হয়ে গেছেন তা কিন্তু না! আপনিও তার জায়গায় থাকতে পারতেন। পৃথিবীতে সবাই সমান হবেনা, সব সমান হলে পৃথিবী তো থমকে যাবে, পৃথিবী চলবেনা, পৃথিবীকে চলতে হলে সব কিছুরই প্রয়োজন আছে,পৃথিবীর ভারসাম্য রক্ষা হতে হলে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত প্রতিটা জিনিসেরই সমান গুরুত্ব। আপনি যেখানে আছেন সেটা যেমন পৃথিবীর প্রয়োজন, ঠিক তেমনি আপনি যাকে নিচু ভাবছেন সেটাও পৃথিবীর প্রয়োজনের মধ্যই পড়ে। কাউকে না কাউকে নিচের তলার কাজ গুলো করতে হবে, না হয় তো চলবেনা।
যে লোকটা জুতা সেলাই করে, তার কাছে সেটা তার প্রয়োজন, তার কাছে সেটা তার জীবিকা,তার সম্মান, তার পৃথিবী। আপনি আমি যাই ঠিক করি না কেন, তার জীবিকা নে বেঁছে নেবেই। তার স্ত্রীর কাছে সে আদর্শ স্বামী, তার সন্তানদের কাছে সে প্রিয় বাবা, কেননা এই পেশাকে কেন্দ্র করেই সে তার ছেলে মেয়ের মুখে দুমোঠো খাবার দিতে পারছেন, তার প্রয়োজন গুলো মিটাতে পারছেন। সমাজের উচু তলায় থেকে নিজেকে অনেক উপরের মনে করে আপনি তাকে যেটাই ভাবেন না কেন, সেটা একান্তই আপনার হীনমান্যতার পরিচয়।
জীবনকে খুব কাছ থেকে দেখতে শিখুন, জীবনের খুব কাছাকাছি যান, দেখবেন সবাই এখানে সমান, সবাই তার প্রয়োজন,পরিস্থিতি, সময়ের অনুপাত হিসেবে ঠিক জায়গাটায় রয়েছে। আমরাই অযথা শ্রেণী বিভেদ করি, আমাদের বিকৃত মানসিকতারই সৃষ্টি এসব।
সব কিছুকে একটু ভিন্ন ভাবে ভাবতে শিখুন, আপনি যেখানটায় দাড়িয়ে কাউকে নিচু ভেবে নাক ছিটকাচ্ছেন, ঠিক একই ভাবে আপনার উপর তলায় যে দাড়িয়ে, সে ও আপনাকে দেখে নাক ছিটকাচ্ছে। আপনি যদি সমান ভাবতে শিখেন, আপনাকেও সমান ভাববে।
যে যাই করুক না কেন, তাকে তার প্রাপ্য সম্মান টা আমরা দিতে পারিনা। সবার অবদান সমান সমাজে। কেউ সুযোগ সুবিধা বেশী পেয়ে একটু ভালো অবস্থানে আবার কেউবা ভাগ্যক্রমে একটু নিচু অবস্থানে। দিনশেষে ঘাম সবারই ঝড়াতে হয়, কারোটা দেখা যায়, কিংবা কারো টা দেখা যায়না, আমরা সবাই শ্রমজীবি, আমরা সবাই মানুষ, অবস্থান অনুযায়ী সবার শ্রমের খাত শুধু ভিন্ন।
সবাইকে সবাই সমান চোখে দেখতে হবে। সমাজের চোখে একদৃষ্টিতে দেখলে হবে না, মানুষের ভেতর আর তার রীতিনীতি কে গুরুত্ব দিতে হবে। সমাজের উপকারে সবার অবদান সমান, কাউকে নিঁচু করে দেখার কোনো উপাদান এখানে নেই।
আজ থেকেই একটু ভিন্ন ভাবে তাকান, সমাজের প্রত্যেকটা শ্রমজীবি মানুষের দিকে, তাদের দেহ থেকে ঝড়ে পড়া ঘামের দিকে তাকান, তার ক্লান্তি ভরা মুখটার দিকে তাকান, দেখবেন সব জায়গায় একই কথা ফুটে উঠছে, সবাই তার জীবিকার জন্যই ছুটছে, তাহলে এত সামাজিক ভেদ কিসের জন্য তৈরি করি আমরা, চোখের পর্দাটা নামাতে হবে, দেখতে হবে পরিষ্কার ভাবে, সবাই সবার জায়গা থেকে সমান।