ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাস
ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাস
আজ ১৪ ফেব্রুয়ারি, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয় । দিনটিকে বিপুল উদ্দীপনার মাধ্যমে পালন করা হয় । আমাদের দেশে ভ্যালেন্টাইন ডে কেই বিশ্ব ভালোবাসা দিবস হিসেবে পালন করা হয় ।
যখন ছোট ছিলাম তখনও শুনতাম বিশ্ব ভালোবাসা দিবস , ভ্যালেন্টাইন ডে । আসোলে এদের উৎপত্তি কোথায় থেকে এর ইতিহাস টা কি কিছুই জানতাম না । ইভেন এতো বড় হয়েও সঠিক কাহিনী বা ঘটনা জানতাম না, আসোলে জানার চেষ্টায় করিনি । কেনো করিনি? কোনো আগ্রহ ছিলোনা যে, একটু জানি তো আসল কাহিনী টা কি ।
তবে আজকে আমার সেই ইচ্ছা টা জাগলো তাই ভাবলাম সবার সাথে আসল কাহিনী টাকে শেয়ার করি । কথায় আছে নিজে জানো তারপর অপরকে জানাও , নিজেই যদি না জানি তাহলে অপরকে কিভাবে জানাবেন তাই না ?
আমি এর আগে শুনেছিলাম বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নিয়ে উল্টো পাল্টা কাহিনী প্রচলিত আছে। তা আমি জানতাম না তাই ঐই কাহিনী টাকেই সত্য মনে করতাম ।
মানুষের মুখে মুখে কাহিনী কিন্তু পরিবর্তন হতে থাকে, দেখা যায় যে ,একজবের কাছে এক রকম আরেকজন সেই বিষয়টা শুনে আবার তার মতো করে বানিয়ে বলে , তখন আর একটা হয়ে যায়।
ভ্যালেন্টাইন ডে আমাদের দেশে যেভাবে পালিত হয় তা বলার মতো নয় । তারপরও কিছু একটু বলি , এক জোড়া হয়ে সাজুগুজু করে ঘোরাঘুরি, খাওয়া – দাওয়া করে ,আর তারপর ঝাড় জংগলে বসে লুচ্চামি করে । এরা আসোলে সংস্কৃতি বুঝেনা , এরা সব কিছুকে দুর্নাম করে । আসোলে এখানে গুটি কয়েক নয় অধিকাংশরাই এমন টা করে , তাই অনেকে ব্যাঙ্গো করে বিশ্ব বেহায়া দিবস ও বলে থাকেন ।
আর বলবেনাই বা কেনো সকলে দিবস টাকে বেহায়া বানিয়ে ফেলেছে ।
এবার তাহলে ইতিহাস টা কি বলি –
ভ্যালেন্টাইন ডে এর ইতিহাস
ঘটনা ২৬৯( খ্রীস্টাব্দ) সালের ইতালির রোম একটি নগরী ছিলো, যা এখোনও আছে । সেখানে সেন্ট ভ্যালেন্টাইন নামে একজন পাদ্রী ছিল । তিনি যে শুধুই পাদ্রী ছিলেন তা নয় । তিনি আবার চিকিৎসক ও ছিলেন ।
এখোন হয়তো অনেকে ভাবতেছেন , পাদ্রী কি ?
যারা খ্রিস্টান ধর্মের পন্ডিত তারাই মূলত পাদ্রী হিসেবে পরিচিত । হয়তো এই শব্দটা আপনারা পরিচিত নয় , তাহলে এর একটা সমার্থক আছে সেটা হলো পোপ । আর এই শব্দটির সাথে আমাদের পরিচয় আছে।
তো তিনি যেহেতু ধর্মের পন্ডিত তাই তিনি ধর্মের প্রচারের কাজ করতেন, আর তখন সেখানে খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার নিষিদ্ধ ছিলো । আর তখনকার সম্রাট ছিলেন
দ্বিতীয় ক্রাডিয়াস ,তিনি পাদ্রী কে এই অপরাধে (ধর্ম প্রচারের অপরাধে) বন্দী করেন । বন্দি করে তাকে কারাগারে রাখা হলো । সেন্ট ভ্যালেন্টাইন যে কারাগারে ছিলেন ,সে কারাগারের রক্ষীর একটি মেয়ে ছিলো , যে মেয়েটি ছিলো অন্ধ । সেই অন্ধ মেয়েটির চিকিৎসা করে করে তাকে ভালো করে তোলেন । এতে সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সুনাম বাড়তে লাগলো , কিন্তু রাজার সেটা সহ্য হলো না , সহ্য না হওয়ার কারনে তাকে মানে ভ্যালেন্টাইন কে মৃত্যু দন্ডের আদেশ দিলেন । যেদিন ভ্যালেন্টাইনকে মৃত্যু দন্ড দেয়া হয় সেদিন ছিলো ১৪ ফেব্রুয়ারি । ভ্যালেন্টাইন কে মৃত্যু দন্ড দেয়া হয়ে গেলো ,এভাবে অনেক দিন অতিবাহিত হলো । এরপরে ৪৯৬ সালে এসে সেন্ট জেলাসিউ এবং ১ম জুলিয়াস সেন্ট ভ্যালেইটাইনের স্মরণে ১৪ই ফেব্রুয়ারিকে ভ্যালেন্টাইন’ দিবস ঘোষণা করলেন । খৃষ্টানদের মধ্যে কোনো পাদ্রী-সাধু সন্তান যদি ধর্মের জন্য এবং মহান কর্মের জন্যে মৃত্যু দন্ডপ্রাপ্ত হয় বা মারা যায় তাদের স্মরণে ও তাদের কর্মের জন্য এ ধরনের অনেক দিবস তার ঘোষণা করেণ আর এরকম অনেক দিবস রয়েছে। উদাহরন হিসেবে বলা যায় – ১৭ মার্চে সেন্ট প্যাট্রিক ডে , ২৩ শে এপ্রিল সেন্ট জজ ডে পালন করা হয় , ১১ নভেম্বর সেন্ট মার্টিন ডে,২৪ আগস্টে সেন্ট বার্থোলোমিজম ডে, ১ নভেম্বর আল সেইন্টম ডে, ৩০ নভেম্বর সেন্ট এন্ড্রু ডে ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অনেক দিবস তারা পালন করে থাকেন ।
যে দেশগুলো ভ্যালেন্টাইন ডে পালন নিষিদ্ধ করেছিল ঃ
পাশ্চাত্যে দেশগুলোতে কোনো দিবস মানে মদ্যপান করা , আর দিবস টা তে অনেক বেশি মদ্যপান করা হতো , এমনকি গির্জার ভিতরে ও তারা মদ পান করতো । আর তাই এই দিবস টিকে ফ্রান্স সরকার ১৭৭৬ সালে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় । আবার ইংল্যান্ডেও প্রশাসনিক ভাবে পিউরিটানরা নিষিদ্ধ করে । এভাবে জার্মানিতে,অস্ট্রিয়া,হাঙ্গেরি দেশগুলোতে এই দিবস কে নিষিদ্ধ করা হয় । আর ২০১৭ সালে পাকিস্তানে এই দিবস কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেন , কারণ এটা একটা ইসলামী বিরোধী কর্ম কান্ড ।
ভ্যালেন্টাইন ডে এর বর্তমান অবস্থা ঃ বর্তমানে ভ্যালেন্টাইন ডে কে যে উৎসাহ উদ্দিপনার মাধ্যমে পালন করা হয় ,সেখানে অন্যন্য উৎসব গুলো এরকম ভাবে পালন করা হয় না । কিন্তু এই দিবসটি এমন জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে উৎযাপন করা হয় তারপরও এই দিনটা অফিসিয়াল কোনো ছুটির দিন নয়।
বাংলাদেশে যেভাবে ভ্যালেন্টাইন ডে পালিত হয় ঃ
বাংলাদেশে ও বর্তমানে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবেই ভ্যালেন্টাইন ডে পালিত হয় । এই দিবস উপলক্ষে টেলিভিশন গুলোতে বিভিন্ন ধরনের অনুষ্ঠান, নাটক , সিনেমা প্রচার করা হয় । আর তরুণ- তরুণীরা তাদের ভালোবাসার মানুষের সাথে ঘোরাঘুরি , খাওয়া- দাওয়া , সহ আরে বিভিন্ন ধরনে কু কার্যকলাপে লিপ্ত হয়ে থাকে । বিশেষ করে আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে এটা ধুমধাম করে পালন করা হয় । আর বর্তমানে স্কুলের ছেলে মেয়েরাও পালন করে ,এমন কি বুড়ো বুড়িও পালন করে । সবার মাঝে এটা সেরকম আকারে ছড়িয়ে গেছে বলার মতো না ।
ইসলাম ধর্মে এই ভ্যালেন্টাইন ডে সম্পর্কে কি বলে ?
ইসলাম ধর্ম কোনো দিবস পালন করাকে কখোনই সমর্থন করে না । আর একটা মেয়ে অন্য পুরুষের সাথে এভাবে ঘোরাঘুরি করবে সেটা কখোনও অনুমোদন দেয় না । আর তাই পাকিস্তানে এটা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয় ।
অর্থনীতি তে ভ্যালেন্টাইন ডে এর অবদান ঃ
সত্যি ভ্যালেন্টাইন ডে যেকোন দেশে তাদের অর্থনীতিতে খুবই ভালো রকমের অবদান রাখে। আর অবদান রাখতে সক্ষম । তো এই দিনে সবচেয়ে বেশি বেচা কেনা হয়” ফুল ” তারপর বিভিন্ন ধরনের কার্ড , চকলেট সহ আরো অনেক উপহার সামগ্রি । কারন এই দিনে সকলে তাদের প্রিয়জনকে বিভিন্ন উপহার দিয়ে থাকে আর সকলে কমন হিসেবে একটা গোলাপ ফুল তো দিবেই । তাহলে নিঃসন্দেহে ভ্যালেন্টাইন ডে অর্থনীতি তে ভালো অবদান রাখে ।
ভ্যালেন্টাইন ডে সম্পর্কে আপনাদের অভিমত কি ? তাও জানার ইচ্ছা পোষন করছি । আপনারা কমেন্ট করে জানাবেন এ বিষয়ে ।
আর গ্রাথর কর্তৃপক্ষ কে বলছি এটা আমার অনেক বড় পোস্ট সেভাবে পেমেন্ট দিবেন ।