হায়েনা ভয়ংকর হিংস্র একটি মাংশাসী প্রাণী। দেখতে অনেকটা বড়সড় কুকুরের মতো হলেও হায়েনা কিন্তু কুকুর গোত্রের প্রাণী নয়। বরং হায়েনা অনেকটা বেড়াল গোত্রের প্রাণীর মতো। বেজি গোত্রের প্রাণীদের সাথেও কিছুটা মিল আছে তাদের। আগে এশিয়া, পশ্চিম ইউরোপ, রাশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে অনেক হায়েনা ছিলো, কিন্তু নির্বিচার বন-জঙ্গল ধ্বংসের ফলে পৃথিবীর অনেক জায়গা থেকেই এই ভয়ংকর হিংস্র মাংশাসী প্রাণীটি হারিয়ে গেছে অনেকাংশে।
বর্তমানে আফ্রিকার অরণ্য ও সাহারায় বেশিরভাগ হায়েনার দেখা মেলে। হায়েনা মূলত চার ধরনের। চিত্রল বা স্পটেড। যাদের সারা গায়ে চিতাবাঘের মতো ফোটা থাকে। ডোরাকাটা বা স্ট্রিপড। এদের গায়ে বাঘের মতো ডোরাকাটা দাগ থাকে। বাদামী বা ব্রাউন। এদের শরীর ধূসর বাদামী বর্ণের। এছাড়া আর্ডউলফ নামে নেকড়ে প্রজাতির আর এক রকম হায়েনা দেখতে পাওয়া যায়।
হায়েনা নিয়ে মানুষের অনেক ভুল ধারণা আছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, অনেক মানুষ মনে করেন যে, হায়েনা কুকুর প্রজাতির। কেননা, কুকুরের সাথে হায়েনার অনেক সাদৃশ্য আছে। কিন্তু সাদৃশ্য থাকলেও হায়েনা আসলে বিড়াল গোত্রীয় প্রাণী। ক্ষিপ্রতায় বেজি প্রজাতির প্রাণীদের সাথে এদের মিল আছে। হায়েনার মস্তিষ্কের ফ্রন্টাল লোব অনেক উন্নত। তাই হায়েনা অনেক বুদ্ধিমান এবং সাহসী।
হায়েনা অনেক হিংস্র এবং নোংরা একটি প্রাণী। শিকারী প্রাণীরা সাধারণত প্রাণী শিকার করার পর হত্যা করে তারপর মাংস খায়। কিন্তু হায়েনা পৃথিবীর মধ্যে নৃশংসতায় সবচেয়ে এগিয়ে। হায়েনা এতই ভয়ংকর নৃশংস যে, শিকার করা জীবন্ত শিকারের দেহ থেকে মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়। এজন্যই নৃশংস মানুষজনকে হায়েনার সাথে তুলনা করা হয়।
হায়েনা দলবদ্ধ হয়ে চলাফেরা করে। এক একটি দলে আশি থেকে দুইশোটি পর্যন্ত হায়েনা থাকে। আর সব দলের নেতৃত্ব দেয় একটি স্ত্রী হায়েনা। স্ত্রী হায়েনা পুরুষ হায়েনার চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হয়ে থাকে। কেননা, আশ্চর্যজনকভাবে তাদের শরীরে পুরুষত্বের অনুষঙ্গ “শিশ্ন” থাকে। এ কারণে তাদের শরীরে অধিক পরিমাণে টেস্টোটেরন হরমোন নিঃসরণ হয়ে থাকে। সেকারণেই তারা পুরুষদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী হয়।
স্ত্রী হায়েনার যৌনাঙ্গ পুরুষ হায়েনার চেয়েও বড়ো। পুরুষ হায়েনার ছয় ইঞ্চি। আর নারী হায়েনার “শিশ্ন” আট ইঞ্চি পর্যন্ত হয়। এই “শিশ্ন” প্রাণীজগতের একটি আশ্চর্য বিস্ময়! আর কোনো প্রাণীর অর্থাৎ স্ত্রী জাতীয় প্রাণীর এধরণের শিশ্ন বিরল। এই শিশ্নের ভেতরেই স্ত্রী যৌনাঙ্গ থাকে। এদের ক্লিটোরিস এবং জরায়ু সংকীর্ণ। যার কারণে সন্তান প্রসব করতে অনেক স্ত্রী হায়েনা মারা যায়।
হায়েনা কী আসলেই হাসে?
শিকার করে উল্লাস প্রকাশ করতে গিয়ে হায়েনা মানুষের মতো হাসে। আসলে এটা হায়েনার উল্লাস প্রকাশের একটা অভিব্যক্তিমাত্র। প্রকৃত অর্থে মানুষ যেভাবে হাসে কিংবা মানুষ যে কারণে হাসে ঠিক সেই অর্থে তারা হাসে না।
আসলে হায়েনার ডাকটাই এমন। শুনতে মানুষের হাসির মতো শোনায়। তবে সেটা ঠিক তাদের হাসি না। তাদের আনন্দ-উল্লাস কিংবা ভয়-ভীতির অনুষঙ্গ মাত্র। কিন্তু একদল হায়েনা যখন একসাথে ডাকে তখন মনে হয় অসংখ্য মানুষ যেনো একসাথে হাসছে।
গভীর রাতে শ্বাপদসংকুল বনে হায়েনার এরকম হাসি অত্যন্ত ভীতিকর। ভয় পেয়েও যখন হায়েনা ডাকে তখনও অবিকল মানুষের হাসির মতো শোনায়। হায়েনার এই মানুষের মতো হাসি সত্যিই প্রকৃতির এক আশ্চর্য খেয়াল। যা মানুষকে চিরদিনই বিভ্রান্ত করে আসছে।
সাইফুল হক : লেখক, সম্পাদক, গবেষক।
হায়েনা, হাসি, হিংস্র, কুকুর, ডাক, শিকার