-এই যে হুনছ! কাইল্ একটু আঙ্গর বাড়িত যাবার চাইতাছি। ইবার অনেক দিন অয়া গেলো বাড়িত যাই না। কয়েকদিন ধইরা আম্মাও বাড়িত যাওনের নাইগ্গা এরটাইন অরটাইন খবর পাডাইতাছে। নিয়া নিয়া যাবা নাকি? তানিয়া জানতে চায় নয়নের কাছে।-খালি বাড়ি যামু, বাড়ি যামু! বাড়িত যাইয়া কি কামডা করবি হুনি? নয়ন খোঁচা মেরে রাগাতে চায় তানিয়াকে।
প্রিয় পাঠক! আপনারা তানিয়া ও নয়নের কথোপকথন শুনে ইতিমধ্যেই আন্দাজ করতে পেরেছে যে, তাদের জীবন আরও দশটি পিছিয়ে পড়া গ্রামের সাধারণ মানুষের মতই। এরা না জানে তেমন লেখাপড়া আর না জানে স্বাভাবিক ভদ্রতা ও টেকসই আচরণ। তবে তারা তাদের মত করেই সবকিছু বুঝার চেষ্টা করে। ফলে তাদের ব্যবহারে রয়েছে কিছুটা আদিমতা ও স্বেচ্ছাচারিতা। চলুন তাদের বাকি আলোচনা শুনতে থাকি..
-ঠিক আছে, আর যাবার চাইতাম না, যাবার চাওয়াডা মহা অন্যায় অয়া গেছে- বলে কৃত্রিম রাগ চোখে মুখে ফুঁটিয়ে তুললো। তানিয়া জানে যে, নয়ন তাকে অযথা রাগানোর জন্যই এরকম খোঁচা মেরে কথা বলেছে। তাই সে রাগের ভান করে হন হন করে ঘরের ভিতর চলে গেলো। যেন তার আবদারটা তাড়াতাড়ি পূরণ হয়ে যায়।
তার যাওয়ার ভাব দেখে নয়ন হাসতে হাসতে বলে- কী আর কমু, আজ কাইলের মাইয়ারা একটু মজাও বুঝে না। একটা কিছু কইলেই রাগে শাপের মত ফুসফুস করা শুরু করে। তর মা খবর পাডাইছে যা, আহন ত আর তেমন কাজ কাম নাই। যায়া বেড়ায়া আগা।
ঘর থেকে তানিয়া কথাগুলো শুনে মনে মনে খুব খুশি হয়। নয়ন যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে বলে। কিন্তু কন্ঠে রাগের কিছুটা রেশ ধরে ঘর থেকে হাঁক ছাড়ে- আমি একলা একলা যাবার পামু না। তুমি নিয়া যাইলে যাবা নাইলে আমার যাওন দরকার নাই। – তানিয়ার ইচ্ছা, যেন নয়ন তাকে সাথে করে নিয়ে যায়।
যাবার কইছে তরে, আমি যাইয়া করমু কী? তুই কি এহনো নতুন বউ নাকি যে, তরে সাথে সাথে নিয়া যাউন নাগবো? বাড়িত আমার কাম আছে। বন্দ (মাঠে) জালা ফালাইছি (ধান বুনা) একটু পরে পরে মাইনসের ছাগল যায়া লাগে। তর বাপের বাড়ি যাইয়া বইয়া থাকলে এই জালা দিয়া আর ক্ষেত নাগাইন নাগদো না (ধান রূপন করা যাবেনা) সব ছাগলের পেডে যাবো (ছাগলে খেয়ে ফেলবে)। নয়ন বুঝাতে চায় যে, সে এখন তার সাথে যেতে রাজি নয়। তানিয়া যেন একাই যায়।
: তুই যাইয়া দুইদিন থাকতে থাক। দুইদিন পর আমি যায়া আনি’র।
তানিয়া বুঝে গেলো যে, নয়নকে যাওয়ার জন্য আর ঠেলা ধাক্কা করে লাভ নেই। তার এখন একাই যেতে হবে। দু’একদিন নয়ন তাকে নিয়ে আসতে যাবে। (চলবে)