ল্যাটিন আমেরিকার দেশ আর্জেন্টিনার এক চরম হতদরিদ্র গ্রামের এক হতদরিদ্র সহজ-সরল এবং বেশ খানিকটা বোকা কৃষক দানিয়েল। তার অল্প কিছুটা জমি। সেই জমিতে সে গম চাষ করেছিলো। কিন্তু প্রচন্ড খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে তার জমির গমের বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। এই যৎসামান্য জমিতে যে গম আবাদ করে সে, তা দিয়েই তার সারাবছর চলতে হয়।
দুই ছেলে দুই মেয়ে, বউ, ছোটোবোন আর মাকে নিয়ে দানিয়েলের অনেক অভাবের সংসার। খরা আর অনাবৃষ্টি না হলে ঐ অল্প জমির গম দিয়েই তার অভাবী সংসার কোনমতে চলে যায়। কিন্তু সেবছর খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে গম যেভাবে নষ্ট হয়েছে তাতে দানিয়েলের সংসার কিভাবে চলবে তা নিয়ে সে খুব দুর্ভাবনায় পড়েছে। দানিয়েলের বাবা-মা ছিলেন খ্রিস্টান। তাই দানিয়েলও ছিলো ঈশ্বরে বিশ্বাসী।
খ্রিস্টান ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী দানিয়েল প্রতি রবিবার চার্চে যেতো। এর মধ্যে একদিন চার্চে গিয়ে প্রার্থনা করতে করতে তার মনে হলো— আচ্ছা, ঈশ্বরের কাছে একটা চিঠি লিখলে কেমন হয়? যেই ভাবা সেই কাজ। চার্চ থেকে বাড়ি এসে দানিয়েল ঈশ্বরের কাছে একটা চিঠি লিখলো— হে ঈশ্বর, আপনি তো দেখেছেন আমার অবস্থা! আপনার দেওয়া খরা আর অনাবৃষ্টির কারণে আমার জমির গম যেভাবে নষ্ট হয়েছে তাতে বছরের আগামী দিনগুলোতে আমাকে পরিবারসহ না খেয়ে থাকতে হবে। এখন আপনিই আমার একমাত্র ভরসা। তাই আমার প্রতি দয়া করে আপনি পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আমার বাসার ঠিকানায় এক হাজার ডলার খামে ভরে পাঠিয়ে দেবেন। আমার বাসার ঠিকানা তো আপনার জানাই আছে। কাজেই দেরি না করে দ্রুত ডলার পাঠাবেন।”
চিঠিটা খামে ভরে খামের ওপর প্রাপকের জায়গায় দানিয়েল লিখলো— “প্রাপক, ঈশ্বর, মহাকাশ।” এরপর খামের মুখ খুব ভালো করে আঠা দিয়ে লাগিয়ে বোকা দানিয়েল চললো পোস্ট অফিসের দিকে। পোস্ট অফিসে গিয়ে সে টিকেট কিনতে গেলে পোস্ট মাস্টার বললেন— “কি হে দানিয়েল, কার কাছে চিঠি পাঠাবে?” বোকা দানিয়েল কিছু বলতে চাচ্ছিলো না।
তাই পোস্টমাস্টারকে এড়াতে গিয়ে সে বললো— “এই এক পরিচিত আত্মীয়র কাছে।” এই বলে সে টিকেট নিয়ে চলে এলো পোস্টবক্সের কাছে। তারপর টিকেট লাগিয়ে চিঠিটা বক্সের ভেতর ঢুকিয়ে দিলো। এরপর সে বাড়ি চলে এলো। ওদিকে পোস্টমাস্টারের খুব কৌতূহল হলো। পোস্টমাস্টারের মনে হলো, দানিয়েল তো কাউকে কোনদিন চিঠি পাঠায়নি। আজকে সে কাকে চিঠি পাঠাচ্ছে? চিঠি পাঠানোর মতো দানিয়েলের এমন কেউ আছে বলে তার জানা নেই।
তাই খুব কৌতূহলী হয়ে তিনি চিঠিটা পোস্ট বক্স থেকে খুলে পড়লেন। পড়ার পর তিনি আর হাসি চেপে রাখতে পারলেন না। পোস্ট অফিসের পিওনসহ অন্যান্য কর্মচারীরা তাকে বললো— স্যার, কী হয়েছে? তিনি তখন সবাইকে চিঠিটা পড়ে শোনালেন। শুনে দানিয়েলের বোকামির কথা ভেবে সবাই খুব হাসাহাসি করলো।
তখন পোস্টমাস্টার দানিয়েলের এলাকার পিওনকে একশো ডলারের একটা নোট দিয়ে বললেন— “এটা খামে ভরে খামের ওপর দানিয়েলের নাম লিখে অন্যান্য ডাকের সাথে তাকে এমনভাবে দিয়ে আসবে, যেনো সে টের না পায় এটা আমি দিয়েছি; সে যেনো মনে করে এটা ঈশ্বরই দিয়েছেন।” পোস্টমাস্টারের কথামতো পিওন খামে একশো ডলার ভরে চিঠিটা দানিয়েলের বাসায় গিয়ে তার হাতে দিয়ে আসলো।
কিন্তু বিকেলবেলায় দানিয়েল আর একটা চিঠি পোস্ট বক্সের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়ে গেলো। আর দানিয়েল চলে যাওয়ার সাথে সাথে পোস্টমাস্টার চিঠি বের করে পড়লেন। সেই চিঠিতে দানিয়েল লিখেছে— হে ঈশ্বর, পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আর ডলার পাঠাবেন না। আপনি সরাসরি আমার বাসার উঠানের পমগ্রানেট গাছটার নিচে খুব ভোরবেলায় আকাশ থেকে একহাজার ডলার দিয়ে দেবেন। কেননা, আপনি আমার চিঠি পড়ে, আমার দুর্দশা দেখে দয়া করে পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আপনি পাঠিয়েছেন একহাজার ডলার, আর পোস্ট অফিসের ওরা খাম খুলে নয়শো ডলার নিয়ে আমাকে দিয়েছে মাত্র একশো ডলার। ওদের মাধ্যমে আর ডলার পাঠাবেন না। ওরা সব চোরের গুষ্ঠি!!!
সাইফুল হক : লেখক, সম্পাদক, গবেষক।
দানিয়েল, চিঠি, চোরের গুষ্টি, হাসির গল্প