মিরাজ ছেলেটি ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ে। এবার সে SSC-21 পরীক্ষা দিল। সে তার রেজাল্টও পেয়েছে। প্রত্যেক বিষয়ে সে A+ পেয়েছে। গত ২ জানুয়ারি ২০২২ সালে সে মেসেজ পেল যে, আগামী ৪ জানুয়ারী তার করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। সেজন্য তাকে স্কুলে গিয়ে টিকা দেওয়ার কার্ডটি তুলতে হবে। এই মেসেজ শুধু তার কাছে নয়, তার বন্ধুদের কাছেও গিয়েছে।
যথারীতি ৩ জানুয়ারি সবাই দুপুর ১২ টা ৩০ মিনিটে স্কুলের প্রশাসনিক ভবনের নিচে জমায়েত হলো। মিরাজ তার বন্ধুদেরকে দেখে অনেক খুশি হলো। দীর্ঘ ১ মাস পর সবার সাথে মিলিত হতে পেরে সে অনেক বেশী এক্সাইটেড হলো। তাদের ক্লাস টিচার একে একে সবাইকে করোনার ভ্যাকসিনের জন্য টিকা কার্ডটি দিয়ে দিলো। আর বলল, আগামিকাল সকাল ৮টায় যেন সবাই আধুনিক সদর হাসপাতালে চলে যায়। সেখানে সবার টিকা দেওয়া হবে।
সবাই যেন কার্ডটি পূরণ করে সেখানে সঙ্গে নিয়ে যায়। আর কেউ যেন দেড়ি না করে। সময়মতো সবাই যেন পৌঁছে যায়। সবাই তাতে সম্মতি জানালো।
মিরাজ তার বন্ধু সাম্যকে বলল, কালকে সকাল ৮ টায় যেন হাসপাতালে মিলিত হয়। আগে গেলে আগে পাওয়া যাবে। দেরিতে গেলে লাইন ফুল হয়ে যাবে। তখন, অনেক্ষন দাঁড়িয়ে থাকতে হবে আমাদেরকে। সাম্য তখন বলল, ও যথাসময়েই উপস্থিত হবে। মিরাজ যেন যেতে দেড়ি না করে।
এরপর সেই শুভক্ষণ চলে আসলো। ৪ জানুয়ারী ২০২২। সকাল ৮টা বেজে গেছে। মিরাজ এর বাবা তাকে তাড়াতাড়ি সাজতে বলল। মিরাজ সাজতে সাজতে আর যেতে যেতে অনেকটা সময় লেগে গেলো। সে তার বাবার সাথে গেলো। সেখানে যখন তারা পৌঁছায়, তখন ঘড়িতে ৮ টা ৩৫ বাজে গেছে।
মিরাজ ভাবল, সাম্য মনে হয় চলে এসেছে। তারই অনেকটা দেড়ি হয়ে গেছে। ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে প্রবেশ করে সে দেখল সাম্য কেন, তার বন্ধুরা কেউই আসেনি। কিন্তু তার একটা হিন্দু বন্ধু এসেছে। আর সেই লাইনের প্রথমে দাঁড়িয়ে আছে। লাইনে রিভারভিউ স্কুলের অনেক ছাত্রও দাঁড়িয়ে আছে। তাই তাকে তাদের পিছনে দাঁড়াতে হলো।
তার সিরিয়াল হলো ৮ নম্বর। যথারীতি ৯টা কি ৯টা ১০ মিনিটে টিকা কার্যক্রম শুরু হলো। তার বন্ধু ধ্রুব টিকা দিয়ে বাইরে বের হয়ে আসলো। একে একে ১-৭ নম্বর সিরিয়াল পর্যন্ত সকলের টিকা দেওয়া হলো। এবার তার পালা।
ঠিক সকাল ৯টা ২০ মিনিটে মিরাজ করোনার ভ্যাকসিন ফাইজারের প্রথম ডোজ নিল।
বাইরে এসে সে দেখে এখনো তার বন্ধু সাম্য আসে নি। বাইরে তখন লাইন অনেক বড় হয়ে গেছে। প্রায় ২০০ এর কাছাকাছি ছাত্র লাইনে দাঁড়িয়ে আছে। আর যারা লাইনে ঢুকার সুযোগ পায়নি, তারা পাইচারি করছে। লাইনের জায়গা ফাকা হলে তারা লাইনে ঢুকে পড়বে। কিন্তু এদের মাঝে সাম্য নেই।
পরে মেসেঞ্জারে জানতে পারি যে, সে ৯টা ৩০ মিনিটে হাসপাতালে গিয়েছিল। আর ১১টায় টিকা দিয়ে আসছে।
সে পরে যাওয়ার জন্য তাকে ১.৫ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে। আর মিরাজ সময়ে যাওয়ার কারণে, তার বেশী সময় লাগে নি।
তো বন্ধুরা, এই গল্প থেকে তোমরা কি বুঝতে পারলে? সময়ের মূল্যায়ন সবসময় করা উচিত, তাই না? কমেন্ট করে জানাও।