“অবহেলা বোঝাতে ভাষার প্রয়োজন নেই ব্যবহারই যথেষ্ট। “রাতের গভীরতায় নির্জনতা বাড়ে, আটপৌরে ভালোবাসায় গাড়ে অবহেলা। যে, যতনে রতন মিলে সে যতনও ব্যবহার আর হাতের ধন যার অভাবে হারায় সেও মূলত ব্যবহার। সোনা যেমন নিজের রূপে অপরকে শোভিত করে ভিন্নার্থে বোঝার প্রয়োজন পরে না। আলোর প্রকাশে স্পষ্টই উজ্জ্বল হয় সমুদয় বস্তুর সামন এবং পিছন তাতে প্রয়োজন হয় না কোন ভাষার! তেমনি ভাবে অবহেলা বোঝার জন্য ভাষার প্রয়োজন হয় না, বরং ব্যবহারই যথেষ্ট।
বিশেষ করে ব্যবহার এর মাধ্যমে যে কোন ব্যক্তি তাঁর অবচেতন ব্যক্তিত্বকে দিবালোকের ন্যায় প্রকাশ ঘটাতে পারে, তাতে ভাষা অলঙ্কারের প্রয়োজন পরে না।”মানুষ মানুষের জন্য ভালোবাসার সম্পদ।” ভালোবাসা যখন কারো অন্তরে বদ্ধমূল হয়, সে অন্তর অফুরন্ত ভালোবাসার! যত ভালোবাসে ততই ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়। তবে একক এবং সুযোগবাদী আত্ম স্বার্থ কেন্দ্রিক ব্যবহার দিয়ে কোন সম্পর্ক টিকে থাকে না।
হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসে তার বিপরীতে তুচ্ছতা ভোগের পাত্র হলে এর মতো যন্ত্রনা আর নেই। তাই অবহেলা শব্দটা যত ছোটো হোক না কেন, আসলে যন্ত্রনাটা মর্মন্তুদ কঠিন। ভালোবাসার টেকসই সম্পর্ক মূলত তখনই হয়, কেউ যখন কাউকে উপেক্ষা না করে গভীরভাবে উপলব্ধি করে। আর যখন পরস্পর সম্পর্কের মধ্যে উপলব্ধি জ্ঞান ঘুণে পোকায় ধরে, সন্দেহ কিবা পাশবিক কোন কারণে তখন মধুর সম্পর্কের মূলে অবহেলা পয়দা হয়।
এ জন্য আগে নিজেকে তারপর অপরকে ভালোবাসতে শেখা আবশ্যক। কেননা নিজেকে ভালবাসতে না জানলে অপরকে ভালোবাসা যায় না। ভালোবাসাবীনে একসময় মানুষ অবহেলার পাত্র হয়ে পড়ে।নিজেকে হারিয়ে ফেলে দূর থেকে অনেক দূরে! দূরুত্ব থেকে নিজেকে ফিরিয়ে আনা কখনো সহজতর হয়ে উঠে না! তখন আফসোস হয় যে, হেরেছি ভাগ্যের কাছে নয় বরং অবহেলার কাছে। জীবন বড়ো রহস্যময়। জীবনের সম্পূর্ণ অংশজুড়ে রয়েছে পরীক্ষা এবং তার কীর্তি ও ফলাফল।যে জীবনে পরীক্ষা নেই সে জীবনে হার জিত নেই। আবার হার জিত নেই সে পরীক্ষাই কী?
পরীক্ষার অর্থই হচ্ছে মনে করুন একটি শ্রেণীতে পঞ্চাশজন পরীক্ষার্থী সাফল্যের অভীষ্ট লক্ষে পৌঁছিতে সবারই অদম্য আগ্রহ বিদ্যমান থাকার পরেও একজন পরীক্ষার্থী জীবনের মাঝ পথে হেরে গেলো এবং কৃতকার্যকারী বন্ধুরা আফসোস করে বললো হায়!আফসোস দোস্ত সবই ভাগ্য! আসলে ভাগ্য কী? আবেগের দ্বারা ভিন্ন ভিন্ন ভাবে আমরা ভাগ্যের যেমন খুশী তেমন ব্যাখ্যা করে থাকি আসলে সেটা তো ভাগ্য নয়। অর্থাৎ যারা অসম্ভবকে সম্ভবপর বলে কৃতকার্য হয়েছে তাদের ক্ষেত্রে আমরা বলি যেমন কষ্ট করেছে তেমন ফল ও পেয়েছে।
আর যে হেরে গেছে তার বেলায় আমরা ঈশ্বর আল্লাহ কিংবা ভগবানকে দোষারোপ করি যে, উপর আলার মঞ্জরী নেই। অথচ! ভাগ্য হল একটি অতিপ্রাকৃত এবং নির্ণায়ক ধারণা যেখানে কিছু শক্তি( আত্মা) আছে যা পদার্থবিজ্ঞানের নির্দিষ্ট কিছু নিয়মানুযায়ী ঘটতে পারে।কিন্তু ভাগ্য ইংরেজি: (Luck)বলতে নির্ধারণ করা, নির্দিষ্ট করা, ধার্য করা, নিয়তি, ভাগ্য, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বুঝায় এই মহাবিশ্বে ভবিষ্যতে যা কিছু ঘটবে, প্রজ্ঞাময় প্রভু তাঁর পূর্বজ্ঞান ও প্রজ্ঞা অনুযায়ী সেসব নির্ধারণ করে রেখেছেন যাকে তাকদির বা ,ভাগ্য বলে।
পৃথিবীর সব বস্তু তথা মানব-দানবসহ যত সৃষ্টি রয়েছে, সব কিছুর উত্থান-পতন, ভালো-মন্দ, উপকার-অপকার, লাভ-ক্ষতি ইত্যাদি কোথায়, কোন সময়, কিভাবে ঘটবে—আল্লাহ তাআলা নির্ধারণ করে রেখেছেন। তাকদিরের বাইরে কোনো কিছু নেই।এর অর্থ এই নয় তাঁরই দেয়া কর্ম স্বাধীনতা থেকে এড়িয়ে ভাগ্যকে প্রাধান্য দিবে।কথায় আছে তদবিরে তকদির ফিরে যে কোন সফলতার পিছনে আত্মবিশ্বাস ও দৃঢ় প্রচেষ্টা এবং বিচক্ষণ ইচ্ছা চেতনা শক্তির ব্যবহার অনস্বীকার্য।
অকৃতকার্য হওয়া শিক্ষার্থীর বিষয়টি সবার কাছে আশ্চর্যজনক এবংআফসোসের হলেও অকৃতকার্যকারী স্বয়ং এবং শিক্ষকের কাছে যেমন কর্ম তেমন ফল ভিন্নার্থের এবং রহস্য জনক।অর্থাৎ তার হেরে যাওয়ার পিছনে প্রধান কারণ ছিল তার প্রিয়জন।যাদের প্রতি আস্থা ভরসা এবং নিবিড় ভালোবাসা ছিলো ঠিক পরীক্ষার মুহূর্তে পারিবারিক জের ধরে তাকে অবজ্ঞা শুরু করে। হেরে গেছে ভাগ্যের কাছে নয় প্রিয়জনের কাছে ।বিশ্বাস ভঙ্গ করে প্রিয়জন বিয়োগ হয়ে যায় তার জীবনের থেকে দূর হতে অদূরে। যার ফলশ্রুতিতে সৌভাগ্যের সোপান থেকে সে হেরে যায়। এজন্য বলা হয়ে থাকে মানুষ সব সময় ভাগ্যের কাছে হারে না কখনো কখনো প্রিয় জনের অবহেলা আর বিশ্বাসের কাছেও হেরে যায়!আর এটুকু বোঝার জন্য ভাষার প্রয়োজন নেই ব্যবহারই যথেষ্ট” ।