গ্রামের নাম হরিপুন্ডপুর। সেই গ্রামে বাস করতো রাসেল নামে একজন ট্রাক ড্রাইভার। তার পরিবারে বউ বাচ্চারা সহ পাঁচ জন বাস করতো। কিন্তু রাসেল ট্রাক চালানোর কারণে, তাকে অনেক গভীর রাতে বাড়িতে ফিরতে হতো। এই নিয়ে তার বউ তাকে অনেকবার ট্রাক চালানো ছেড়ে দিতে বলেছে। কিন্তু রাসেল তার বউকে বলতো ট্রাক না চালালে তাদের পেটে ভাত কি করে জুটবে। এর ফলে রাসেলের বউ রাগ ধরে তাকে বলতো, “তাদের যে ২ বিঘে জমি আছে তাই চাষ করলে তাদের পেটে ভাত এমনিতেই জুটবে”।
কিন্তু রাসেল চাষ করতে চাইতো না। সে শুধু ট্রাক চালাতেই ভালোবাসতো। রাসেলের বউ এমনিতেই রাসেলকে রাতে ফিরতে মানা করতো না। কারণ, “তাদের গ্রামের আমতলিতে নাকি রাতে পেত আত্মারা ঘুরাঘুরি করতে থাকে মানুষ খাওয়ার জন্য”।
কিন্তু রাসেল তার বউয়ের ভুতুরে কথা বিশ্বাস করতো না। সে বলতো, ভুত থাকলে এতদিন যে সে গভীর রাতে আমতলির রাস্তা দিয়ে বাড়িতে ফিরে, তাহলে একটাতো ভুত সে দেখতে পেত!
একদিন রাতে রাসেল ট্রাক চালিয়ে বাড়িতে ফিরতেছিল। সে আমতলির রাস্তায় পোছার মাত্রই কি যেন দেখতে পেলো। রাসেল অনেক ভয় পেলো।
তাই রাসেল কোনোদিকে না তাকিয়ে সোজা ট্রাকের স্পিড বাড়িয়ে দিলো। আর সে বাড়িতে ফিরে এক গ্লাস পানি খেয়ে নিজের মনকে সান্তনা দিলো যে, সে কোনো কিছুই দেখে নি। আর এ কথা বাড়ির কাউকে জানালো না।
এভাবে পরের দিন যখন রাতে ট্রাক চালিয়ে বাড়িতে ফিরছিল, তখন কোনো দিকে না তাকিয়ে বাড়িতে ফিরে আসলো। এই ভাবে কয়েকদিন কেটে গেলো। রাসেল আর কোন ভয় পেলো না। আগের মতো করেই রাতে ট্রাক চালিয়ে বাড়িতে ফিরছিল।
আর এদিকে রাসেলের বউ রাসেলকে নিয়ে অনেক চিন্তা করতো। কারণ, রাসেল ছাড়া তাদের পরিবার একটুকুও চলবে না।
একদিন রাসেলের ট্রাকের টায়ার পাংচার হওয়ার কারণে, তাকে রাতে পায়ে হেটে বাড়িতে ফিরতে হচ্ছিলো। তখন রাত ২ টা চারদিকে থমথমে পরিবেশ। রাসেল যে রাস্তা দিয়ে আসতেছিল সেই রাস্তায় রাতে কেউই বের হয় না। কারণ, সেটা আমতলির রাস্তা। রাসেল চারদিকে না তাকিয়ে ধীরে ধীরে পা ফেলতেছিল।
রাসেল যখন একটি লোককে সামনে দারিয়ে থাকতে দেখল, তখন রাসেলের মন অনেকটা ভয়মুক্ত হলো। সে লোকটির কাছে যেতে লাগলো। কিন্তু একটুপর রাসেল ভাবলো, এই রাস্তায়তো কেউই আসে না, বিশেষ করে রাতে!
রাসেলের শরীর ঘামতে লাগলো। তাই সে একটু দারিয়ে ব্যাপারটা বিবেচনা করার জন্য একটা ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকলো। হঠাৎ রাসেল অনেক ভয় পেয়ে গেলো। সে দেখে দারিয়ে থাকা লোকটি আসলে মানুষ নয়। কারণ, তার হাত নীল আর চোখ দুটো বড় বড়।
আর মানুষের চোখের কালো অংশ একটু বড় থাকা দরকার। আর সামনে যে লোকটি দারিয়ে আছে তার চোখের কালো অংশ অনেক ছোট ছোট। মুখটা রক্তাক্ত। হাতের নখ বড় বড়।
এইটা দেখে রাসেল জ্ঞান হারিয়ে ফেললো। এদিকে রাসেলের বউ অনেক চিন্তা করতে লাগলো। রাসেলের বউ আরও ভাবতেছে যে, এখনো রাসেল বাড়ি ফিরল না কেন?
তাই রাসেলের বউ রাসেলের চাচাতো ভাই হাতিমকে সব কথা জানালো। হাতিম বলল, ভাবি আপনি চিন্তা করবেন না,। সকাল হলেই রাসেল ভাই বাড়িতে ফিরে আসবে।
যখন রাসেল সকাল হলেও বাড়িতে ফিরল না, তখন রাসেলের বউ ও তার চাচাতো ভাই হাতিম আমতলির রাস্তায় গিয়ে রাসেলকে খুজতে লাগলো। আর একটা ঝোপের মধ্যে রাসেলকে পড়ে থাকতে দেখে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি করলো। আর রাসেল ভুতের হাত থেকে এ জাত্রাই বেঁচে গেলো। কিন্তু রাসেল আর রাতে সেই রাস্তায় তো দূরে থাক বাড়ি থেকেই বের হয় না।
এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য সকলকে ধন্যবাদ।