একটি মিষ্টি মেয়ের প্রেমের গল্প (ছোট গল্প) ভালোবাসা এক শ্রেষ্ঠ অনুভূতির নাম! চলুন গল্পটি শুরু করার যাক-
আয়মানঃ ভালোবাসা কত ভালো এক অনুভূতি। যারা প্রেমে পড়ে শুধু তারাই বুঝে। আহারে! আমিও যদি কারো সাথে প্রেম করতে পারতাম। কেউ যদি আমাকে ভালোবাসতো।
আফরিনঃ ভালোবাসা কি? ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই। এটি শুধু হচ্ছে সময় নষ্ট। ভালোবাসা বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই। ক্যারিয়ারের দিকে খেয়াল দে। জীবনে বড় কিছু হ।
আয়মানঃ তুই তো সারাজীবন ক্যারিয়ার ক্যারিয়ার ই কইরা গেলি। আমার তো চেহারা ভালো না, টাকা নেই তাই কেউ পাত্তা দেয়না। তুই তো কত সুন্দর! তারপরও প্রেম করছ না। বুঝি না তুই এতো আনরোমান্টিক কেন!
আফরিনঃ চুপ কর। আমি রোমান্টিক বা আনরোমান্টিক তাতে তোর কি? বাদ দে। আমি এই বিষয়ে আর কথা বলতে চাই না।
আফরিন ও আয়মান হচ্ছে বেস্টফ্রেন্ড। তারা তাদের সব সুখ দুঃখের কথা একজন আরেজনের সাথে শেয়ার করে।
এ বছর তারা এসএসসি পরীক্ষার্থী। তারা দুজনই সারাদিনই পড়ালেখা করে। কারণ পরীক্ষার আর দুই মাস বাকি। দুজনই সারাদিন পড়ালেখা করে, অনেক জায়গায় কোচিং করে। তারা তাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে নিয়েছে। দুজনেই অনেক ভালো ফলাফল করে। আয়ময়ান A+ পেয়েছে ও আফরিন বোর্ড নবম হয়েছে।
তারপর তারা চিন্তা করে তারা বন্ধুরা মিলে ছোটখাটো একটি পার্টির আয়োজন করবে। তো যেমন চিন্তা তেমন কাজ। তো তারা একটি পার্টির আয়োজন করল। ওরা মোট ২৫ জন সেই পার্টিতে উপস্থিত ছিল।
এর মধ্যে বেশিরভাগই আয়মানের কাছের বন্ধু কারণ আফরিনের ওরকম একটা বন্ধু নেই।
আয়মানের বন্ধুদের মধ্যে ওর সবচেয়ে কাছের ছিল সাকিব। সাকিবের বৈশিষ্ট দেয়া যাক। দেখতে সুন্দর, ফর্সা, লম্বা। এককথায় বলতে গেলে “হ্যান্ডসাম”ও আর গল্পে গল্পে তো আফরিনের গঠনই বলা হয়নি! অত্যন্ত সুন্দর মিষ্টি চেহারা, ফর্সা, মোটামুটি লম্বা, ভালো ছাত্রী, এককথায় বলতে গেলে যেকোনো ছেলের “ক্রাশ”। অনেকবারই তাকে প্রেম প্রস্তাব দেওয়া হইছে কিন্তু সে কখনোই রাজি হয়নি। তো আয়মান আফরিনের সাথে সাকিবের পরিচয় করিয়ে দিল।
আয়মানঃ আফরিন এই হচ্ছে সাকিব আর সাকিব এই হচ্ছে আমার বেস্টফ্রেন্ড/ বেস্টি আফরিন।
সাকিবঃ হাই!
আফরিনঃ হাই। কেমন আছেন?
সাকিবঃ ভালো। সাকিব প্রায়ই তোমার কথা আমাকে বলে।
আফরিনঃ “তুমি”!? আমি তো আপনাকে চিনিও না!
সাকিবঃ আমরা একই ক্লাসে পড়ি তাই বলছিলাম। কোনো সমস্যা হলে থাক তাহলে আর ‘তুমি’ বলব না।
আফরিনঃ না! ঠিক আছে।
সাকিবঃ শুনলাম তুমি নাকি বোর্ডে নবম হয়েছে।
আফরিনঃ হ্যাঁ।
সাকিবঃ Congratulations!
আফরিনঃ ধন্যবাদ।
সাকিবঃ আয়মান প্রায়ই তোমার কথা বলে। বলে তুমি নাকি ক্যারিয়ারের বিষয়ে খুবই সিরিয়াস?
আফরিনঃ আয়মান তোর কোনো কাজ নাই।
আয়মানঃ আমি একটু আসতেছি।
আফরিনঃ আমার মতে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে জীবনে সফল হওয়া।
সাকিবঃ হ্যাঁ। জীবনে সফল হওয়ার প্রয়োজন আছে কিন্তু জীবনটাকে একটু উপভোগও তো করতে হবে।
আফরিনঃ আমি এখন যাই। আয়মান আমি এখন যাইতেছি।
আয়মানঃ এখনই? যা! তোর তো আবার ক্যারিয়ার গঠন করতে হবে!!!!
আফরিনঃ চুপ থাক, বলদ।
সাকিবঃ Nice to meet you।
আফরিনঃ Nice to meet you too। বাই!
তারপর আফরিন চলে যায়। তারা দুজনই দুজনের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। শরীরের চাইতেও বেশি পার্সোনালিটি দিয়ে। আফরিন বাসায় গিয়ে সাকিবকে নিয়ে চিন্তা করতে থাকে। ওর একটু কিছু আলাদা অনুভব হয়। তার সাকিবের সামনে বসে যা অনুভব হলো তা আগে কখনোই হয়নি।
পরের দিন সাকিব আয়মানের কাছে আফরিনকে নিয়ে জিজ্ঞাসা করে।
সাকিবঃ দোস্ত! ওর কি বয়ফ্রেন্ড আছে।
আয়মানঃ ‘ও’ কে?
সাকিবঃ আফরিন।
আয়মানঃ না!
সাকিবঃ কেমনে সম্ভব? ও এতো সুন্দর!!!!
আয়মানঃ ওর এইসব করার সময় নাই। কইলাম না ওর “ক্যারিয়ার”। কত পোলা ওরে প্রোপোজ করছে। কিন্তু কখনোই ও আ্যকসেপ্ট করে নাই।
কয়েকদিন পর তারা সবাই বিভিন্ন কলেজে ভর্তি হয়।
আয়মান ঢাকা কলেজে ও আফরিন নটরডেম কলেজে ভর্তি হয়। এখন তাদের আর আগের মতো দেখা হয়না।
আফরিন প্রথম দিন কলেজে গিয়ে একটু সংকোচবোধ করে যেহেতু সে কিছুটা লাজুক প্রকৃতির। কিন্তু কলেজে যাওয়ার পর তার সাকিবের সাথে দেখা হয়। তাকে দেখার পর তার সংকোচবোধ আর ভয় কিছুটা কাটে। ওরা কিচ্ছুক্ষণ কথা বলে।
সাকিবঃ হাই! কেমন আছো?
আফরিনঃ ভালো। তুমি?
সাকিবঃ আমিও ভালো আছি। তুমিও এ কলেজে?
আফরিনঃ হ্যাঁ।
সাকিবঃ এখানে তোমার ভয় লাগতেছে না তো?
আফরিনঃ না! ভয় লাগবে কেন! (যদিও তার অনেক ভয় লাগছিল)
সাকিবঃ ওহ! তাহলে ঠিক আছে। আয়মান বলছিল যে তোমার নতুন পরিবেশে একটু মানিয়ে নিতে কষ্ট হয়। তাই আর কি। যাইহোক। তোমার আয়মানের সারগে কথা হয়?
আফরিনঃ হ্যাঁ। মাঝে মাঝে।
ক্লাস শেষ হওয়ার পর তারা কিচ্ছুক্ষণ একসাথে হাটে।১০-১৫ মিনিট পর আফরিন বাসায় চলে যায়। সে সময় ওরা একজন আরেকজনকে ফেইসবুকে আ্যড করে নেয়। বাসায় যাওয়ার পর সন্ধ্যা বেলায় সাকিব আফরিনকে ফোন দেয়। সে আফরিনের সাথে দেখা করতে চায়। কিন্তু আফরিন রাজি হয়না। দুইদিন পর আবার তাদের কলেজে দেখা হয় এবং সেদিন আফরিন সাকিবের সাথে বাইরে যেতে রাজি হয়। তারা একসাথে কফি খায়। এভাবে তাদের সম্পর্ক আস্তে আস্তে আরো ঘনিষ্ঠ হতে থাকে। ৩-৪ মাস পর তারা একসাথে ঘুরতে যাওয়া শুরু করে। তাদের ক্লাসের সবার তাদের সম্পর্ক সম্পর্কে জানত যদিও তাদের বাবা-মা রা জানত না। প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর তারা চিন্তা করে তারা সবাই মিলে সাজেক ঘুরতে যাবে। তারা সবাই সাজেক ঘুরতে যায়। অনেকদিন পর তাদের সাথে তাদের আগের বন্ধুদের দেখা হয় যেমন আয়মান, রাকিব সবাই। তারপর সাকিব আয়মানের সাথে সিগারেট খেতে থাকে ও আফরিনকে নিয়ে কথা বলে।
সাকিবঃ দোস্ত! আমি না আফরিনকে ভালোবাসি।
আয়মানঃ ও তা তো ভালো কথা…. এতো কিছু ঘটাই ফেলছ আর আমি জানিও না।
সাকিবঃ ভাই! ওরে আমি প্রোপোজ করতে চাই।
আয়মানঃ আমি কি জানি!
সাকিবঃ তুই তো ওকে আমার চাইতে ভালো চেন…
আয়মানঃ আমি যেটুক যা জানি আফরিন রাজি হইবে না। হইলেও পরে দেখবি ওর ফ্যামিলি রাজি না।
সাকিবঃ তাহলে কি করব না?
আয়মানঃ না, কর। চেষ্টা কইরা দেখ। হয়ত এই এক বছরে তোকেও ওর ভালো লেগেছে।
সাকিবঃ ঠিক আছে, দেখি।
তারপর সাকিব চিন্তা করে যে সে এখন কি করবে। প্রোপোজ করবে কি করবে না। পরে শেষ পর্যন্ত সাহস করে সে আফরিনের কাছে যায়। আফরিন তার অন্যান্য বান্ধবীদের সাথে ছিল।
সাকিবঃ হাই! একটু বাইরে আসবা।
আফরিনঃ কিছু বলবা।
সাকিবঃ না মানে হ্যাঁ। আসলে মানে কিভাবে যে বলি মানে আমার না তোমাকে কিছু বলার ছিল।
আফরিনঃ কি?
সাকিবঃ আমি তোমাকে অনেক দিন পর্যন্ত একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম।
আফরিনঃ তো সেটা কি?
সাকিবঃ আমি না তোমাকে ভালোবাসি। আসলে তোমাকে ছাড়া আমার পক্ষে থাকা সম্ভব নয়। আমি আমার জীবনের প্রত্যেকটি ধাপে তোমাকে পাশে চাই।
এ বলে সে তাকে একটি রিং দেয় (সম্ভবত সোনার)।
এ দেখে আফরিন পুরা অবাক। সে এই কথা শুনে পুরো হতভম্ব হয়ে যায়।
আফরিনঃ আসলে আমার একটু সময়ের প্রয়োজন। আমি পরে তোমাকে জানাব আনে। ঠিক আছে?
সাকিবঃ ঠি-ঠিক আছে।
তারপর সাকিব খুবই লজ্জা পেতে থাকে যে আফরিন রাজি হলো না।
সাকিবঃ কেন যে করতে গেলাম। বিনা কারণে নিজেকে ছোট করা আর কি! এতদিন তো কমপক্ষে ওর সাথে থাকতে পারতাম,কথা বলতে পারতাম। এখন তো তাও করতে পারব না।
আয়মানঃ আমি আগেই বলছিলাম। ও রাজি হবে না।
সাকিবঃ এসব না করলেই ভালো হতো।
অপরদিকে আফরিন এখনও পুরো শকড। কি হলো একটু আগে, সে কি আসলেই আমাকে ভালোবাসে, আমি এখন কি বলব। এরকম হাজারো প্রশ্ন তার মাথায় ঘুর পাক খাচ্ছে।
পরদিন সকালে সবার সামনে সাকিব আফরিনের মাছে মাফ চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
সাকিবঃ আফরিন, আমি সরি! আসলে আমি খুব তারাতারিই একটা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলাই। আমি চিন্তাও করি নাই যে তুমি প্রস্তত কি না। আমি মন থেকে তোমার কাছে মাফ চাই।
সবাই অবাক। তারপর আফরিন কিচ্ছুক্ষণ চুপ থাকে ও তারপর হঠাৎ করে সাকিবকে চুমু খায় ও বলে “এতে মাফ চাওয়ার কিছুই নেই। আমিও তোমাকে অনকে ভালোবাসি। আমিও এ কথা অনেকদিন পর্যন্ত বলতে চাই”
সাকিবঃ সত্যিই!!! বলে তারা আবার এক আরেকজনকে চুমু খায়।
এ দেখে পুরো সবাই আরো অবাক। কারো মাথায়ই কিছুই কাজ করতেছে না।
পরে তারা আরো অনেক দিন একসাথে থাকে। এবং এখন পর্যন্ত অনেকবারই আফরিনের জন্য বিয়ের প্রস্তাব আসে।কিন্তু ও রাজি হয় না। তাদের অনার্স পাস করার পর তারা সিদ্ধান্ত নেয় যে তারা তাদের ফ্যামিলিকে তাদের সম্পর্কের কথা বলবে। কিন্তু একজনও সাহস পায় না। এখানেও আয়মান তাদের দুইজনকে সাহস যোগায়।
আয়মানঃ দোস্ত, দেখ। তোদের এই ভালোবাসা, এজ কষ্ট, এই অনুভূতির কোনো মূল্য নেই যদি তোরা দুইজন একজন আরেকজনকে সারাজীবনের জন্য না পাও।
সাকিবঃ তুই আর আমাদের জন্য কত করবি!
আয়মানঃ তোরা আমার বন্ধু। তোদের এক করার জন্য আমি সবকিছু করতে পারি।
আফরিনঃ কিন্তু বাবা-মা যদি রাজি না হয়। তাহলে তো তারা এবার নিশ্চয়ই অন্য কোথাও আমার বিয়ে ঠিম করবে।
আয়মানঃ ভয় পাস না। তোদের জয় হবেই ইনশাআল্লাহ। তা বাদে তোরা এখন স্ব নির্ভরশীল হইয়া গেছস।
পরে সাকিব ও আফরিন উভয়ই তার ফ্যামিলির সাথে কথা বলে। প্রথমদিকে কোনো পরিবারই রাজি হচ্ছিল না। পরে তারা আরো অনুরোধ করে এবং শেষ পর্যন্ত উভয়ের পরিবারই দেখা করার জন্য রাজি হয়। এবং তাদের সম্পর্ক মেনে নেয় ও তাদের বিয়ে ঠিক করে। তাদের ফ্যামিলিকে অনুরোধ করায় শুধু সাকিব ও আফরিনেরই যে সব অবদান, তা ঠিক নয়। আয়মান তাদের দুইজনরেই ফ্যামিলি ফ্রেন্ড হওয়ায় সেও তাদের অনুরোধ করে। পরবর্তীতে তাদের বিয়ে হয়।
এখন তাদের বিয়ের ১৯ বছর হয়ে গিয়েছে। তাদের দুই সন্তান, একটি মেয়ে আছে নাম রাইসা ও একটি ছেলে নাম তার রাদিন। আর পেশায় আফরিন একজনের বড় মাপের লেখক ও সাকিব একজন ডাক্তার। এখনও প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়, রাগ-অভিমান, কিন্তু তারা এখনও একে অপরকে আগের মতোই ভালোবাসে।
এখন আফরিনের জীবনে অনেক পরিবর্তন আর এই পরিবর্তন হয়েছে ভালোবাসার মাধ্যমে। আগে যে আফরিন আগে বলত যে, ” ভালোবাসা কি? ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই। এটি শুধু হচ্ছে সময় নষ্ট। ভালোবাসা বলতে পৃথিবীতে কিছু নেই।”
সেই আফরিন আজকে বলে যে, “ভালোবাসা ব্যতীত মানুষ অচল। প্রত্যেক ব্যক্তির জীবনেই ভালোবাসা দরকার। ভালোবাসা এক শ্রেষ্ঠ অনুভূতির নাম”।
” সত্যিকারের ভালোবাসার কোনো মৃত্যু নেই। ভালোবাসার কোনো জয় বা পরাজয়ও নেই। একজন ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসলে সে মারা গেলেও তার ভালোবাসার মৃত্যু হয়, তার বিয়ে হোক বা অন্য যাই হোক না কেন ভালোবাসার মৃত্যু হয় না। এ যেন এক অমর অনুভূতি যা যেকোনো ব্যক্তির জীবন, মানসিকতা, আচার আচরণের পরিবর্তন ঘটায়।”
বিঃদ্রঃ উপরোক্ত সকল ঘটনা ও চরিত্র কাল্পনিক। এর মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি, সমাজ, ধর্ম বা দেশের অপমান করার চেষ্টা করা হয়নি। উক্ত ঘটনা/চরিত্র কোনো ব্যক্তির সাথে যদি মিলে যায় তার জন্য আমি/গ্রাথোর কোনোভাবেই দায়ী নয়।
গল্পঃ ভালোবাসা এক শ্রেষ্ঠ অনুভূতির নাম!
লেখকঃ T. K.