কয়েন কালেকশন বা মুদ্রা সংগ্রহ খুব জনপ্রিয় একটি হবি। ছোট বড় সব শৌখিন মানুষের কাছেই কয়েন কালেকশন করা একইসাথে মজার ও ব্যতিক্রমধর্মী একটি শখ। যারা বহু আগে থেকে কয়েন কালেকশন শুরু করেছেন তারা হয়তো অনেক এগিয়ে গেছেন, সংগ্রহের ঝুলিতে অনেক অপ্রচলিত মুদ্রা যোগ করেছেন, কিন্তু যারা নতুন, যারা কয়েন কালেকশন শুরু করতে চান, তাদের অনেকেই জানতে চায় কিভাবে কয়েন কালেকশন শুরু করবো, তাও আবার শুন্য থেকে? নতুনদের জন্যই আমাদের আজকের আয়োজন, কয়েন কালেকশন শুরু করার জন্য বিগিনারদের জন্য একটি কমপ্লিট গাইড পোস্ট।
কয়েন কালেকশন শুরুর আগে আপনাকে বুঝতে হবে, এটা একটা শখ মাত্র। এর মাধ্যমে আয় সম্ভব না, কিন্তু ব্যয় হবে অনেক। কারণ কথায় আছে, শখের তোলা আশি টাকা। কিন্তু কয়েন কালেকশনে নামলে আপনাকে অবশ্যই খসাতে হবে আশির অধিক টাকা।
কয়েন কালেকশন অবশ্যই আপনাকে দেশী ও প্রচলিত মুদ্রা দিয়ে শুরু করতে হবে। প্রথমেই আপনি বিদেশী মুদ্রা কিংবা অপ্রচলিত মুদ্রার দিকে ঝুকলে আপনার শেখা হবে না অনেক কিছুই, কারণ শেখাটা ক্লাস ওয়ান থেকে শুরু করতে হয়, কেউ ওয়ান-টু-থ্রি না পড়েই ক্লাস টেনে ভর্তি হতে পারে না। সবকিছুই শুরু করতে হয় অল্প ও সহজ দিয়ে।
দেশী প্রচলিত মুদ্রার মধ্যে রয়েছে, ১ টাকা, ২ টাকা, ৫ টাকার ধাতব মুদ্রা বা কয়েন এবং ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকা, ২০ টাকা, ৫০ টাকা, ১০০ টাকা, ২০০ টাকা, ৫০০ টাকা, ১০০০ টাকার কাগুজে মুদ্রা। আপনাকে প্রথমেই বলব না, ৫০০ বা ১০০০ টাকার মুদ্রাগুলো একের অধিক সংগ্রহ করুন, কারণ এতে আপনার খরচ বেশি পরে যাবে। আপনি কম মূল্যমানের মুদ্রাগুলোই আগে সংগ্রহ করুন।
এরপরে আসে, বিভিন্ন ডিজাইনের বিভিন্ন সালের মুদ্রা সংগ্রহ। ১ টাকার একটি কয়েনই বিভিন্ন ডিজাইনে বের করা হয়েছে, একেকটা ডিজাইন আবার বিভিন্ন সালে বের করা হয়েছে। আমরা নিশ্চয়ই খেয়াল করেছি, সব মুদ্রার মধ্যেই যে সালে বের করা হয়েছে সেই সালের উল্লেখ থাকে। এক টাকার ডিজাইন প্রায় ৩ রকমের। একটি হচ্ছে, পরিকল্পিত পরিবার ডিজাইন, আরেকটি পরিকল্পিত পরিবারের লাল কয়েন, এবং বর্তমানে প্রচলিতটি হচ্ছে শেখ মুজিবুর ডিজাইন। আমরা যদি শেখ মুজিবুর ডিজাইনটির সালগুলো লক্ষ্য করি দেখতে পাবো যে, ২০১০, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালে এটা বের করা হয়েছে। আপনি নতুন সংগ্রাহক হিসেবে প্রথমেই এক টাকার মুজিব কয়েন ২০১০, ২০১৩ এবং ২০১৪ সালের কয়েনগুলো একের অধিক সংগ্রহ করে ফেলুন।
এরপর পরিকল্পিত পরিবার ডিজাইনের এক টাকা যেসব সালে বের হয়েছে সেগুলো সংগ্রহ করে ফেলুন, ১৯৭৫, ১৯৭৬, ১৯৭৭, ১৯৯২, ১৯৯৩, ১৯৯৫, ২০০১, ২০০২, ২০০৩, ২০০৫, ২০০৭ সালের এসব মুদ্রা সংগ্রহ করে ফেলুন এবং সম্ভব হলে প্রতিটা সাল একের অধিক সংগ্রহ করবেন। কারণ ভবিষ্যতে হয়তো আপনি কারও সাথে বিনিময় করতে পারবেন কিংবা বিক্রিও করতে পারবেন। এরপর পরিকল্পিত পরিবারের লাল কয়েন ১৯৯৬, ১৯৯৭, ১৯৯৮, ১৯৯৯ এবং ২০০৩ সালের ডিজাইনগুলো সংগ্রহ করবেন।
এখানে একটা কথা বলে রাখা উচিৎ, লাল কয়েনের ব্যাপারে গুজব ছড়ানোর ফলে বাজার থেকে এটা প্রায় উঠেই গেছে, এটা সংগ্রহ করা একটু কঠিন হবে, কারণ এগুলো সব মানুষের সংগ্রহে চলে গেছে এবং প্রায় অপ্রচলিত হয়ে গেছে। আসলে এই লাল কয়েন ২০০৩ সালে শেষ বেরিয়েছে, এটার এন্টিক মূল্যও বেশি না। শুধু শৌখিন সংগ্রাহকদের কাছে অন্যান্য সব কয়েনের মতই এটা যতটুক গুরুত্ব রাখে এর চেয়ে বেশি মূল্য এক ফোঁটাও নয় এর। শুধু শুধু একটা ভুয়া গুজবের কারণে এই লাল কয়েন সংগ্রহ কঠিন করা হয়েছে, আর কিনতে গেলে এর দামও বেশি দিতে হচ্ছে অথচ এর দাম এক টাকার জায়গায় এক টাকাই হওয়ার কথা, এর বেশি নয়।
দেশী প্রচলিত মুদ্রাগুলো বিভিন্ন ডিজাইনের বিভিন্ন সালের সংগ্রহের পর আপনাকে নামতে হবে দেশী অপ্রচলিত মুদ্রাগুলো সংগ্রহের দিকে। যেমন, ৫০ পয়সা, ২৫ পয়সা, ১০ পয়সা, ৫ পয়সা এবং ১ পয়সা। এক দশক আগেও ৫০ পয়সা ও ২৫ পয়সার প্রচলন ছিল, কিন্তু এগুলো এখন অপ্রচলিত, তাই প্রথমেই আপনাকে এসব কয়েন বিভিন্ন সালেরগুলো সংগ্রহ করতে হবে।
এরপর একে একে বাকি পুরাতন দেশী মুদ্রাগুলো সংগ্রহ করবেন। ধাতব ও কাগুজে উভয় প্রকার দেশী মুদ্রা সংগ্রহের পর আপনি বিদেশী মুদ্রার দিকে ঝুকতে পারেন।
কোথা থেকে আর কিভাবে সংগ্রহ করবেন? দেশী প্রচলিত মুদ্রাগুলো তো হাতের নাগালেই পাবেন। অপ্রচলিতগুলোর জন্য আপনার যেতে হবে গুলিস্তান, সেখানে কিছু হয়তো পাবেন, আবার অনলাইনে ফেইসবুকে কালেক্টরদের কিছু গ্রুপ আছে, সেখান থেকেও তাদের কারো কাছ থেকে নিতে পারবেন। একটা কথাই বলব কেনার ব্যাপারে, আপনি যে মুদ্রাটি কিনবেন সে সম্পর্কে আপনার জ্ঞান থাকতে হবে। নয়তো ঠকে যেতে হবে নিশ্চিত। কারণ সেই মুদ্রাটি কতটা রেয়ার, সেটা যদি জানা না থাকে তাহলে বিক্রেতা আপনার কাছে উচ্চ মূল্য হাঁকতে পারে। এসব নিয়ে প্রতারণা ও জোচ্চোরিও কম চলে না। যেহেতু এগুলো মানুষের শখের বিষয়, তাই কিছু অসাধু ব্যক্তি এসব অঙ্গনেও ঢুকিয়েছে অবিশ্বাস।
আমি পরামর্শ দিব, আপনি নতুন হিসেবে সিরিয়ালি সংগ্রহ করুন। প্রথমে দেশী সবগুলোর একেকটি মূল্যের সবগুলো ডিজাইনের সবগুলো সাল। এভাবে প্রতিটা মূল্যের মুদ্রার সব ডিজাইনের সবগুলো সাল সংগ্রহ করুন। এবং প্রতিটা একের অধিক সংগ্রহ করুন। সিরিয়ালি সংগ্রহ করার ফলে আপনার মধ্যে মুদ্রা সংগ্রহের উৎসাহ বৃদ্ধি পাবে, কমে যাবে না। কিন্তু কখনও দেশী, কখনও বিদেশী, কখনো প্রচলিত, কখনো অপ্রচলিত, যেটা ইচ্ছা সেটা এভাবে সংগ্রহ করতে গেলে আপনার উৎসাহে ভাঁটা পরতে বেশি সময় লাগবে না।