আসসালামু আলাইকুম। আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। মহান আল্লাহতালা আমাদের জন্য সুদকে হারাম করেছেন এবং ব্যবসাকে হালাল করেছেন। এই পৃথিবীর যেকোন প্রান্তে ব্যবসা করা একটি সৌভাগ্যের ব্যাপার বলে আমরা মনে করি। কিন্তু ব্যবসা করতে গেলে আমাদের সর্বপ্রথম যে বিষয়টি লক্ষ্য রাখতে হয় সেটি হচ্ছে আমরা হালাল ব্যবসা করছি নাকি হারাম।
এরপর আমাদেরকে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন সে বিষয়টি হলো ব্যবসায় জড়িত কর্মচারীদের সুব্যবস্থা প্রদান। হ্যাঁ ঠিক তাই। আমরা এই পৃথিবীতে যত মিলিয়নিয়ার বিলিয়নিয়ার দেখতে পাই তাদের বেশির ভাগ মানুষই ব্যবসার মাধ্যমে তাদের এই পর্যায়ে পৌঁছেছেন। কিন্তু তারা তাদের কর্মচারীদের সাথে কিরূপ আচরণ করেছেন সেই বিষয়ে আমরা হয়তো অনেকেই খুব কম খোঁজ খবর রাখি।
কিন্তু আপনার ব্যবসাকে আরো লাভজনক করে তোলার ক্ষেত্রে আপনার নিয়োগকৃত কর্মচারীদের সুব্যবস্থা প্রদান করা একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে কাজ করে। বাংলাদেশের মতো অনেক দেশের মানুষ মনে করে কর্মচারীদের দিয়ে দিন রাত কাটালে আমার ব্যবসায় আমি লাভবান হতে পারব। কিন্তু এরূপ ধারণা করা সম্পূর্ণ ভুল এবং যা আপনার ব্যবসার ক্ষতির কারণ হতে পারে এবং আপনার কর্মচারীদের burn-out এর কারণও হতে পারে।
burn-out কথাটি ব্যবহার করলাম এই জন্য যে আমরা অনেকেই গাড়ির চাকা কে burn-out করতে দেখেছি। অধিক ঘর্ষণের ফলে শাখাগুলো নিস্তেজ এবং শেষ হয়ে যায়। আপনার কর্মচারীদের ক্ষেত্রেও এরূপ ঘটা অস্বাভাবিক কিছু না। এর ফলে আপনার কর্মচারীদের কর্মদক্ষতা হ্রাস পায় এবং এক পর্যায়ে তারা আপনার তথ্য প্রদানে চাকুরী করতে অসুবিধা বোধ করে এবং চাকুরী ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এক্ষেত্রে আপনার করনীয় কি এবং কিভাবে আপনি এই সমস্যার সমাধান করতে পারেন আসুন জেনে নেই।
কর্মচারীদের শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করুন:
বাংলাদেশের মত দেশের ক্ষেত্রে এরূপ চিন্তা করা অনেকটাই ফ্যান্টাসির মত কিন্তু বিশ্বের বিভিন্ন দেশ বিশেষ করে উন্নত দেশসমূহ এই বিষয়টিকে মোটেই খারাপ চোখে দেখেনা। আপনার কর্মচারীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং শারীরিক স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে সক্ষম।
আপনার নিয়োগকৃত কর্মচারীরা অনেকটাই ইনভেস্টমেন্টের মত। আপনি যদি তাদের ওপর সঠিকভাবে সময় এবং যত্ন ব্যয় করতে পারেন তাহলে আপনি আপনার ব্যবসার ক্ষেত্রে তার প্রতিফলন দেখতে পাবেন। যেহেতু আমরা সবাই মানুষ আমাদের সকলেরই পরিবার নিয়েই চিন্তা ভাবনা করতে হয় সবচেয়ে বেশি।
আর তারপর নিজেদের সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা তো রয়েছেই। এই দুটো যদি সঠিকভাবে নিশ্চিত করা যায় তাহলে কর্মচারীরা কাজ করার ক্ষেত্রে কোন প্রকার বাড়তি চাপের সম্মুখীন হবে না। যার ফলে তাদের কাজের গতি এবং মান বৃদ্ধি পাবে। তাই আপনার উচিত কর্মচারীদের কাজের ফাঁকে ফাঁকে বিরতির ব্যবস্থা করে দেয়া এবং তারা যেন একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ সময় তাদের পরিবারের পেছনে ব্যয় করতে পারে সেই ব্যবস্থা করা।
ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করা এবং প্রতিযোগিতার মনোভাব সৃষ্টি করা:
কর্ম ক্ষেত্রে এই দুটো বিষয় খুবই মাথায় রাখতে হয়। কারন মানুষ সুন্দরের প্রতি আকৃষ্ট হয় খুবই তাড়াতাড়ি। আপনার ব্যবসায়িক কর্মস্থল যদি স্বাস্থ্যসম্মত না হয় এবং সুরক্ষিত না হয় তাহলে কেউই সেখানে প্রথমেই কাজ করতে চাইবে না। যদিও টাকার জন্য হলেও কেউ কাজ করে তবুও তারা তাদের কাজে তাদের সবচেয়ে ভালো পারফর্মেন্স প্রদান করতে সক্ষম হবে না। তাই আপনার কর্মস্থল কে একটি স্বাস্থ্যকর এবং সুরক্ষিত কর্মস্থলে রূপান্তরিত করুন।
আপনার কর্মচারীদের কাজের ক্ষেত্রে প্রতিযোগী মনোভাব সৃষ্টি করা আপনার ব্যবসাকে একটি নতুন পর্যায়ে নিয়ে যেতে সক্ষম। এক্ষেত্রে কর্মচারীদের কাজে উৎসাহ দেওয়ার চেষ্টা করুন। তাদের ভুলগুলো ব্যবহার করে তাদেরকে খোটা না দিয়ে বরং সংশোধন করানোর চেষ্টা করুন। ভালো কাজের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা রাখুন। হতে পারে সেটা যেকোনো কিছু যাতে আপনার কর্মচারীরা আকৃষ্ট হয়।
সঠিক দক্ষতা শেখানো এবং মানের অগ্রগতি:
আপনার নিয়োগকৃত কর্মচারীদের থেকে সঠিকভাবে কাজ আদায় করে নেওয়ার জন্য তাদেরকে অবশ্যই আপনাকে সঠিকভাবে কাজ করার বিষয়টি শিক্ষা দিতে হবে। এর জন্য সঠিক প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই। তাদেরকে এক বা একাধিক দক্ষতায় পারদর্শী করে তুলুন সঠিক প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে।
একাধিক দক্ষতায় এইজন্য পারদর্শী করবেন কারণ একই ধরনের কাজ করতে করতে মানুষের মধ্যে একঘেয়েমিতা চলে আসতে পারে। কর্মচারীগণ একাধিক দক্ষতায় প্রশিক্ষিত হলে তাদের কাজের মধ্যে অদল বদল করতে সক্ষম হবে। যার ফলে একঘেয়েমিতা দূর হবে এবং কর্মচারীদের ঝরে পড়া অনেকাংশে কমে যাবে। এটা আপনার কাজের মন ভালো হবে এবং ব্যবসায় লাভবান হবেন।