আইন অনুযায়ী বাংলাদেশে সকল ধরনের ক্যাসিনো নিষিদ্ধ। বছর খানেক আগে গোপনে পরিচালিত ক্যাসিনো ব্যাবসার বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করে। যার ফলশ্রুতিতে প্রচুর অর্থ, সোনা, রুপা উদ্ধার হয়; গ্রেফতার হয় অনেক ক্যাসিনো ব্যাবসায়ী; বন্ধ হয়ে যায় ক্যাসিনোগুলো। বর্তমানে হঠাৎ ই বেড়ে গিয়েছে অনলাইন ক্যাসিনো গেমের বিজ্ঞাপন।
ইউটিউব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এমনকি অনেক ওয়েবসাইটেও দেখা যায় এ বিজ্ঞাপনগুলো। বিজ্ঞাপনগুলো হয় অত্যন্ত চাটুকার এবং লোভনীয়। আশ্চর্যজনক হলেও সত্যি যে, গুগল প্লেস্টোর তেই পাওয়া যায় ক্যাসিনো গেমগুলো। আমরা অনেকেই লোভে পরে ক্যাসিনো গেমগুলো স্মার্টফোনে ইন্সটল করে খেলতে থাকি আর বোঝে উঠার আগেই সমস্যার সম্মুখীন হয়। অনলাইন ক্যাসিনো গেম খেললে যে যে সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় এবং সে সমস্যা থেক বাচার উপায় নিয়ে আজ আমি আলোচনা করব।
অনলাইন ক্যাসিনো গেমের কিছু অ্যাপ রয়েছে যা ক্যাসিনোর হুবাহু অনলাইন রুপ। যারা সাধারণত ক্যাসিনো গেম খেলতে পছন্দ করেন তারা এ অ্যাপ এর সাহায্যে অনলাইন ক্যাসিনো গেম খেলে থাকেন। এ ধরনের অ্যাপে গেম খেলতে হলে প্রথমে আপনাকে মোবাইল ব্যাংকিং বা ডিজিটাল ব্যাংকিং এর সাহায্যে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে গেম খেলার টিকেট বা কয়েন সংগ্রহ করতে হবে তারপর নির্দিষ্ট পরিমান কয়েন বা টিকেট ব্যাবহার করে গেম খেলতে হবে, জয়ী হলে পুরস্কার হিসাবে অতিরিক্ত কয়েন পাবেন আর হেরে গেলে আপনার কয়েন অন্যরা পেয়ে যাবেন। আসলে গেমে আপনার বিপক্ষে অংশ নেওয়া খেলোয়াড়দের সকলেই প্রোগ্রামিং এর সাহায্যে তৈরী আর অনলাইন গেমের ব্যাবস্থাপনা এমন যে আপনি যতগুলো গেম জিতবেন তার চেয়ে বেশি হারবেন আর বড় অংকের অর্থ ব্যবহার করে গেম খেললে তাতে হারার সম্ভাবনাই বেশি (উদাহরণস্বরূপ বলা চলে আপনি ১০ টি গেম খেললে বড়জোড় ৩ টি জিততে পারেন)।
অর্থাৎ দিন শেষে আপনি ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। আর ক্যাসিনো গেম এমন এক ধরনের খেলা যাতে একবার মজে গেলে সেখান থেকে বের হতে পারবেন না। প্রতি নিয়ত অ্যাপের নতুন নতুন অফার পেয়ে আপনি গেমটি বেশি করে খেলবেন, আর যত বেশি খেলবেন তত বেশি হারের সম্মুখীন হবেন। সহজে আর বিনা পরিশ্রমে ধনী হতে চাওয়া আপনি বুঝে উঠতে পাড়ার আগেই মারাত্মক অর্থনৈতিক সংকটে পড়ে যাবেন অথবা ঋনগ্রস্থ হয়ে পরবেন।
অনলাইন ক্যাসিনো গেমের আরো একটি ধরন রয়েছে যাতে গেম খেলতে আপনার কোন টাকার প্রয়োজন পরবে না; অ্যাপ ইন্সটল করলেই কিছু ফ্রি কয়েন পেয়ে যাবেন যা দিয়েই খেলা চালিয়ে যেতে পারবেন। আর খেলা যিতে পর্যাপ্ত কয়েন জমা করতে পারলেই তার বিনিময়ে অর্থ তুলে নিতে পারবেন। বিষয়টা শুনতেই অনেক লোভনীয় মনে হচ্ছে, তাই না? যাদের হাতে পর্যাপ্ত সময় রয়েছে আর গেম খেলতে পচ্ছন্দ করেন তারা এ ধরনের ক্যাসিনো গেমের অ্যাপ ব্যবহার করে থাকেন।
আর বিনা বিনিয়োগে গেম খেলেই অর্থ প্রাপ্তির সুযোগ কে ছাড়ে? আসলে বাস্তব চিত্র টা অন্যরকম, আমাদের চিন্তার ও বাইরে। অনলাইন ক্যাসিনো গেমের এ ধরনের অ্যাপগুলোতে প্রোগ্রামিং করা কোন খেলোয়াড় থাকে না, থাকে না তেমন কোন বিশেষ ব্যবস্থাপনা, তবে লুকানো থাকে ট্রোজান ভাইরাসের মত মারাত্মক সব ক্ষতিকর ম্যালওয়্যার ভাইরাস যার কিছু কিছু ধরন আপনার মোবাইলের সম্পুর্ণ নিয়ন্ত্রন নিতে সক্ষম। এবার নিশ্চয় আঁতকে উঠেছেন, সেটাই স্বাভাবিক।
সাধারণত অনলাইন ক্যাসিনো অ্যাপ ব্যবহার এর সময় তথা গেম খেলার সময় আপনি বিষয়টা টেরও পাবেন না কিন্তু আপনার মোবাইলে ম্যালওয়্যার ভাইরাস এর নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে আর ঝুঁকিতে পরবে আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য। এমনকি আপনার তথ্য চুরি করে সেটার অনৈতিক ব্যবহার করতে পারে অথবা আপনাকে ব্ল্যাকমেইল এর মাধ্যমে অর্থ হাতিয়েও নিতে পারে। কেউ হয়তো ভাবছেন টাকা আয়ের জন্য এমন একটা স্মার্টফোন ব্যবহার করবেন যাতে আপনার কোন তথ্যই থাকবে না, তাতেও ঝুঁকি রয়েছে অথবা ঝুঁকি না থাকলেও লাভ নেই। কারণ তারা আপনার তুলে নেওয়া একটি পয়সাও পরিশোধ করবে না উল্টো আপনার ব্যাংকিং তথ্য হাতিয়ে নিতে পারে যা আপনার জন্য ক্ষতিকারক।
সর্বশেষে এটাই জানাতে চাই যে, অনলাইন ক্যাসিনো গেম আপনার জন্য অত্যন্ত বিপদজনক। আর এ বিপদ থেকে বাচার একটিই উপায় সেটা হলো অনলাইন ক্যাসিনো গেম থেকে নিজেকে বিরত থাকা। আপনার সামনে যতই অনলাইন ক্যাসিনো গেম আসুক না কেন সেটাকে এড়িয়ে চলা। নিজে সতর্ক থাকুন অন্যকে সতর্ক করুন। স্মার্টফোনে অ্যাপ ইন্সটল এর পূর্বে জেনে বুঝে যাচাই করে নিন এবং আপনার ডিজিটাল তথ্য নিরাপদ রাখুন। আর পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অনুরোধ করবো অফলাইন ক্যাসিনোর মত অনলাইন ক্যাসিনো ব্যাবসার বিরুদ্ধে জরুরী ব্যবস্থা গ্রহণ এর জন্য।
ধন্যবাদ।