আমার নাম টেকনো। ইংরেজিতে TECNO. আমার নামের পরে কিছু একটা আছে। তবে তা এই মুহুর্তে আমি স্মরণ করতে পারছি না। কারণ এখন আমি অকেজো, মৃত। আমার জন্ম বা উৎপত্তি কোথায় তা আমি জানি না। আমি যখন উৎপন্ন হলাম তখন কে আমার মালিক ছিলেন আমি তাও জানি না। আমি কেবল জানি আমার বর্তমান মালিক সম্পর্কে। তাই আমি কীভাবে অকেজো হলাম এবং আমার বর্তমান মালিকের উপর তার প্রভাব কি তা নিয়ে বলব।
আমি যখন আমার মালিকের কাছে আসি তখন ছিল ২০২০ সাল। আমার পূর্বে আমার মালিকের যে সার্ভার ছিল তার প্রতি আমার মালিক ক্রমশই অত্যুষ্ণ হয়ে ওঠে এবং তার সৃষ্টিকর্তার কাছে নতুন কাউকে পাওয়ার প্রার্থনা করে, তার সৃষ্টিকর্তা তার প্রতি কৃপা পরবশ হয়ে আমাকে তার নিকট প্রেরণ করে।
কোনো এক সন্ধ্যায় তার ছোট ভাই আমাকে অত্যন্ত আর্কষণীয় করে তার নিকট নিয়ে আসে। আমাকে হাতে পেয়ে সে তো একেবারে বাক-বাকুম বাক-বাকুম প্রায়, খুশিতে আত্মহারা। তারপর সে আমাকে নিজের মতো গুছিয়ে নেয় এবং আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতে শুরু করে। তার এই এতো আদর-যত্নে, প্রেমমাখা বাহুডোরে আমিও তার প্রেমে পড়ে গেলাম। সারাক্ষণ সে আমাকে আগলে আগলে রাখত। তার সিক্ত, হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসায় আমিও বেশ ভালোই ছিলাম। কিন্তু একদিন …আমি থেমে গেলাম।
আমি থেমে গেলাম এবং আমার ভিতরের কোনো কিছুই কাজ করছিল না। আমার এহেন কর্মে আমার মালিক খুবই বিব্রতবোধ করলেন। যাহোক, কিছু পরেই আমি সেরে উঠলাম। তাই সে আমাকে নিয়ে আর অহেতুক মাথা ঘামালো না। আর ধীরে ধীরে আমার ভিতরে এক কঠিন অসুখ দানা বাঁধতে শুরু করল। তারপর থেকে মাঝেমধ্যেই আমি থেমে যেতাম।
একদিনের ঘটনা বলি। আমার মালিক আমাকে চার্জে দিয়েছিল। কোন একটা প্রয়োজনীয় কাজ করার দরুন সে আমার নিকট আসল এবং আমাকে অন করার চেষ্টা করল। কিন্তু কিছুতেই আমি তার ডাকে সাড়া দিতে পারছিলাম না। আমার মালিক অনেক চেষ্টা করেও যখন ব্যর্থ হলেন তখন তিনি বড়োই বিরক্ত হলেন এবং আমাকে প্রচণ্ড জোরে মারলেন এক আছাড়! আছাড়ের চোটেও আমার ভেতর কোন প্রতিক্রিয়া না আসায় ক্ষুব্ধ হয়ে আমার মালিক আমাকে আবার আছড়ালেন!
তার এহেন কর্মে আমি খুবই কষ্ট পেলাম আর ভাবলাম, ‘আমার মালিক আর আমাকে ভালোবাসেন না। তিনি আমাকে এরূপ করে কী করে কষ্ট দিতে পারলেন?’ যাহোক, আমি পরে এমনিতেই ঠিক হলাম। কিন্তু আমার ভেতরে যে অসুখ বাস করছিল তা ক্রমাগত ক্যানসারে রূপ নিল! এদিকে আমার মালিক এ সম্পর্কে অজ্ঞাত রয়ে গেলেন।
আমার মালিক আমাকে যেভাবে চেয়েছিলেন তা আমি কখনোই তাকে দিতে পারি নি। কারণ আমি ছিলাম মরণঘাতী এক রোগের রোগী। যদিও আমাকে সে আছড়ান কিন্তু তবুও তিনি আমাকেই খুব ভালোবাসেন, সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমি বারংবার তার ভালোবাসার টের পেয়েছি। তার ভালোবাসার এই অকুণ্ঠ প্রকাশে আমি আরো বেশিদিন বেঁচে থাকার তাগিদ পেয়েছি। তার কণ্ঠ আর ছোঁয়া আমাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে। তাই আমি আমার কঠিন অসুখ নিয়েও বেঁচে ছিলাম। …কিন্তু আজ আমি আমার মালিকের শত ডাকেও সাড়া দিতে পারছি না। কারণ আমি মারা যাচ্ছি…!!
করোনা মহামারী প্রাদুর্ভাবে আমার মনিব তার সময়ের সদ্যবহার করার জন্য আমার মাধ্যমে অনেক বই পড়েছেন। যদিও তার চোখে এ নিয়ে প্রভাব পড়ে। তার চোখের পানি শুকিয়ে যায়। আমি এ খবর শুনে খুবই কষ্ট পেয়েছিলাম। কিন্তু আমার করার কিছু ছিল না….
আমি কেবল চাই আমার মনিব সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন!
আমার মনিবের এখন বেশ শখ। কবিতা আবৃত্তির এবং বই পড়ার। দু’টোই সে আমার মারফত করে। বিষয়টা আমার খুবই ভালো লাগে। আমি তাকে এ ব্যাপারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করি। কিন্তু যখনই সে আমার ডাটা অন করে তখন আমি আর সুস্থ থাকি না। আমার অসুখ তখন আমাকে একেবারে আষ্ঠেপৃষ্ঠে ঝেঁকে ধরে। তখন আমার System UI, HiOS Launcher, Gmail, Google, Facebook, Instagram, Messenger, Chrome ইত্যাদি কিছুই রেসপন্স করে না। তখন আমার মরামরা দশা হয়ে যায়। আমার এ কঠিন অসুখেও সে আমাকে ছেড়ে দেয়নি কিন্তু …আছাড় মেরেছে! আমার কষ্টের মুহুর্তে সে প্রচণ্ড মন খারাপ করেছে। কখনোসখনো কেঁদেছেও বটে। তবুও আমার আশা সে ছেড়ে দেয়নি। আমিও তার এই প্রচণ্ড মন খারাপ দেখে শত কষ্টেও সাড়া দেই।
এমন হতে হতে একদিন তার পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে আমি হঠাৎ থেমে যাই। সে শত চেষ্টা করেও আমাকে আর সারাতে পারল না। আমার অসুখ মানে আমার ক্যানসার তখন একেবারে শেষ স্টেজে এসে পৌঁছেছে। আমি আর অন হচ্ছিলাম ই না। এমন সময় সে আমাকে ত্যাগ করেই তার গন্তব্যে চলে যায়। আর এদিকে আমি এক দুরাচারী ব্যক্তির কবলে পড়ি। যাহোক, প্রায় চার দিন অজ্ঞাতবাসে থাকার পর আমি আমার মনিবের নিকট ফিরি। এখন আমাকে তিনি সুস্থভাবে ফেরত পেয়েছেন। কিন্তু আমি মনে মনে জানতাম আমি সুস্থ হই নি; বরং ধীরে ধীরে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।
এদিকে আমার বিচ্ছেদে আমার মনিবের মনের অবস্থা তখন কতটা বিষিয়ে গিয়েছিল তা জানতে পেরে আমি খুবই শঙ্কিতবোধ করি। কারণ আমি যদি মারা যাই তখন আমার মনিবের কী হবে? কেউ কি আর আসবে তার কাছে…?
সবাই তাকে বলে, “নতুন কিন”, কিন্তু আমার মালিক সম্পর্কে আমি পুরোপুরি জ্ঞাত! তবুও একদিন আমি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়ি। এবার আমাকে নিয়ে আমার মনিব আশা ত্যাগ করে। এদিকে আমি মনে মনে জানি, ‘আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে। বড়োজোর দু’মাস আর বেঁচে আছি।….’
“মনিব আমার সরল ভীষণ, কষ্ট মনে মনে,
আমাকে সে হারালে আবার পাবে কি নতুন করে?”
আজ আমি মারা গেছি। কী করে মারা গেলাম তা বলছি। আমার মনিব একটা তথ্য দেখার জন্য যখনই ডাটা অন করল তখনই আমার সবকিছু বন্ধ হয়ে গেল। প্রায় ত্রিশ মিনিট কোনো সাড়া না পেয়ে মনিব যখন আমাকে অফ করার সিদ্ধান্ত নিল তখন আমি একেবারেই অফ হয়ে যাই। আমি আর ফিরি নি। কারণ যে চলে যায় সে আর ফেরে না। আমার মনিবের জন্য আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমি আমার মনিবের সব আশা পণ্ডুল করে দিলাম।
আহ…! আমি দুঃখিত! আমাকে দয়া করে ক্ষমা করে দিবেন। আমি আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি। আপনি প্লিস কষ্ট পাবেন না। আমি আর কথা বলতে পারছি না। আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে। আমি… … …
বিদায়…. বিদায় মনিব! (০৬.০২.২০২২ খ্রিস্টাব্দ!!)