নাম, ফোন নাম্বার, জায়গার নাম মনে রাখতে পারেন না? বলা হয়, বয়স বাড়ার সাথে সাথে যুক্তি তৈরির ক্ষমতা, দ্রুত জবাব তৈরির মতো মানসিক ক্ষমতা কমতে থাকে কিন্তু এই ধরনের পরিস্থিতির মুখে পড়লেও নিরাশ হওয়ার কিছু নেই।
কিছু সহজ কৌশল অবলম্বন করে আপানিও আপনার স্মরণশক্তি বৃদ্ধি করতে পারেন।
১. মানসিক চাপ কমিয়ে বিষন্নতা দূর করুনঃ—
কর্মব্যস্ত জীবনে দুশ্চিন্তা আমাদের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। আমরা যে মানসিক চাপের মধ্যে আছি, তা আমরা নিজেরাই অনেক সময় বুঝতে পারছি না। দীর্ঘদিন ধরে মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে হতে পারে মারাত্মক সব স্বাস্থ্য সমস্যা।
মানসিক চাপের মধ্যে বিষন্নতা সবচেয়ে মস্তিষ্কের ক্ষতি করে। বিষন্নতা আপনার মনোযোগ দেয়ার ক্ষমতা কমিয়ে ফেলে এবং রক্তে করটিসলের লেভেল বাড়িয়ে দেয়। এই মানসিক চাপের কারণে কেবল মনোজগতের পরিবর্তনই ঘটে না বরং উল্লেখযোগ্য বেশ কিছু শারীরিক লক্ষণও দেখা দেয়। মানসিক চাপের কারণে মস্তিষ্কে কিছু রাসায়নিক বস্তু বা নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্য নষ্ট হয়, অন্তঃক্ষরা বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে নিঃসরিত হরমোনের ঘাটতি-বাড়তি হয় এবং এসবের প্রভাবে হৃদ্যন্ত্রের সংকোচন-প্রসারণের হার পরিবর্তিত হয়, নিশ্বাস-প্রশ্বাস হয় অস্বাভাবিক।করটিসেলের লেভেল বেড়ে গেলে
মস্তিষ্কের কার্যকারিতা কমে যায়।
২। নিয়মিত ব্যায়াম করুনঃ—
ব্যায়াম শুধু আপনার শরীরকেই সচল করে না, এটি আপনার মস্তিষ্ককেও সচল রাখে। স্থূলতা এবং অতিরিক্ত ওজন আপনার ব্রেইনের জন্যও ক্ষতিকর। নিয়মিত ব্যায়াম না করলে কিংবা শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলো সচল না থাকলে রক্তবাহী নালীগুলো চর্বি জমে।
ফলে স্বাভাবিক রক্তচলাচল ব্যহত হয়। মস্তিষ্কে রক্তের মাধ্যমে অক্সিজেন সরবারাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে মস্তিষ্কের কোষগুলোও। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন, সচল রাখুন আপনার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো। এ বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের ডিন এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়াম করা জরুরি। তবে ব্যায়ামের সময় নিয়ে অনেকেই পড়েন বিপত্তিতে। কেউ হয়তো ইচ্ছা থাকলেও সময় করে উঠতে পারেন না। আবার যখন সময় পান তখন ব্যায়াম করা ঠিক হবে কি না বুঝে উঠতে পারেন না।
৩। গান শুনুনঃ—
গবেষকরা দেখিয়েছেন কিছু সংগীত স্মৃতিশক্তি বাড়াতে উপকারী। ব্যাপারটা এই রকম- কোন ঘটনার সময় আপনি যদি কোন গান শুনেন তবে পুনরায় সেই গান শোনার সময় সেই ঘটনার আবহের স্মৃতি আপনার মস্তিষ্কে জেগে উঠবে।বেশ কিছু গবেষণাতে এও দেখা গেছে যে গান শোনার অভ্যাস থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়তে শুরু করে। ফলে নানাবিধ সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়।
গান হল সেই ওষুধ, যা কানের মধ্যে দিয়ে শরীরের অন্দরে প্রবেশ করা মাত্র ঘুম এসে যায়। তাই তো রাতের বেলা ঘুম আসতে না চাইলে ৩০-৪৫ মিনিট হালকা বিটের যে কোনও গান একটু শুনে নেবেন। দেখবেন অনিদ্রা লেজ তুলে পালাবে।
৪। অন্যকে শেখানঃ—
নিজে যা শিখতে চাচ্ছেন। তা একবার শিখে নিয়ে অন্যকে শেখান। আরজনকে শেখাতে গিয়ে দেখবেন আপনার জানার ঘাটতিগুলো ধরতে পারছেন। আবার চর্চাও হবে আরেক জনকে শেখানোর মাধ্যমে। নতুন কিছু বিষয়ে আপনার কোন চিন্তা আরেকজনের সাথে শেয়ারও করতে পারেন। তাহলে আপনার স্মৃতিতে তা স্থায়ী হবে।একটি জিনিস শেখার সবচেয়ে ভাল উপায় হচ্ছে সেটি অন্য কাউকে শেখানো! নিজে পড়লে কেবল পরীক্ষায় পাসের বিষয়টি মাথায় থাকে, ইচ্ছা করে অনেককিছু এড়িয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু অন্য কাউকে শেখানোর জন্য পড়তে গেলে সম্পূর্ণ আলাদা হিসেব- খুঁটিনাটি অনেক কিছু জানতে হয় তা না হলে তোমাকে প্রশ্ন করে একদম ঝাঁঝরা করে দেবে মানুষটি!আমি একবার পরীক্ষার আগের রাতে আমার এক বন্ধুকে একটি টপিক পড়িয়েছিলাম, গতকাল দুপুরে আমি কি দিয়ে ভাত খেয়েছি মনে নেই কিন্তু পাঁচ বছর আগে বন্ধুকে পড়ানো সেই টপিকটি নিয়ে এখনও আমি চোখ বুঁজে বলে দিতে পারি! কাউকে শেখাতে গেলে জিনিসটি এত ভালোভাবে জানা হয়ে যায় যে সেটি ভুলবার কোন সুযোগ আর থাকে না!
৫। পর্যাপ্ত ঘুমঃ—
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৮ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। একটা চমৎকার ঘুম আপনার মস্তিষ্ককে অধিক কার্যকরী করে তোলে। তাই নিয়মিত পর্যাপ্ত ঘুমের মাধ্যমে স্মৃতিশক্তি বাড়াতে পারেন।জেগে থাকা যে-রকম প্রয়োজন, ঘুমও সে-রকম প্রয়োজন। আমাদের অনেকের সমস্যা হলো আমরা জেগেও থাকি না, আবার ঘুমাইও না। শুধু ঝিমাই। গভীর ঘুম না হলে শরীর কখনো ঝরঝরে হয় না। অর্থাৎ ভালো ঘুমটা অত্যাবশ্যক।
পবিত্র কোরআনের সূরা ফোরকানে ৪৭ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনি রাতকে করেছেন তোমাদের জন্যে আবরণস্বরূপ। বিশ্রামের জন্যে দিয়েছেন ঘুম। আর প্রতিটি দিনকে করেছেন প্রাণচাঞ্চল্যের প্রতীক। ‘ভগবত গীতায় বলা হয়েছে, ‘অতিভোজী, নিতান্ত অনাহারী, অতি ঘুম বিলাসী, একেবারেই কম ঘুমায় তারা কখনও ধ্যানে সফল হয় না। যিনি নিয়ম অনুযায়ী আহার করেন, কাজ করেন, বিশ্রাম নেন, যার নিদ্রা ও জাগরণ নিয়মের ছন্দে ছন্দায়িত তিনি ধ্যানে সফল হন। তার দুঃখের বিনাশ ঘটে। বিচরণ করেন আত্মার আনন্দলোকে [ধ্যানযোগ: ১৬-১৭] ঘুমের শারীরিক ও মানসিক প্রভাব : যার ঘুম ভালো হয়, তার অসুখ-বিসুখ হওয়ার সম্ভাবনা কম থাকে। আইরিশ একটি প্রবাদ হলো “A good laugh and deep sleep is the best cures in the doctor’s book” অর্থাৎ ডাক্তারদের ভাষ্য অনুযায়ী, প্রাণবন্ত হাসি ও গভীর ঘুম সবচেয়ে ভালো রোগ নিরাময়কারী।