অনেক অনেক আগে এক গহীন জঙ্গলে এক খরগোশ বাস করতো। একটা ছোট কচ্ছপও বাস করতো সেই জঙ্গলে।খরগোশ স্বভাবতই খুব জোরে দৌড়াতে পারে।আর কচ্ছপ ছোট ধীর গতিসম্পন্ন একটি প্রাণী। সেই খরগোশটি তার দ্রুত গতির জন্য নিজেকে খুব মহান মনে করতো।সে তার দ্রুত গতির জন্য নিজেকে খুব ই গর্বিত মনে করতো। আর সে সব সময় কচ্ছপকে তার ধীর গতির জন্য তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতো। এতে কচ্ছপ খুব দুঃখ পেলেও তাকে কিছু বলতো না কারণ সে জানে সে যে খুব ধীর আর খরগোশ খুব দ্রুতগতিসম্পন্ন প্রাণী। এভাবে খরগোশ সব সময় কচ্ছপকে রাগাতো তার ধীরগতির জন্য আর নিজেকে মহান প্রমাণ করতে চেষ্টা করতো।একদিন খরগোশ কচ্ছপকে বলল, “আমার যতগুলো পা তোমারও ততগুলোই পা। কিন্তু আমি নিশ্চিত আমি যত দ্রুত দৌড়াতে পারি তুমি তত দ্রুত দৌড়াতে পারো না।হয়তো তুমি দৌড়াতেই পারো না। তোমার যে ছোট ছোট পা তা দিয়ে তুমি দৌড়ানো তো দূরে থাক ভালো করে হাটতেই পারো না।” এতে কচ্ছপ খুব ই রাগান্বিত হলো এবং বলল,”তুমি খুব দ্রুত দৌড়াতে পারো এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই কিন্তু আমার মনে হয় তুমি যত দ্রুত দৌড়াতে পারো তার চেয়েও দ্রুত কথা বলতে পারো।”এতে খরগোশ কিছুটা রাগ করলো। অতঃপর কচ্ছপ খরগোশ কে তার সাথে একটা দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে বলল।খরগোশ খুশি মনে তাতে রাজি হলো এবং বলল,”তুমি নিজের সাথে সাথে আমার সময়ও নষ্ট করতে যাচ্ছ।আমার গতি সম্পর্কে তোমার খুব ভালো ধারণা আছে।তুমি কিছুতেই আমার সাথে পেয়ে উঠবে না।” তখন কচ্ছপ বলল, “তোমার গতি সম্পর্কে ধারণা আমার আছে কিন্তু এমন কিছুও আছে যেটা আমি জানি কিন্তু তোমার সে বিষয়ে কোনো ধারণাই নেই।আমি সেটাই প্রতিযোগিতায় প্রয়োগ করবো। ” এতে খরগোশ অনেক হাসলো এবং বলল, “তুমি সত্তিই আমায় অনেক হাসালে কিন্তু তুমি একটু কষ্ট করে বলবে কি সেটা কি?” তখন কচ্ছপটি বলল,” এটা একটা গোপন কথা তুমি এটা প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার পর ই জানতে পারবে।”
তারা উভয়ে ই একজন শেয়ালের কাছে গেলো এবং তাকে অনুরোধ করলো তাদের প্রতিযোগিতার বিচারক হওয়ার জন্য। শেয়াল খুশি মনে রাজি হলো। বনের সকল প্রাণিদের সেই প্রতিযোগিতায় আমন্ত্রণ জানানো হলো। অবশেষে সেই দিনটা এলো। বনের সকল প্রাণিরা সেখানে উপস্থিত হলো। কচ্ছপ খরগোশ আর শেয়াল ও উপস্থিত হলো। গন্তব্যসীমাও নির্ধারণ করা হলো। শেয়াল দুজনের ই মেনে চলার জন্য কিছু নিয়ম পড়ে শোনালেন।অতঃপর সেই অসমান দৌড় প্রতিযোগিতা শুরু হলো। খরগোশ শুরু থেকে ই খুব দ্রুত গতিতে দৌড়াতে শুরু করলো এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই অর্ধেক রাস্তা পার করে ফেললো। আর কচ্ছপ তার ছোট ছোট পায়ে ছোট ছোট কদমে দৌড়াতে লাগলো। অর্ধেক রাস্তা পৌঁছে খরগোশ থামলো এবং পিছনে ফিরে দেখলো কচ্ছপের কোনো খবরই নেই।তখন সে খুব হাসলো এবং নিজে ই নিজেকে বলল, “আমি সত্যি ই খুব বোকা।এই গরমে ওই ধীর গতিসম্পন্ন কচ্ছপের সাথে এতো জোরে দৌড়ানোর কোনো মানে ই হয় না আমি হেটে হেটেও জিতে যাবো।” তখন সে ভাবলো সে সেখানে ই কচ্ছপের জন্য অপেক্ষা করবে। যখন কচ্ছপ তার কিছুটা নিকটে আসবে তখন সে আবার দৌড় শুরু করবে।সে রাস্তার পাশে একটা গাছের নিচে বসে বিশ্রাম নিতে লাগলো এবং একটা সময় ঘুমিয়ে পড়লো। এদিকে কচ্ছপ ধীর পায়ে দৌড়াতে দৌড়াতে সেই ঘুমন্ত খরগোশের নিকটে এলো এবং তাকে অতিক্রম করে চলে গেলো। অনেক সময় পর খরগোশের ঘুম ভাঙলো এবং সে দেখলো যে কচ্ছপকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। তখন সে বুঝতে পারলো যে সে অনেক দেরী করে ফেলেছে।তখন সে প্রাণপণে ছুটতে লাগলো কিন্তু কচ্ছপ ততক্ষণে সমাপ্তি রেখার নিকটে পৌছে গেছে তার আর কিছু ই করার ছিলো না।সে হেরে গেলো। তখন কচ্ছপ খুব ই খুশি হলো এবং খরগোশ খুব ই লজ্জিত বোধ করলো তার অহংকারের জন্য।
গল্পটি আমাদের এই শিক্ষা দিলো যে নিজেকে নিয়ে কখনো অতি৷ অহংকার করা উচিত নয়৷ বরং অন্যদের সম্মান করা উচিত।
সময়ানুবর্তিতা, (সময়ের মূল্য), ফাতেমা জান্নাত
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম সময়ানুবর্তিতা সময় তিনটা বর্ণের সমন্বয়ে ছোট্ট একটা শব্দ। কিন্তু মূল্য ও তাৎপযের্র দিক থেকে সত্য বলতে এটি...