পৃথিবীর অনেক দেশেই একটি উল্লেখযোগ্য অর্থকরী ফসল হিসেবে পেঁপের চাষ হয়।বর্তমানে বাংলাদেশেও একটি অর্থকরী ফসল হিসেবে পেঁপের চাষ শুরু হয়েছে।পেঁপের রোগ বলাই অপেক্ষা কৃত কম হলেও কখনো কখনো ক্ষেতের পুরো ফসলঐ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। পেঁপের সবচেয়ে ক্ষতিকারক রোগ হলো ভাইরাস ঘটিত রিংস্পট রোগ।বাংলাদেশ সহ ভরত,চীন,থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইনে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি।
রোগের কারন : একটি ভাইরাস দ্বারা পেঁপের রিংস্পট রোগ হয়।ভাইরাস টি সাধারণত পাপায়য়া
রিংস্পট ভাইরাস নাম পরিচিত।এটি ৭৬০-৮০০ নেনোমিটার লম্বা এবং এর ব্যাস ১২ নেনোমিটার।পেঁপে ছাড়াও ভাইরাস কুমড়া জাতীয় উদ্ভিদে মজাইক রোগের সৃষ্টি করে।ক্যাপসিডের বাইরে এর কোন আবরণ নেই।এটি একটি
আর.এন.এ ভাইরাস।
(পি.আর.এস.ভি-প) এর দুটি প্রকরণের মধ্যে
( পি.আর.এস.ভি-পি )দিয়ে পেঁপের রিংস্পট রোগ হয়।
সংক্রমণ: জাব পোকা ও সাদা মাছি দ্বারা পেঁপে গাছে পেঁপের রিংস্পট রোগের ভাইরাস সংক্রমিত হয়।কোন আক্রান্ত উদ্ভিদ থেকে জাব পোক খাদ্য গ্রহণ করলে ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে ভাইরাস পোকার দেহে চলে আসে এবং সাথে সাথে কোন সুস্থ উদ্ভিদে বসলে উহা ভাইরাস দ্বারা সংক্রমিত হয়।
পোকার দেহে ভাইরাস সংখ্যা বৃদ্ধি করেনা।যদি পেঁপে বাগানের গাছগুলো পোকার খুব কাছা কাছি অবস্থান করে এবং বাগানে জাব পোকার সংখ্যা খুব বেশী থাকে তাহলে এ রোগ খুব দ্রুত ছড়ায় এবং ৪ মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ বাগান এ রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়।গাছ ছাঁটার সময় যান্ত্রিক ভাবে এ রোগ বিস্তার ঘটাতে পারে।
রোগের লক্ষণ :
১) উদ্ভিদ জন্মের সাথে সাথে এ রোগের সংক্রমণ ঘটতে পারে । সংক্রমণের ৩০-৪০ দিন এর মধ্যেই প্রথম রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় ।
2) ক্লোরপ্লাস্ট নষ্ট হয়ে পাতায় হলদে-সবুজ মোজাইকের মতো দাগ পড়ে ।
৩) কান্ড পাতার বোঁটা ও ফলে তৈলাক্ত বা পানি সিক্ত গাঢ় সবুজ দাগ সৃষ্টি হয়।
৪) অপেক্ষাকৃতো কম বয়সের পাতায়ই রোগের লক্ষণ প্রথম প্রকাশ পায় ।
৫) আক্রমণ বেশী হলে পাতায় বহুল পরিমানে মোজায়িক সৃষ্টি হয়,পাতা আকৃতিতে ছোট ও কুকড়ে যায়,গাছের মাথায় বিকৃত আকৃতির ক্ষুদ্রাকায় কিছু পাতা লক্ষ্য করা যায়।অন্যান্য পাতা ঝরে পড়ে।কখনো কখনো পাতার কেবল শিরাগুলো থাকে।
৬) আক্রান্ত ফলের উপর পানি ভেজা গোলাকার দাগ পড়ে এবং দাগের মধ্যবর্তী স্থান শক্ত হয়ে যায়।
৭) পেঁপে হলুদ হয়ে যায়,রিংস্পট লক্ষণ প্রকাশিত হয়,আকর ছোট হয়ে যায়।অনেক সময় পুষ্ট হবার আগেই ঝরে যায় ।
৮) পেঁপের মিষ্টতা ও পেপেইন হ্রাস পায় ।
৯) ফলন শতকরা ৯০ ভাগ পর্যন্ত হ্রাস পেতে পারে ।
নিয়ন্ত্রণ :
১)জমিতে রোগ লক্ষণ প্রকাশ পেলে সাথে সাথেই রোগাক্রান্ত গাছ উঠিয়ে মাটি চাপা দিতে হবে অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
২)জাল দিয়ে পুরো জমি ঢেকে ফেলতে হবে যেন এফিড নামক পতঙ্গ দ্বারা নতুন গাছ আক্রান্ত না হতে পারে ।
৩)এফিড নামক পতঙ্গ নিধনের জন্য পেস্টিসাইড স্প্রে ( রগর বা রক্সিয়ন বা পার ফেকথিয়ন ৪০ ইসি আথবা মেটাসিসটক্স ২৫ ইসি কীটনশক ২ মিলিমিটার/ ১ মিটার পানিতে মিশিয়ে করা যেতে পারে।
৪)চারা লাগানোর প্রথম থেকেই নিয়মিত পেস্টিসাইড স্প্রে করলে এফিড পতঙ্গ দ্বারা রোগ ছড়ায় না।
5)রোগাক্রান্ত জমিতে পেঁপে গাছের প্রুনিং (পাতা কাটা , ছাঁটা ইত্যাদি ) বন্ধ রাখতে হবে, কারণ কাটা – ছেড়া স্থান দিয়ে রোগাক্রম ঘটে থাকে।
6)বাংলাদেশি বিজ্ঞানি ড. মকসুদুল আলম কতৃক জিন প্রযুক্তির মাধ্যমে আবিষ্কৃত নতুন জাতের ক্রস প্রোটেকশণ করে আবাদ করলে রোগমুক্ত ফল উৎপাদন করা সম্ভব ।এখানে উল্লেখ্য যে, ড. মাকসুদুল আলম আমেরিকার হাওয়াই বিশ্ব বিদ্যালয়ে পেঁপের জিনরহস্য উন্মোচন করেছেন।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা:
১।যে এলাকাতে রোগ ছড়িয়ে পড়েছে সে এলাকায় পেঁপের চাষ বন্ধ করে দিতে হবে এবং দূরে নতুন এলাকায় রোগমুক্ত চারা দিয়ে চাষ শুরু করতে হবে।
2।ক্রস-প্রোটেকশন পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত চারা গাছ থেকে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।মৃদু প্রকৃতির পি.আর.এস.ভি জীবাণুকে প্রাণীদেহে ভাইরাল টিকাদানের মত পোষক উদ্ভিদে প্রবেশ করিয়ে গাছকে ভাইরাস প্রতিরোধী করা ।
৩।পি.আর.এস.বি সাধারণত বীজের মাধ্যমে স্থানন্তরিত হয় না,তবে প্রকটভাবে আক্রান্ত পেঁপের
বীজ ব্যবহার করলে ইনোকুলামের উৎস হিসেবে কাজ করতে পারে।কাজেই ঐ ধরনের ব্যবহার না করা।
৪।ট্রান্সজেনিক জাত ব্যবহার সবচেয়ে নিরাপদ।জিনগান পদ্ধতি ব্যবহার করে পি.আর.এস.ভি.এস
জিন ভ্রূণ টিস্যুতে সংযুক্ত করে নতুন ট্রান্সজেনিক
জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে ১৯৯৮ সালে।ট্রান্সজেনিক জাত দুটি হলো পি.আর.এস.ভি মুক্ত( রেইনবো) ও (সানআপ)।এই ট্রান্সজেনিক জাত পি.আর.এস.ভি দ্বারা আক্রান্ত হয় না।