প্রজনন স্বাস্থ্যবিধি ও গর্ভকালীন পালনীয় স্বাস্থ্যসেবা

মানুষের সামগ্রিক স্বাস্থ্যের একটি বিশেষ অংশ হচ্ছে প্রজনন স্বাস্থ্য। প্রজনন স্বাস্থ্য বলতে শুধু প্রজনন তন্ত্রের কাজ এবং প্রজনন প্রক্রিয়ার সাথে সম্পর্কিত রোগ বা অসুস্থতার অনুপস্থিতিকে বোঝায় না। এটা শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক কল্যাণকর এক সুস্থ অবস্থার মধ্য দিয়ে প্রজনন প্রক্রিয়া সম্পাদনের একটি অবস্থা। আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের নিরাপদ জন্ম ও সুস্বাস্থ্য বর্তমান প্রজন্মের সার্বিক সুস্থতা প্রজনন স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে।

প্রজনন স্বাস্থ্যের অন্তর্গত বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ উপাদান :

১. বয়ঃসন্ধিকালে প্রজনন স্বাস্থ্যবিধি : বয়ঃসন্ধিকালে প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

২. উপযুক্ত বয়সে গর্ভধারণ : মেয়েদের ২০ বছর বয়সের আগে গর্ভধারণ করা যাবে না। উপযুক্ত বয়সে গর্ভধারণ করলে মা ও শিশু উভয়ই সুস্থ থাকে।

৩. নিরাপদ মাতৃত্ব : নিরাপদ মাতৃত্ব বলতে বোঝায় গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসবোত্তর সময়ে মায়ের সুস্থতা বজায় রাখা। বাংলাদেশে মা ও শিশু মৃত্যুর হার অনেক বেশি। এর অন্যতম কারণ গর্ভকালীন সময়ে মায়ের যত্ন হয় না। তিনি পর্যাপ্ত খাদ্য, চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সেবা পান না। তাছাড়া অপরিণত বয়সে বিয়ে ও গর্ভধারনের ফলে মা ও শিশুর অসুস্থতাও ঘটে।

৪. শিশুর জন্য পূর্ব যত্ন : মায়ের গর্ভে সন্তান আসার পর পুষ্টিকর সমৃদ্ধ খাদ্য, চিকিৎসা, বিশ্রাম, ঘুৃম, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন না করলে নানারকম জটিলতার সৃষ্টি হয়।

৫. নবজাতকের পরিচর্যা : জন্মের পর থেকে ২৮ দিন বয়স পর্যন্ত শিশুকে নবজাতক বলা হয়। জন্মের পর পরই শিশুকে শালদুধ খাওয়ানো, টিকা প্রদান প্রভৃতি পরিচর্যা মূলক সেবা শিশুর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৬. মা ও শিশুর পুষ্টি : আমাদের দেশে অধিকাংশ মা ও শিশু অপুষ্টিতে ভোগে। গর্ভবতী মা ও প্রসূতি মা অপুষ্টিতে ভোগেন বলেই শিশু অপুষ্টির শিকার হয়। ঘন ঘন গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব মা ও শিশুর অপুষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ।                                                                                      ৭. প্রজনন তন্ত্রের বিভিন্ন রোগের সেবা ও রোগ প্রতিরোধ : এ সমস্ত রোগের মধ্যে রয়েছে সংক্রামক রোগ, যৌনরোগ, প্রজনন অঙ্গে ক্যান্সার সহ সব রকম রোগ। এসব রোগের সেবা প্রদানকারী সংস্থার সাথে যোগাযোগ রেখে তাদের কাছ থেকে প্রয়োজন মতো সেবা গ্রহন করতে হবে।

গর্ভকালীন পালনীয় স্বাস্থ্যসেবা : গর্ভধারন হচ্ছে শরীরের একটি বিশেষ পরিবর্তন। সন্তান গর্ভে এলেই শুধু মায়ের শরীরের এই বিশেষ পরিবর্তন ঘটে। গর্ভধারণের প্রথম কয়েক মাস মেয়েদের শরীরে কিছু কিছু অস্বস্তিকর লক্ষন দেখা যায়। যেমন – ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া, বমি বমি ভাব বা বমি হওয়া, মাথা ঘোরা, বারবার প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি। পরিণত বয়সে গর্ভধারণ করলে শারীরিক ও মানসিক তেমন কোনো জটিলতা দেখা যায় না। গর্ভকালীন পালনীয় স্বাস্থ্যবিধি ও সেবা হচ্ছে –

১. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা।

২. নিয়মিত গোসল করা।

৩. পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহন, বিশ্রাম ও ঘুম।

৪. গর্ভধারনের প্রথম থেকেই চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকা।

৫. গর্ভকালীন সমস্যা মোকাবেলার জন্য নিকটস্থ স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রাখা।

৬. প্রজনন তন্ত্রের যে কোনো সংক্রমন থেকে নিজেকে রক্ষা করা।

৭. ধর্মীয় ও সামাজিক অনুশাসন মেনে চলা। এজন্য পড়াশোনা সহ বিভিন্ন পারিবারিক ও সামাজিক কাজে নিজেকে জড়িত রাখা ইত্যাদি।

Related Posts

12 Comments

মন্তব্য করুন