Valentine’s Day বা বিশ্ব ভালবাসা দিবস উপলক্ষে দুটি কথা-
‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’- এর ইতিহাস না জেনেও যদি আমরা আমাদের আর্থ-সামাজিক (Socio-economic) ও সামাজিক সাংস্কৃতিক (Socio-cultural) প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে দু-চার কথা বলি তাহলে বোধহয় বিশেষ অসুবিধা নেই। আমি এ বিষয়ে বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক ফ্রান্সিস বেকনের (Francis Bacon) শরণাপন্ন হচ্ছি।
প্রেম বা ভালবাসা নিয়ে ফ্রান্সিস বেকনের ‘Of Love’ নামে যে কালোত্তীর্ণ প্রবন্ধ রয়েছে তার অনেক বাক্যই উদ্ধৃতিযোগ্য এবং অনস্বীকার্য।
প্রবন্ধটির আসল কথা এর শেষবাক্যে দারুণভাবে বিবৃত করেছেন। কথাটি হল- Nuptial love maketh mankind; friendly love perfecteth it; but wanton love corrupteth, and embaseth it অর্থাৎ বিবাহিত জীবনের ভালবাসা মানবজাতির বিস্তার করে, বন্ধুত্বপূর্ণ ভালবাসা মানুষকে সত্যিকার মানুষরূপে গড়ে তোলে, কিন্তু কামসর্বস্ব বা শরীরসর্বস্ব ভালবাসা মানুষকে কলুষিত ও অধঃপতিত করে।
সারা প্রবন্ধ জুড়ে তিনি বিবাহপূর্ব প্রেম বা বিবাহপরবর্তী পরকীয়া প্রেমকে ভয়ঙ্কর ও বিপর্যয়কারী হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। বিবাহপূর্ব প্রেমের অনিবার্যতাকে অস্বীকার বা বাতিল করতে না পেরে তিনি বলেছেন- প্রেমাবেগের তীব্রতা যেন ক্যারিয়ার বা জীবনের মহৎ উদ্দেশ্যকে চাপা না দিতে পারে তার ব্যাপারে সজাগ ও সচেতন থাকতে হবে।
তাঁর একটি বুদ্ধিদীপ্ত ও উদ্ধৃতিযোগ্য মন্তব্য হচ্ছে- It is impossible to love and to be wise অর্থাৎ একইসাথে প্রেম করা ও জ্ঞানী হওয়া অসম্ভব।
ভালবাসা নিঃসন্দেহে মানুষের প্রধান ও প্রবল আবেগগুলির একটি। অতিরিক্ত রাগ যেমন একজন মানুষকে অমানুষে পরিণত করে তেমনি কামসর্বস্ব ভালবাসা (Wanton love) মানুষকে নিকৃষ্ট পশুতে রুপান্তরিত করে এবং চিরতরে সভ্যতা ধ্বংসের কারণ হতে পারে।
পশ্চিমা সমাজের বস্তুবাদী ও ভোগবাদী সভ্যতার দিবসকেন্দ্রিক যে অন্তঃসারশূন্যতা ও প্রদর্শনপ্রিয়তা তা যেন আমাদের আচ্ছন্ন না করতে পারে তার ব্যাপারে এখনই সজাগ ও সচেষ্ট হতে হবে।
(Valentine’s Day-এর আমাদের ভার্শনের প্রেক্ষিতে রচিত)