বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম
সময়ানুবর্তিতা
সময় তিনটা বর্ণের সমন্বয়ে ছোট্ট একটা শব্দ। কিন্তু মূল্য ও তাৎপযের্র দিক থেকে সত্য বলতে এটি জীবনকে সফলতার শীর্ষে পৌঁছানোর সবশ্রেষ্ঠ পাথেয়।
“সময়ের মূল্য” রচনাটি আমরা সবাই পড়ে থাকি, কিন্তু এটা অন্তর দিয়ে অনুভব করতে হবে। তার কারণ, এই সময়ের কাজ সময়ে না করাই জীবনের অনেক ছোট বড় ব্যর্থতার মূল কারণ হয়ে থাকে। সময়ই জীবন। জীবন মানে কিছু মুহূর্ত, অর্থাৎ সেকেন্ড, মিনিট, ঘন্টা, মাস, বছরের সমষ্টি। পৃথিবীর সকল বরেণ্য ও সফল ব্যক্তিদের জীবনেই আমরা সময়ের সঠিক মূল্যায়নর প্রতিফলন দেখতে পাই। সময়ানুবর্তিতা মানে সময়ের কাজ সময়ে করা। আপুরা আমাদের ছোট্ট বয়স থেকে অনেক দায়িত্ব-কর্তব্য পালন করতে হয় তাই না? ক্লাসে নির্দিষ্ট সময়ে উপস্থিত হওয়া, প্রতিদিন হোমওয়ার্ক করা, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পরীক্ষা শেষ করা। এছাড়াও বাড়িতে মাকে সহযোগীতা করা, কেউ অসুস্থ থাকলে তার সেবা করা, ছোট ভাই-বোনদের প্রয়োজন পূরণ ইত্যাদি। আবার আমরা যারা মুসলিম তাদের অবশ্যই খেয়াল রাখতে হয় দুনিয়ার এই জীবনকাল বা সময় আখিরাতের অনন্ত জীবনের প্রস্তুতি সময় বা পরীক্ষাপর্ব।
তাই মহান রবের আদেশ পালন তথা নির্দিষ্ট সময়ে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা, জীবনকে সঠিক পথে পরিচালিত করার বিধান জানতে নিয়মিত অর্থসহ কুরআন অধ্যায়ন, হাদীস পড়া। রাসূল (স.) এর নির্দেশানুযায়ী এসব বিধান মানার সাথে সাথে অপরকে জানানোও আমাদের দায়িত্ব-কর্তব্যে এসে যায়। তাই প্রতিটি কাজেই যদি আমরা সফলতার সিঁড়ি মাড়াতে চাই, খুব পরিকল্পনা মাফিক সময় অনুযায়ী চলতে হবে আমাদের। ভোরে ঘুম থেকে উঠতে না পারলে একদিকে যেমন ফযরের সালাত মিস হয়ে যায় তেমনি অন্যদিকে মন মেজাজও ভাল থাকেনা।
প্রবাদ বাক্য থেকে আমরা জানি, “time and tide wait for none”, বিষয়টি বুঝেছি যখন আমরা এক মিনিট সময় দেরি হওয়ার কারণে ট্রেন মিস করেছি, আবার যখন দেখেছি স্রষ্টা প্রদত্ত নির্দিষ্ট সময় ফুরানো সাথে সাথেই মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে দুনিয়ার সব কিছু ছেড়ে যেতে হয়। প্রিয় রাসূল (সা:) বলেছেন,
“প্রতিদিন প্রত্যূষে দু’জন ফেরেশতা ডেকে বলেঃ হে আদম সন্তান; আমি একটি নতুন দিন, তোমার কর্মের আমি সাক্ষী। এই আমাকে কাজে লাগাও; আমার থেকে উপকৃত হও। কিয়ামত পর্যন্ত আমি আর ফিরে আসবো না।” আর এই সময়কে কাজে লাগিয়ে জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, দক্ষতায় কৌশলে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে বর্তমানের শক্তিশালী রাষ্টগুলো বিশষত জার্মানরা। এক বাংলাদেশী জার্মান প্রবাসী জার্মানীদের সময়ানুবর্তিতা প্রসঙ্গে বলেন, “সময় মেনে চলার বিষয়টি জার্মানদের মধ্যে শিশু বয়স থেকেই গড়ে উঠে। জার্মানির স্কুলে বাচ্চারা যদি ঠিক সময় না আসে তাহলে ক্লাস করার আর সুযোগ থাকেনা। কারণ স্কুলের গেট যথাসময়ে বন্ধ হয়ে যায়।” চলো আপুরা আমি থেকে আমরা সবাই সময়ের সঠিক মূল্যায়ন করি, জ্ঞানে, সাহসে, ধৈর্যে্য, অপরকে সহযোগিতায়, সফলতার প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকি দুনিয়ার এই ক্ষণস্থায়ী জীবনে ও আখিরাতের অনন্ত জীবনেও। এজন্য, পরের দিন কখন কি করবো তা সাজিয়ে নেই আগের রাতেই। সপ্তাহের, মাসের কাজের তালিকা তৈরি করি। সবকিছু ঠিক ঠিক করার পরও আমরা পেয়ে পাই কিছু অবসর। সেই অবসরের সময়কে আমরা কাজে লাগাতে পারি পরিকল্পিত ভাবে। যেমন-
(১) কারো জন্য কোথাও অপেক্ষা করছি অথবা নির্দিষ্ট পিরিয়ডের ক্লাস হয়নি কোন কারণে অথবা দূরে কোথাও বেড়াতে যাচ্ছি ট্রেন বা লঞ্চে তখন।
(২) ক্লাসের পড়া রিভাইজ করা যায়।
(৩) সুন্দর কোনো বই যেমন-ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভ্রমন কাহিনী মূলক বই পড়া যায়।
(৪) কুরআনের মুখস্থ অংশ পাঠ করা যায়।
(৫) আল্লাহর কাছে দোয়া যিকিরের মাধ্যমে সাহায্যে চাওয়া যায়।
(৬) পরবর্তী কাজের পরিকল্পনা গুছিয়ে নেয়া যায়।
তাই আর দেরি না করে চল জীবনের লক্ষ্য ঠিক করে নেই এবং সেই লক্ষে পৌঁছাবার মাধ্যম হিসাবে সময়কে সর্বোত্তম কাজে ব্যবহার করি।