হাই কোয়ালিটি ব্যাকলিংক (Backlink) তৈরি করার জন্য বেশির ভাগ ব্লগার ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটাররাই অনেক পরিশ্রম করে থাকে। যারা ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয়ের উপর আর্টিকেল লিখছেন, গুগল অ্যাডসেন্স (Google Adsense) এবং অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং (Affiliate Marketing) সহ বিভন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করছেন তাদের ওয়েবসাইটের জন্য হাই কোয়ালিটি ব্যাকলিংক তৈরি করা এক কথায় আবশ্যিক। কেননা হাই কোয়ালিটি ব্যাকলিংক তৈরি করতে পারলে আপনার ওয়েবসাইট গুগলে খুব দ্রুত র্যাংক করবে। যা পরবর্তীতে ওয়েবসাইটকে পপুলার করতে অসাধারণ ভূমিকা পালন করবে।
আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য হাই কোয়ালিটি ব্যাকলিংক তৈরি করতে চান এবং দ্রুত আপনার ওয়েবসাইটকে গুগলে র্যাংক করাতে চান তাহলে আপনাকে অবশ্যই ভালো মানের ব্যাকলিংক তৈরি করতে হবে। আজকে আপনাদের জানাতে চলেছি এমনই ছয়টি দারুণ কৌশল সম্পর্কে যা আপনি সঠিকভাবে প্রয়োগের মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইটকে খুব সহজে গুগলে র্যাংক করাতে পারবেন।
তো চলুন দেখা যাক কৌশল গুলো কি কিঃ
অথিতি লেখক
হাই কোয়ালিটি ব্যাকলিংক তৈরি করার জন্য অথিতি লেখক (Guest Writer) একটি অসাধারণ পদ্ধতি। অথিতি লেখক বলতে বোঝায়, আপনি একজন অথিতি লেখক হিসেবে অন্যান্য মানুষদের ওয়েবসাইটে লেখালেখি করবেন।
বিষয়টি আরো ভালোভাবে বুঝতে মনে করুন তিনজন মানুষ ব্লগিং করছে, তাদের প্রত্যেকের একটি করে ওয়েবসাইট আছে এবং তারা তাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখি (Writing) করছে। আপনিও সে তিন জনের মধ্যে একজন এবং আপনিও আপনার দক্ষতা অনুযায়ী আপনার নির্দিষ্ট বিষয় বা টপিকের উপরে আপনার সাইটে আর্টিকেল পাবলিশ করছেন। ঠিক এই একই কাজ আপনি অন্যান্য ব্লগারদের ওয়েবসাইটেও করবেন। আপনি একজন অথিতি লেখক হিসেবে অন্যান্য ওয়েবসাইটে আপনার লেখা কন্টেন্ট পাবলিশ করবেন।
আপনি যে ওয়েবসাইটে অথিতি লেখক হিসেবে লেখালেখি করবেন সেই ওয়েবসাইটের বিষয়ের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে আপনি লেখালেখি করতে পারেন। এজন্য আপনাকে প্রথমত যে কাজটি করতে হবে সেটি হলো আপনি যে ওয়েবসাইটে লেখালেখি করতে চান সেই ওয়েবসাইটের মালিকের সাথে যোগাযোগ করুন। প্রত্যেক ওয়েবসাইটেই যোগাযোগের জন্য যোগাযোগ ফরম, ইমেইল অ্যাড্রেস ইত্যাদি দেওয়া থাকে। আপনি সেখান থেকে খুব সহজে তাদের সাথে যোগাযোগ করে কাজ শুরু করতে পারবেন।
যখন আপনি আপানার লেখা আর্টিকেলটি অন্যান্য ওয়েবসাইটে পাবলিশ করবেন তখন লেখক পরিচিতির স্থানে আপনার একটা ব্যাকলিংক তৈরি করার সুযোগ থাকবে। এইভাবে আপনি খুব সহজে হাই কোয়ালিটি ব্যাকলিংক তৈরি করতে পারবেন আপনার ওয়েবসাইটের জন্য।
প্রোফাইল ব্যাকলিংক
প্রোফাইল ব্যাকলিংক কি? প্রথমে সেটা জানা যাক। অনলাইনে এমন লাখ লাখ ওয়েবসাইট আছে যে ওয়েবসাইট গুলোতে আপনি রেজিস্ট্রেশন করে আপনার একটা অ্যাকাউন্ট খুলতে পারেন এবং সেই অ্যাকাউন্ট এর প্রোফাইল পেজে গিয়ে আপনার সমস্ত ইনফরমেশন আপনি যুক্ত করতে পারেন। যেমনঃ আপনার নাম, জন্মতারিখ, আপনার ওয়েবসাইটের অ্যাড্রেস, আপনি কি করছেন সে বিষয় গুলো ইত্যাদি। এর সব থেকে বড় একটি উদাহরণ হচ্ছে ফেসবুক। ফেসবুকে আপনি যদি একটা পেজ তৈরি করেন তাহলে সে পেজের অ্যাবাউট সেকশনে আপনি বিভিন্ন ধরনের ইনফরমেশন যুক্ত করতে পারবেন।
আপনি এই কাজটি ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউব সহ আরো বিভিন্ন ওয়েবসাইটে করতে পারবেন। অনলাইনে অনেক ওয়েবসাইট পাবেন যেগুলোতে এই কাজটি করা যায়। আপনি যদি গুগলে সার্চ করেন ‘Profile backlink sites list’ লিখে তাহলে এমন অনেক ওয়েবসাইট পাবেন যেগুলোতে আপনি প্রোফাইল ব্যাকলিংক তৈরি করতে পারবেন। তবে একটি বিষয় অবশ্যই লক্ষ্য রাখবেন যত ওয়েবসাইট লিস্ট পাবেন সব গুলোতে গণহারে অ্যাকাউন্ট খুলবেন না। আপনার ওয়েবসাইটের বিষয়ের সাথে মিল আছে এমন ধরনের সাইট গুলোতে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে সেখানে কাজটি করতে পারেন। আপনি যদি একবারে সকল সাইটে অ্যাকাউন্ট তৈরি করে প্রোফাইল সেটআপ করেন তাহলে বিষয়টি হিতে বিপরীত হতে পারে।
আপনার সাইটের সাথে রিলেটেড ১০ থেকে ১৫টি সাইটে এই কাজ গুলো করতে পারেন। তাহলে আপনার কোনো ঝুঁকি থাকবে না। তাহলে এখনি এই কাজটি করে ফেলুন।
ফ্রি কন্টেন্ট
আপনার যদি নিজের ইতিমধ্যে কোনো দক্ষতা থেকে থাকে যেমনঃ ওয়েব ডিজাইন, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, গেম ডেভেলপমেন্ট, এসইও, অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ইত্যাদি এছাড়া যেকোনো কাজ। আপনি যে কাজেই পারদর্শী হন না কেন সেই বিষয়ের উপরে কন্টেন্ট তৈরি করে আপনার ওয়েবসাইটে ফ্রিতে ডাউনলোডের জন্য দিয়ে দিতে পারেন।
মনে করুন আপনি গ্রাফিক্স ডিজাইনে পারদর্শী। এখন আপনি আপনার ওয়েবসাইটে আপনার তৈরি করা বিভিন্ন ইমেজ, ভেক্টর ইমেজ, গ্রাফিক্স, বিভিন্ন টেম্পলেট ফ্রিতে ডাউনলোডের জন্য রাখতে পারেন। কিংবা আপনি যদি পারদর্শী নাও হয়ে থাকেন তাহলেও কোনো সমস্যা নেই। আপনি কাউকে হায়ার করেও এই কাজ গুলো করিয়ে নিতে পারেন। আপনি যে ধরনের টপিক বা নিশ নিয়ে কাজ করছেন সেই ধরনের টপিক সম্পর্কিত কোন কোন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস আপনি ফ্রিতে অফার করতে পারেন সে বিষয় গুলো নিয়ে একটু রিসার্চ করুন এবং খুঁজে বের করুন কিছু ফ্রি কন্টেন্ট আইডিয়া। তারপর সেগুলো নিয়ে কাজ শুরু করে দিন।
আপনার ব্লগের ভিজিটররা আপনার তৈরি বিভন্ন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস ফ্রিতে আপনার ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে তাদের বিভিন্ন প্রোজেক্টে কাজে লাগাবে এবং পরবর্তীতে সেগুলোর যখন আবার প্রয়োজন পড়বে তখন তারা আবার আপনার ওয়েবসাইটে ব্যাক করবে সেগুলো পাওয়ার জন্য। শুধু তাই নয় আপনার ব্লগের ভিজিটরদের যদি আপনার প্রোডাক্ট বা সার্ভিস পছন্দ হয় তাহলে তারা তাদের বন্ধু বান্ধবদের সাথেও আপনার ওয়েবসাইটের লিংক শেয়ার করবে। এতে করে আপনি অটোমেটিক ভালো মানের ব্যাকলিংক তৈরি করতে পারবেন।
অন্য ওয়েবসাইটকে ডু-ফলো ব্যাকলিংক দিয়ে দিন
কি অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার কিছুই নেই, কারণ এই পদ্ধতিটি আসলেই অনেক কাজের। আপনি যদি আপনার ওয়েবসাইট রিলেটেড অন্য ওয়েবসাইটকে অগ্রিম ব্যাকলিংক দিয়ে দেন তাহলে তারাও আপনাকে ব্যাকলিংক দিবে। আপনি যাদেরকে ব্যাকলিংক দিবেন তাদের সাথে আপনার যোগাযোগ করারও প্রয়োজন নেই, আপনি সরাসরি আপনার ওয়েবসাইটে তাদের ব্যাকলিংক দিয়ে দিন। ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট গুলোতে একটা ইন্টারনাল ফিচার আছে, সেটার নাম হচ্ছে ‘Pingback’. আপনাকে যদি কেউ ব্যাকলিংক দেই কোনো ওয়ার্ডপ্রেস ওয়েবসাইট থেকে এবং আপনার ওয়েবসাইটটিও যদি ওয়ার্ডপ্রেসের হয় তাহলে আপনি একটি নোটিফিকেশন পাবেন, যে ওয়েবসাইট আপনাকে ব্যাকলিংক দিয়েছে সে সম্পর্কিত একটি নোটিফিকেশন।
ঠিক একইভাবে আপনি যখন অন্য ওয়েবসাইটকে ব্যাকলিংক দিবেন তারাও একটি করে নোটিফিকেশন পেয়ে যাবে। এতে করে একটি দারুণ সুযোগ তৈরি হয়, সেটা হচ্ছে আপনি যাদেরকে ব্যাকলিংক দিবেন তারাও যখন পরবর্তীতে কন্টেন্ট পাবলিশ করবে সেই কন্টেন্টের মধ্যে আপনার ওয়েবসাইটের ব্যাকলিংক দিয়ে দেয়ার একটি সুযোগ তৈরি হবে। এই কৌশলটি আসলেই অনেক কাজের। যা আপনাকে হাই কোয়ালিটি ব্যাকলিংক তৈরি করতে দারুণভাবে সহায়তা করবে।
টেস্টিমোনিয়াল
অনলাইনে আপনি যখন কাজ করছেন তখন বিভিন্ন সময় বিভিন্ন প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কেনার প্রয়োজন হয়ে পারে। যেমনঃ সফটওয়্যার, বিভিন্ন ধরনের টুলস, ইমেজ ইত্যাদি কেনার প্রয়োজন হতে পারে আপনার ওয়েবসাইটের জন্য। যে কোম্পানি গুলোর থেকে আপনি এই প্রোডাক্ট বা সার্ভিস কিনবেন তাদেরকে আপনি টেস্টিমোনিয়াল বা প্রশংসাপত্র দিন। প্রত্যেকটা কোম্পানি তাদের কাস্টমারের কাছ থেকে প্রশংসা বা পজেটিভ রিভিউ পেতে পছন্দ করে। যে প্রোডাক্ট বা সার্ভিস আপনি কিনবেন বা কিনেছেন সেটা সম্পর্কে একটা পজেটিভ রিভিউ দিন। একজন কাস্টমার হিসেবে আপনি তাদেরকে বলুন যে প্রোডাক্ট বা সার্ভিসটি আপনাকে কত দারুণভাবে সহযোগিতা করেছে।
এমন ধরনের রিভিউ যখন আপনি তাদেরকে দিবেন তখন সেই কোম্পানি আপনার টেস্টিমোনিয়ালটি বা রিভিউটি তারা তাদের ওয়েবসাইটে পাবলিশ করবে আপনার ওয়েবসাইটের লিংক সহ। বিভিন্ন ওয়েবসাইটে গেলে দেখবেন সেখানে তাদের কাস্টমারের ফিডব্যাক থাকে বা রিভিউ গুলো দেয়া থাকে এবং সেগুলোতে লক্ষ্য করলে দেখবেন ছবিসহ কিছু টেক্সট ও ওয়েবসাইটের লিংক যুক্ত করা থাকে। সেজন্য এটি একটি দারুণ উপায় হাই কোয়ালিটি ব্যাকলিংক তৈরি করার।
রিসোর্স কন্টেন্ট
প্রত্যেকেরই বিভিন্ন ধরনের রিসোর্স এর প্রয়োজন। আপনি যদি ডিজাইনিং শিখতে চান তাহলে ডিজাইন সম্পর্কিত বিভিন্ন ধরনের রিসোর্স বা তথ্যের প্রয়োজন হবে আপনার। আপনি যদি কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখতে চান তাহলে সে সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যের প্রয়োজন হবে আপনার। ঠিক একইভাবে যদি আপনি যদি ব্লগিং শুরু করতে চান তাহলে ব্লগিং এর জন্য আপনার বিভিন্ন রিসোর্সের প্রয়োজন হবে। উদাহরণ হিসেবে আপনি এই আর্টিকেলটিকেই দেখতে পারেন, এই আর্টিকেলটিও একটি রিসোর্স বা তথ্য সমৃদ্ধ আর্টিকেল কন্টেন্ট যেখানে আমরা আপনাকে হাই কোয়ালিটি ব্যাকলিংক তৈরি করার জন্য কিছু তথ্য দিচ্ছি।
ঠিক একইভাবে আপনার ওয়েবসাইটেও আপনার বিষয় সম্পর্কিত কিছু রিসোর্স খুঁজে বের করুন যেগুলো আপনার প্রয়োজন হয়েছে, আপনি ব্যবহার করেছেন এবং আপনার ওয়েবসাইটের যে ভিজিটর বা পাঠক আছে তাদেরও সেগুলো প্রয়োজন হতে পারে। এজন্য এমন ধরনের রিসোর্স বা তথ্য সমৃদ্ধ কন্টেন্ট তৈরি করুন যেগুলো আপনার সাইটের ভিজিটরদের জন্য উপকারী। তথ্য সমৃদ্ধ কন্টেন্ট গুলো অনলাইনে অনেক শেয়ার হয়ে থাকে। বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে, বিভিন্ন ফোরামে মানুষ এগুলো শেয়ার করে থাকে। এতে করে আপনি আপনার ওয়েবসাইটের জন্য বেশ ভালো মানের ব্যাকলিংক তৈরি করার সুযোগ পেয়ে যাবেন।
আশা করি হাই কোয়ালিটি ব্যাকলিংক তৈরি করার বিষয়টি আপনি বুঝতে পেরেছেন। তারপরও যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে নিচে কমেন্টে জানাতে পারেন আপনার সমস্যাটি। আমরা আপনার সমস্যাটি সমাধানের জন্য অবশ্যই চেষ্টা করবো। আর্টিকেলটি অনেক বড় হলেও আশা করি আপনার উপকারে আসবে। এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।