ব্লগিং মূলত লেখালেখির করার একটি পেশা। আপনার যদি লেখালেখি করতে আগ্রহ থাকে তাহলে ব্লগিং হতে পারে আপনার জন্য দারুণ একটি পেশা। কিন্তু লক্ষ্য করলেই দেখা যায় বেশিরভাগ মানুষই এই সেক্টরটিতে কাজ করতে এসে কিছু অনিচ্ছাকৃত ভুলের জন্য সফল হতে না পেরে সেক্টরটি থেকে দূরে সরে যায়। আজকে আমরা ব্লগিং সম্পর্কিত ১০টি মারাত্মক ভুল সম্পর্কে আলোচনা করবো, যেগুলোকে এড়িয়ে চলতে পারলে আপনি ব্লগিং ক্যারিয়ারে দারুণ সফলতা অর্জন করতে সক্ষম হবেন।
ব্লগিং শুরুর প্রথম থেকেই অর্থ উপার্জনের চিন্তা করা
অর্থ আমাদের সবারই প্রয়োজন। কিন্তু একটি বিষয় লক্ষ্য করে দেখুন তো, আমরা যদি কোনো ভালো পেশায় নিয়োজিত হতে চাই তাহলে আমাদের প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর লেখাপড়া করার প্রয়োজন পড়ে। তারপর গিয়ে আমরা সেই পেশায় নিয়োজিত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করি। ঠিক ব্লগিং এর ক্ষেত্রেও বিষয়টা একই রকম। কিন্তু ব্লগিং এ সফল হওয়ার জন্য আপনাকে ২০ থেকে ২৫ বছর অপেক্ষা করতে হবে, এমনটা মোটেও নয়। আপনি সঠিক ভাবে ধৈর্য সহকারে কাজ করতে থাকলে অল্প সময়ের মধ্যেই ব্লগিং এ সফল হতে পারবেন। এজন্য ব্লগিং শুরুর প্রথম থেকেই যদি আপনি ইনকাম করার চিন্তা করতে থাকেন তাহলে একটা সময় কাজের প্রতি আপনার মনোযোগ বিঘ্নিত হতে থাকবে। যার ফলে ব্লগিং এ সফল হওয়া আপনার জন্য কঠিন হয়ে পড়বে।
কপিরাইট কন্টেন্ট ব্যবহার করা
নতুনদের জন্য ব্লগিং এর সবচেয়ে বড় ভুল গুলোর মধ্যে অন্যতম ভুল হলো এটি। অন্যের লেখা, ছবি ইত্যাদি নিজের ব্লগে হুবুহু কপি করে ব্যবহার করা কপিরাইটের আওতায় পড়ে। এই ভুলটি আপনার ব্লগিং ক্যারিয়ারকে ধ্বংস করার জন্য যথেষ্ট। এজন্য ব্লগে নিজের তৈরি কন্টেন্ট নিয়মিত পাবলিশ করতে থাকুন এবং সঠিক উপায়ে কাজ গুলো করতে থাকুন। তাহলে একটা সময় অবশ্যই ভালো ফল পাওয়া সম্ভব।
অতিরিক্ত অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামে জয়েন করা
অনেকেই আছে ব্লগিং এর শুরুতে নিজের ব্লগে কয়েকটি আর্টিকেল পাবলিশ করার পর পরই অর্থ উপার্জনের জন্য উঠে পড়ে লাগে। তারা খোঁজ করতে থাকে কিভাবে অ্যাডসেন্স ছাড়া দ্রুত ব্লগ থেকে ইনকাম করা যায়। তারপর তারা কিছু অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রামের সন্ধান পায় এবং সেগুলোতে একের পর এক অ্যাকাউন্ট খুলে নিজের ব্লগে সেগুলো নিয়ে কাজে লেগে পড়ে। কিন্তু অবশেষে দেখা যায় সেগুলো থেকে কিছুই আসে না। এজন্য ব্লগিং শুরুর প্রথম থেকে আপনি নিজের ব্লগের দিকে নজর দিন। ভালো ভালো আর্টিকেল কন্টেন্ট পাবলিশ করতে থাকুন। এরপর একটা সময় আপনার ব্লগের ভালো ভিজিটর হওয়ার পর দুই একটি অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করতে থাকুন। তাহলে দেখবেন আপনি ব্লগ থেকে ও অ্যাফিলিয়েট থেকে ভালো উপার্জন করতে পারছেন।
নিজের অ্যাডে নিজে ক্লিক করা বা অন্যকে দিয়ে ক্লিক করিয়ে নেওয়া
আপনি কি এই কাজটি করেন? যদি করে থাকেন তাহলে এখনি এই কাজ বাদ দিন। কারণ নিজের অ্যাডে নিজে ক্লিক করা বা অন্য কাউকে দিয়ে করিয়ে নেওয়া আপনার কোনো উপকারেই আসবে না। বরং আরো ক্ষতির সন্মুখিন হবেন। অ্যাডসেন্স তার প্রত্যেকটি অ্যাড ক্লিককে খুব নিখুত ভাবে পর্যবেক্ষণ করে। কোথায় থেকে ক্লিক আসলো, কিভাবে আসলো, ব্লগে ভিজিটর থাকার কতক্ষণ পর ক্লিক আসলো ইত্যাদি নানান বিষয় পর্যবেক্ষণ করার পরই অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টে ব্যালেন্স জমা হয়। তাই এসব ফেইক ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন।
ব্লগে ফেক ট্রাফিক জেনারেট করা
ব্লগে দুই চারটি আর্টিকেল করার পরেই দেখা যায় অনেকে বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে ফেক ভিজিটর বা অটো ট্রাফিক নিয়ে আসতে থাকে। এই বিষয়টি একেবারেই করবেন না। কারণ এই কাজটি করলে অ্যাডসেন্স আপনার ব্লগকে অ্যাপ্রুভ করবে না। আপনার ব্লগের সঠিকভাবে এসইও (SEO) করুন, বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে ব্লগের পেজ তৈরি করুন, সার্চ ইঞ্জিন গুলোতে সাবমিট করুন ইত্যাদি কাজ গুলো সঠিক ভাবে করতে থাকুন। তাহলে একটা সময় ভালো পরিমাণ ভিজিটর আপনার ব্লগে আসতে থাকবে।
কোয়ালিটি সমৃদ্ধ কন্টেন্ট এর অভাব
কোয়ালিটি কন্টেন্ট বলতে বোঝায় ভালো মানের তথ্য সমৃদ্ধ এসইও ফ্রেন্ডলি কন্টেন্ট। কিন্তু ব্লগিং এ যারা একদমই নতুন তারা বেশিরভাগই কন্টেন্ট এর উপর নজর না দিয়ে নজর দেয় অ্যাডসেন্স, অ্যাফিলিয়েট প্রোগ্রাম, ওয়েবসাইট ট্রাফিক ইত্যাদির উপর। যার ফলস্বরূপ দেখা যায় শেষ পর্যন্ত কিছুই করা হয়ে উঠে না। আপনি যদি আপনার ব্লগকে ভালো মানের একটি ব্লগ হিসেবে সবার কাছে তুলে ধরতে চান তবে প্রথমে আপনাকে ভালো তথ্য সমৃদ্ধ আর্টিকেল মানুষকে উপহার দিতে হবে। আপনি আপনার ব্লগের আর্টিকেল দ্বারা মানুষের যত উপকার করতে পারবেন মানুষ তত বেশি আপনার ব্লগে আসবে ভালো কিছু পাওয়ার জন্য। এজন্য সব কিছুর আগে ব্লগের কন্টেন্ট এর উপর ফোকাস করুন। তাহলে ভালো কিছু নিয়ে আসবে আপনার ব্লগ আপনার জন্য।
ব্লগের হোস্টিং সার্ভিস নির্বাচনে ভুল করা
হ্যাঁ এটাও ব্লগিং এর ক্ষেত্রে বড় ধরনের একটি ভুল। অনেকেই আছেন তার ব্লগের হোস্টিং নির্বাচনে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত ভাবে ভুল করে থাকেন। এর মূল কারণটি হলো ডোমেইন হোস্টিং সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকা। ধরুন আপনার ব্লগে বেশ ভালো মানের কন্টেন্ট রয়েছে, কিন্তু আপনার ব্লগটি মাঝে মধ্যেই ডাউন থাকে। এর কারণ হলো আপনি হোস্টিং সার্ভিস নির্বাচনে ভুল করেছেন। আজাকাল অনেক ডোমেইন হোস্টিং প্রোভাইডার কোম্পানি বিভিন্ন লোভনীয় অফার দেখায় এবং আমরা কোনো কিছু না বুঝেই সে সার্ভিসগুলো কিনে ফেলি। এটি করা মোটেও ঠিক না। কারণ খারাপ হোস্টিং নির্বাচনের ফলে আপনার সাইটটি যদি মাঝে মধ্যেই ডাউন থাকে তাহলে আপনি ব্লগের অনেক ভিজিটর হারাবেন। যা ব্লগিং এর ক্ষেত্রে বিশাল হুমকিস্বরূপ। এজন্য ভালো হোস্টিং সার্ভিস প্রোভাইডার কোম্পানির থেকে হোস্টিং ক্রয় করুন।
ব্লগের ভিজিটরদের অ্যানালাইসিস না করা
ব্লগে শুধু লিখলেই হবে না। বরং আপনি আপনার ব্লগে যেসব বিষয় নিয়ে লেখালেখি করছেন সেসব বিষয় কারা পড়ছে অর্থাৎ আপনার ব্লগের ভিজিটর কোথায় থেকে আসছে, তাদের বেশিরভাগের বয়স কত, তারা বিশেষভাবে কোন কোন বিষয় পছন্দ করে ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে আপনাকে Google Analytics এর মাধ্যমে জানতে হবে। কারণ আপনার ব্লগের ভিজিটরদের সঠিক ভাবে অ্যানালাইসিস করার মাধ্যমেই আপনি বুঝতে পারবেন কি ধরনের কন্টেন্ট আপনার ব্লগের ভিজিটররা বেশি পছন্দ করে বা তারা কি বিষয় সম্পর্কে বেশি আগ্রহী। এজন্য নিয়মিত আপনার ব্লগের Google Analytics অ্যাকাউন্ট ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করা জরুরী।
কন্টেন্টের মাঝে অতিরিক্ত অ্যাড ব্যানার ব্যবহার করা
কেউই অ্যাডভার্টাইজমেন্ট পছন্দ করে না। কিন্তু ব্লগ থেকে যারা অ্যাডভার্টাইজমেন্ট এর সাহায্যে অর্থ উপার্জন করে তাদের জন্য তো অ্যাড ব্লগে রাখতেই হবে। কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত অ্যাড খুবই বিরক্তিকর। আপনার ব্লগের ভিজিটররা আপনার কন্টেন্ট সম্পর্কে জানতে আসবে, তারা আপনার ব্লগে অ্যাড দেখতে আসবে না। এজন্য আপনাকে কন্টেন্ট এর মাঝে অতিরিক্ত অ্যাড প্লেস করা থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ আপনার ব্লগে এসে যদি কোনো ভিজিটর বিরক্ত হয়ে যায় তাহলে সে কিন্তু দ্বিতীয়বার আর আপনার ব্লগে আসতে চাইবে না। এজন্য আপনাকে প্রয়োজনমতো সঠিক জায়গায় অ্যাড গুলোকে প্লেস করতে হবে। অ্যাডসেন্স এর নিয়ম অনুযায়ী একটি পেজের মধ্যে সর্বোচ্চ তিনটি অ্যাডসেন্স ব্যানার প্লেস করতে পারবেন। এর বেশি করলে আপনার অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টটি সাসপেন্ডও হতে পারে।
ব্লগের ভিজিটরদের গুরুত্ব না দেয়া
একটি ব্লগের প্রাণ হলো ভালো মানের কন্টেন্ট এবং ব্লগের ভিজিটর। এজন্য ব্লগের ভিজিটরদের গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের বিভিন্ন কমেন্ট, প্রশ্ন, সমস্যা ইত্যাদি সমাধান করার চেষ্টা করতে হবে। এতে করে তারা আরো বেশি আপনার ব্লগ ও আপনাকে বিশ্বাস করতে থাকবে এবং একটা সময় আপনি আপনার ব্লগে অনেক রেগুলার ভিজিটর পেয়ে যাবেন যারা আপনার থেকে ভালো কিছু পাওয়ার আশাই অপেক্ষা করবে। এজন্য ব্লগের প্রত্যেকটি ভিজিটরদের ভালো ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে হবে ও তাদের বিভন্ন সমস্যা সম্পর্কে অবগত হয়ে সেগুলো সমাধান করার চেষ্টা করত হবে।
আশা করি উপরে উল্লেখিত বিষয়গুলো সম্পর্কে আপনি বুজতে পেরেছেন যে কোন কোন ভুল গুলো ব্লগিং এর ক্ষেত্রে খুবই মারাত্মক। এরপরও যদি বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে নিচে আপনার সমস্যা আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা অবশ্যই আপনার সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করবো। আর্টিকেলটি ভালো লাগলে আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে তাদেরকেও জানতে সহযোগিতা করুন।