আমরা কম্পিউটারের ক্ষেত্রে সচরাচর একটি কমন সমস্যার সন্মুখিন হয়ে থাকি। তা হলো হার্ডডিস্কের সমস্যা। বিভিন্ন কারণে হার্ডডিস্ক ড্যামেজ হতে পারে। তবে সেগুলোর মধ্যে সাধারণত যেসব কারণে হার্ডডিস্ক নষ্ট হয় বা হতে পারে সে বিষয়গুলো এই আর্টিকেলে আলোচিত হয়েছে।
ব্যাড সেক্টর
হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে গেলে কম্পিউটার ধপ করে বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফলে হার্ডড্রাইভে ব্যাড সেক্টরের দেখা দেয়। ব্যাড সেক্টর হলো এমন একটি সমস্যা যার জন্য ধীরে ধীরে হার্ডডিস্কের জায়গা (Space) কমতে থাকে। অনেকদিন যাবত ব্যাড সেক্টর হতে হতে হঠাৎ করে একসময় হার্ডডিস্ক সম্পূর্ণ ফেইল হয়ে যেতে পারে।
মনে করুন আপনার হার্ডড্রাইভটি 500 গিগাবাইট এবং একটা সময় আপনি লক্ষ্য করলেন যে হার্ডড্রাইভটি 440 গিগাবাইট হয়ে গিয়েছে তাহলে বুজতে হবে বাকি স্পেস বা জায়গা গুলো ব্যাড সেক্টরের মধ্যে চলে গিয়েছে। এই সমস্যাটি সাধারণত হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ফলেই হয়ে থাকে। কারণ হার্ডডিস্ক সব সময় কোনো না কোনো ডাটা রীড-রাইট সম্পূর্ণ করতে থাকে এবং রীড-রাইট করার সময় হঠাৎ করে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ফলে হার্ডডিস্ক সেই অপারেশনটি কমপ্লিট করতে পারে না। ফলে হার্ড ড্রাইভের ওই সেক্টরটি ব্যাড সেক্টরের আওতায়ভুক্ত হয়।
রীড-রাইট হেড ক্রাশ
হার্ডডিস্কে রীড-রাইট হেড ও প্ল্যাটারের মধ্যে সংঘর্ষের ফলে হার্ড ড্রাইভ হেড নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সম্পূর্ণ হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে যায়। এই সমস্যাটি খুব মারাত্মক একটি সমস্যা কারণ এই সমস্যা হলে প্ল্যাটার থেকে ডাটা রীড-রাইট করতে পারে না হেড। এজন্য হার্ডড্রাইভের ডাটা গুলো রিকোভারি করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পরে। যদি রিকোভারি করাও যায় তাহলেও তা খুবই কষ্টসাধ্য ও ব্যয়বহুল।
ধুলাবালি
সামান্য একটি ধুলিকণা হার্ডডিস্কের মধ্যে প্রবেশের ফলে হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এজন্য কম্পিউটারকে ধুলাবালি থেকে দূরে রাখার চেষ্টা করুন।
পার্টিশন পূর্ণ হয়ে যাওয়া
হার্ডডিস্কের পার্টিশন গুলো সম্পূর্ণ ভরে যাওয়ার ফলে হার্ডডিস্কের সমস্যা হতে পারে। কম্পিউটার স্লো কাজ করতে থাকে। এজন্য সব সময় হার্ডডিস্কে কমপক্ষে 20% জায়গা ফাঁকা রাখুন প্রত্যেকটি পার্টিশনে।
মাত্রাতিরিক্ত গরম
হার্ডডিস্ককে অতিরিক্ত গরম হওয়া থেকে রক্ষা করা প্রয়োজন। কারণ মাত্রাতিরিক্ত গরমের ফলে হার্ডডিস্ক ক্রাশ করতে পারে। যদি আপনার হার্ডডিস্কের প্ল্যাটার গুলো গ্লাস (Glass) দ্বারা তৈরি হয়ে থাকে তাহলে অতিরিক্ত গরমের ফলে প্ল্যাটার গুলো ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এজন্য একটি হার্ডডিস্ক মনিটর সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন যাতে অতিরিক্ত গরম হয়ে গেলে নোটিফিকেশান পান। কম্পিউটারে ভালো কুলিং সিস্টেম ব্যবহার করুন যাতে হার্ডডিস্ক সহ অন্যান্য অংশগুলো ঠাণ্ডা থাকে।
ফিজিক্যাল ড্যামেজ
অনেক সময় হার্ডডিস্ক পরিস্কার করার সময় বা হাতে বহন করার সময় পরে গিয়ে সম্পূর্ণ হার্ডডিস্ক ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। এজন্য হার্ডডিস্ক সাবধানে পরিস্কার ও বহন করা উচিত যাতে কোনো ফিজিক্যাল ড্যামেজ না হয়। হার্ডডিস্কের ফিজিক্যাল ড্যামেজ রিপেয়ার খুবই কঠিন, বেশির ভাগ সময়ই রিপেয়ার করা সম্ভব হয় না। আবার অনেক সময় হার্ডডিস্কের ভেতর থেকে ভারী আওয়াজ শোনা যেতে পারে। হার্ডডিস্কের ভেতর থেকে এসব ভারী ধরণের আওয়াজ শোনা গেলে বুঝতে হবে হার্ডডিস্কের বারোটা বাজতে যাচ্ছে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার প্রয়োজনীয় ডাটা গুলো ব্যাকআপ করে নিন এবং সেই হার্ডডিস্ক ব্যবহার করা বাদ দিন। কারণ সেই হার্ডডিস্কটি যখন তখন ডেড হয়ে যেতে পারে।
ইলেক্ট্রিক্যাল সমস্যা
ইলেক্ট্রিক্যাল ত্রুটি শুধু হার্ডডিস্ক নয় বরং পুরো কম্পিউটারের জন্যই ক্ষতিকর। ইলেক্ট্রিক্যাল সমস্যা যেমনঃ কম্পিউটার অন থাকা অবস্থায় হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যাওয়া, শর্টসার্কিট, বিদ্যুতের ভোল্টেজ আপডাউন ইত্যাদি সমস্যা গুলোর জন্য হার্ডডিস্ক সহ সম্পূর্ণ কম্পিউটারের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এজন্য একটি ভালো মানের ইউপিএস (UPS-Uninterruptible Power Supply) ব্যবহার করুন। এতে করে যদি বৈদ্যুতিক কোনো সমস্যাও হয় তাহলে তা ইউপিএস এর ক্ষতি করতে পারবে, আপনার কম্পিউটারের নয়।
হার্ডডিস্ক মনিটর সফটওয়্যার
আপনার হার্ডডিস্ক-টির বর্তমান অবস্থা কি, হার্ডডিস্ক এর তাপমাত্রা কেমন রয়েছে, হার্ডডিস্কের ব্যাকআপ রাখা জরুরী কিনা ইত্যাদি বিষয় গুলো আপনাকে বিস্তারিত প্রদর্শন করবে এমন একটি সফটওয়্যার হলো HDDExpert। হার্ডডিস্ক সম্পর্কে সকল ধরণের ইনফর্মেশন জানতে আপানকে সাহায্য করবে এই সফটওয়্যারটি। সফটওয়্যারটি একটি ওপেন সোর্স সফটওয়্যার। এজন্য সফটওয়্যারটি আপনি ফ্রিতে ডাউনলোড করে ব্যবহার করতে পারবেন।
ডাটা ব্যাকআপ
আমরা অনেকেই অনেক সময় হার্ডডিস্কের বিভিন্ন সমস্যার সন্মুখিন হয়ে থাকি। সমস্যাটি ছোট হোক কিংবা বড়, সমস্যার সমাধান করতেই হয়। কিন্তু যদি হার্ডডিস্কটিই ক্রাশ করে তাহলে খুবই বাজে অভিজ্ঞতার শিকার হতে হয়। আর তা হলো ডাটা লস। আপনার প্রয়োজনীয় ডাটা বা তথ্য যদি সব হারিয়ে ফেলেন তাহলে এর থেকে খারাপ ব্যাপার আর কি হতে পারে। অনেক সময় যদি হার্ডডিস্কটি আপনি রিপেয়ারও করে ফেলেন তারপরও অনেক ডাটা ফিরে পেতে পারবেন না। আর যদি ফিরে পানও তবুও তা অনেক ব্যয়বহুল। এজন্য এসব ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকার একমাত্র সমাধান আপনার প্রয়োজনীয় ডাটা গুলোর একাধিক ব্যাকআপ রাখুন।
আপনি একটি পোর্টেবল হার্ডড্রাইভ কিনে সেখানে ব্যাকআপ রাখতে পারেন অথবা ক্লাউড ডাটা ব্যাকআপ সার্ভিস গ্রহন করতে পারেন বা আপনার এক্সট্রা কোনো হার্ডড্রাইভ, পেনড্রাইভ ইত্যাদিতে সংরক্ষণ করতে পারেন আপনার ডাটা গুলো। ক্লাউড ডাটা ব্যাকআপ বেস্ট অপশন হতে পারে। যেমনঃ গুগল ড্রাইভ, মাইক্রোসফট ওয়ান ড্রাইভ ইত্যাদি। আপনার প্রয়োজনীয় ডাটা গুলোর কিছু দিন পর পর ব্যাকআপ করে রাখুন এতে হার্ডডিস্ক নষ্ট হয়ে গেলেও বেশি সমস্যার সন্মুখিন হতে হবে না।
আশা করি আর্টিকেলটি আপনার একটু হলেও উপকারে আসবে। আর্টিকেলটি কেমন লাগলো তা নিচে কমেন্ট করে জানান এবং আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন। ধন্যবাদ।