আউটসোর্সিং এর যেমন কিছু সুবিধা আছে তেমনি কিছু অসুবিধা ও রয়েছে। নিচে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
আউটসোর্সিং এর সুবিধা :
১. এর মাধ্যমে বায়ারগণ অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক দামে এমনকি কখনও কখনও স্বল্প পারিশ্রমিকে কাজ করিয়ে নিতে পারেন যা হয়তো নিয়মিত কর্মীদের মাধ্যমে করালে অনেক বেশি খরচ পড়তো।
২. তীব্র প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে কাজ করিয়ে আনা হয় বলে কাজের মান উন্নত হয়। ফ্রিল্যান্সার পরবর্তী কাজ পাবার আশায় প্রতিটি কাজের নিজস্ব দক্ষতার ছাপ রাখার চেষ্টা করেন।
৩. বিশ্বের যে কোনো প্রান্ত থেকে কাজ করিয়ে আনা যায় বলে প্রচলিত কর্মীর কোনো প্রয়োজন পড়ে না।
৪. বায়ার গণ খন্ডকালীন রূপে কাউকে কাজের জন্য নিয়োগ দিতে পারেন।
৫. ফ্রিল্যান্সার ঘরে বসেই কাজ করতে পারেন। ফলে অনেকে পূর্ণকালীন চাকরির পাশাপাশি অবসরে খন্ডকালীন চাকরি হিসেবে আউটসোর্সিং এ যুক্ত হতে পারেন।
৬. আউটসোর্সিং এর ক্ষেত্রে কর্মদাতাকে কোনো অফিস নেবার প্রয়োজন পড়ে না। ফলে অবকাঠামো বিভিন্ন সুবিধা যেমন, কর্মীর বসার সংস্থান, উন্নত মানের কম্পিউটার ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপনের কোনো প্রয়োজন পড়ে না। এতে খরচ বেচে যায়।
৭. বায়ার গণ টাইম জোন এর সুবিধাকে কাজে লাগাতে পারেন। বিশ্বের এক প্রান্তে যখন রাত অন্য প্রান্তে তখন দিন ফলে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কাজ করালে বায়ারগণ যখন ঘুমে বিভোর তখন অন্য প্রান্তে তার কাজটি দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে থাকে। এতে সময়ের সদ্বব্যবহার করা যায়। বায়ারগণ হয়তো সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখেন তার কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে।
৮. আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সার গণ নিজের আর্থিক উন্নতি ঘটাতে পারেন। এর মাধ্যমে যথেষ্ট পরিমাণে উপার্জন এর সুযোগ রয়েছে
৯. আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে দেশের শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠীর জন্য কর্ম সংস্থান করা সম্ভব।
১০. আউটসোর্সিং কে শিল্পে পরিণত করা গেলে তা দেশের দারিদ্র্য বিমোচনের ক্ষেত্রে বিরাট ভূমিকা পালন করে। আউটসোর্সিং এখন অনেকেই পেশায় পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশ প্রতি বছর আউটসোর্সিং হতে কয়েক মিলিয়ন ডলার আয় করে। শিক্ষিত বেকার জনগোষ্ঠী এই শিল্পকে কাজে লাগিয়ে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছে। উন্নত বিশ্বের মতো বাংলাদেশও অনেকে এই খাতে বিনিয়োগ করছে। ফলে বহু লোক সম্পৃক্ত হচ্ছে বিভিন্ন কাজে, সৃষ্টি হচ্ছে কর্মসংস্থান।
আউটসোর্সিং এর অসুবিধা :
১. আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কাজ করালে অনেক সময় কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির গোপনীয়তা তৃতীয় পক্ষের দ্বারা ভঙ্গ হতে পারে। বিশেষ করে যখন কোনো প্রতিষ্ঠান এইচআর, পেরোল ও নিয়োগ সেবাকে আউটসোর্স করে দেয় তখন প্রতিষ্ঠানের গোপনীয়তা হুমকির মুখে পড়তে পারে।
২. অনেক সময় বায়ারগণ সঠিক আউটসোর্স কর্মী খুঁজে পেতে ব্যর্থ হলে যথা সময়ে তার কাজটি সম্পন্ন নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে তিনি বিভিন্ন ধরনের ঝামেলার সম্মুখীন হতে পারেন। পাশাপাশি নিজস্ব পরিমন্ডলে বিরাট আর্থিক ক্ষতি ও ঘটে যেতে পারে।
৩. যদিও সার্বিক বিবেচনায় আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে কাজ করানো অর্থসাশ্রয়ী তারপরও এতে কিছু হিডেন কস্ট থাকতে পারে যা পরবর্তীতে বায়ারের খরচ বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে বায়ার যখন কোনো বাইরের কোম্পানির সাথে আউটসোর্সিং এর চুক্তি করেন তখন চুক্তির শর্ত মোতাবেক তার বিভিন্ন ধরনের খরচ বেড়ে যেতে পারে।
৪. আউটসোর্সিং কোম্পানি গুলোকে ভালো ভাবে চলতে হলে মুনাফা সৃষ্টি করতে হয়। বায়ার কর্তৃক কাজের মূল্য নির্দিষ্ট করে দেওয়া থাকলে এবং সব সময় এই হার একই থাকলে তখন মুনাফা সৃষ্টির জন্য উক্ত কোম্পানির কাছে যে পথটি খোলা থাকে তা হলো খরচ কমানো। আর এটি করতে গিয়ে কাজের মান নেমে যেতে পারে।
৫. আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে আয়কৃত অর্থ নিজ দেশে উত্তোলন করতে গিয়ে ফ্রিল্যান্সার গণ অনেক সময় নানা ধরনের ঝামেলায় পড়তে পারেন। যেমন, ফ্রিল্যান্সার গণকে বিভিন্ন পেমেন্ট মথডের মধ্য থেকে তাদের উপযোগী মেথডটি গ্রহণ করতে হয়। অনেক সময় নিজ দেশে ঐ সেবা চালু নাও থাকতে পারে। ফলে অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে নানা ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তবে আশার কথা, পেওনিয়ার এর মতো ক্রেডিট কার্ড থাকলে বিশ্বের যেকোনো এটিএম থেকেই উপার্জিত অর্থ উত্তোলন করা যায়।