প্রত্যেক মানুষই তার নিজের জীবনে সফলতা অর্জন করতে চায়। কিন্তু এটি সহজ নয়। সফলতা অর্জনের পূর্বশর্ত হলো প্রথমে নিজের জীবনের ক্ষেত্রে সফলতা সংজ্ঞা নিরূপণ করা। সফলতার সংজ্ঞা একেকটি মানুষের কাছে একেক রকম। কেউ নিজের ব্যক্তিগত জীবনে আর্থিক সচ্ছলতা এবং পারিবারিক সুখ শান্তিকে সফলতা হিসেবে নির্ধারণ করে থাকে। আবার কেউ কেউ আর্থিক সচ্ছলতা বা পারিবারিক সুখ শান্তিকে বিসর্জন দিয়ে সমাজভূক্ত সকল মানুষের সুফলের জন্য কাজ করা এবং সামাজিক সম্মান অর্জন করাকে ব্যক্তিগত সফলতা হিসেবে গণ্য করে। তবে বৈজ্ঞানিকভাবে সফলতার সংজ্ঞা দেওয়া যায় এভাবে যে, সফলতা হলো সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে সুনির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কোনো কাজ সম্পন্ন করার সক্ষমতা। এটি নির্দিষ্ট কার্যক্ষেত্রের জন্য যেমন সত্য তেমনি নিজের সমগ্র জীবনের ক্ষেত্রেও সত্য হবে। কোনো একজন ব্যক্তির অর্জিত সফলতাকে তিনভাবে চিহ্নিত করা যায়। যথা :
১. তার অফিসিয়াল দায়িত্ব নির্ধারিত সময়ে সুচারু রূপে সম্পন্ন করে কার্যক্ষেত্রে সফল হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে। একই সাথে এর মাধ্যমে সে নিজের আর্থিক সচ্ছলতাকে নিশ্চিত করার কারণে আর্থিকভাবেও সফল হতে পারে।
২. ঐ ব্যক্তি তার পারিবারিক দায়িত্ব কর্তব্য তথা তার পরিবারের সদস্যদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা এবং প্রয়োজন অনুসারে তার কাছে পারিবারিক সদস্যদের প্রাপ্য সুবিধাদি প্রদান প্রভৃতি কর্তব্য গুলো সুচারুরূপে পালন করতে সক্ষম হলে, সে তার পারিবারিক জীবনে সফল হতে পারে।
৩. এছাড়াও প্রতিটি ব্যক্তিকে সমাজে বাস করতে হয় বিধায় তার জন্য স্বাভাবিক কিছু সামাজিক দায়বদ্ধতা তৈরি হয়। যেমন প্রতিবেশিদের সাথে সুসম্পর্ক, বন্ধুবাৎসল্য, দেশ ও আইনের প্রতি আনুগত্য প্রভৃতি। এই দায়বদ্ধতা থেকে তার উপর অর্পিত সামাজিক দায়িত্ব সুচারুভাবে পালনের দ্বারা সে সামাজিক ভাবে সফল ব্যক্তিকে পরিণত হতে পারে।
উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে দেখা যায় একজন মানুষের সফলতা অর্জনকে দুই ভাগে বিভক্ত করা যেতে পারে । এগুলো হলো :
ক. ব্যক্তিগত সফলতা
খ. সামাজিক সফলতা
পরিপূর্ণ সফলতা অর্জনের জন্য একজন মানুষকে উভয়ক্ষেত্রেই সমানভাবে সফলতা অর্জন করতে হবে। যেমন কোনো ব্যক্তি অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে নিজের ও পরিবারের সকল চাহিদা পূরণ করে ব্যক্তিগত সফলতা অর্জনে সক্ষম হলেও তাকে সফল ব্যক্তি বলা যাবে না কেননা সে অবৈধ উপার্জনের মাধ্যমে নিজের উন্নয়ন ঘটাতে সক্ষম হলেও তার অবৈধ কাজ দ্বারা সমাজ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এভাবে সে তার সামাজিক দায়বদ্ধতাকে অস্বীকার করার ফলে ব্যক্তিগতভাবে সফল হলেও সামাজিক ভাবে অসফল থাকার দরুন তাকে সফল ব্যক্তি বলা যাবে না। এজন্যই পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে সফলতা অর্জন বিষয়টি সহজ নয় এবং একজন মানুষ অনেক ক্ষেত্রে তার সমগ্র জীবন ব্যয় করেও পরিপূর্ণ সফলতা অর্জনে সক্ষম হয়।
তবে জীবনে সত্যিকার সফলতা অর্জনের জন্য কিছু মৌলিক শর্ত রয়েছে এবং একজন ব্যক্তি সেই মৌলিক শর্ত গুলো পূরণে সক্ষম হলে তার জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা সহজ হয়ে ওঠে। একই সাথে এই মৌলিক শর্ত গুলো তার সফলতা অর্জনের সম্ভাবনাকে সর্বাধিক করে তোলে।
সফলতা অর্জনের জন্য মৌলিক তিনটি শর্ত হলো :
১. পরিকল্পনা প্রণয়ন
২. পরিকল্পনার বাস্তবায়ন
৩. অব্যাহত প্রচেষ্টা
সামগ্রিক জীবনে সফলতা অর্জনের জন্য এই তিনটি শর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।