খাওয়ার রুটিন কেমন হওয়া উচিৎ?

খাওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন মানুষের রুচিবোধ যেমন ভিন্ন, ঠিক তেমনই বিভিন্ন মানুষের খাওয়ার সময়ও ভিন্ন। তবে খাওয়ার জন্য আমরা প্রায় সবাই একটা স্টান্ডার্ড নীতি মেনে চলি। সেটা হলো আমরা সকাল, দুপুর এবং রাতে খাই। সাধারণভাবে আমরা সকালে নাস্তা করি এবং মনে করি সকালের খাবারটা তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। দুপুরের খাবারটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আর রাতের খাবারটা মোটামুটি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। কিন্তু আপনি জানেন কি, খাওয়ার এই প্যাটার্নটি সম্পূর্ণ একটি ভুল প্যাটার্ন?আজকে আমি খাওয়ার নীতি নিয়ে সম্পুর্ন ভিন্ন একটি প্যাটার্ন তুলে ধরব।

ইংরেজিতে একটি কথা আছে- Eat morning like a king, eat lunch like a citizen, eat dinner like a poor man. অর্থাৎ সকাল বেলা খাও একজন রাজার মত, দুপুর বেলা খাও একজন সাধারণ নাগরিক এর মত, রাতের বেলা খাও একজন গরীব মানুষের মত। চলুন আমরা বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করি।

১। Eat morning like a king- সকাল বেলা খাও রাজার মতঃ

আমরা রাতের খাবার সাধারণত ১০ টার মধ্যে করি আর সকালের নাস্তা ৮ টায় করি। মাঝখানে ১০ ঘন্টার একটা খাদ্য বিরতি থাকে। এতটা দীর্ঘসময় আর কখনও কেউ খাদ্য বিরতি দেয় না। তাহলে দীর্ঘসময় পরের এই খাবারটা কেমন হওয়া উচিৎ? অবশ্যই শরীরের প্রয়োজন মত এবং ভালো পুষ্টিগুণ সম্পন্ন। কিন্তু আমরা কি করি?

আমাদের পেটের মধ্যে অত্যন্ত শক্তিশালী হাইড্রোক্লোরিক এসিড থাকে। এই এসিডটা এতই শক্তিশালী যে, এটা যেকোনো কিছুকে খুব সহজেই গলিয়ে ফেলতে পারে। এমনকি লোহার মত কঠিন পদার্থকেও মুহুর্তেই গলিয়ে ফেলে। আমাদের পেটের মধ্যে এই এসিডটা খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। যখন পেটে পরিপাক করার মত কোনো খাদ্যকণা না থাকে তখন কিন্তু এই এসিডটা বসে থাকে না। এটা পেটের উপকারী কোষগুলোর ক্ষতি করে যাকে আমরা আলসার বলে থাকি। এবার আপনিই বলেন, সকালবেলা কেন রাজার মত খাওয়া উচিৎ।

২। Eat lunch like a citizen- দুপুর বেলা খাও একজন সাধারণ নাগরিক এর মতঃ

সকালবেলা রাজার মত খেয়ে দুপুরবেলাও কিন্তু রাজার মত খাওয়া যাবে না। এসময় খেতে হবে একজন অতি সাধারণ নাগরিকের মত। দুপুরবেলা কেন সাধারণ খেতে হবে তার যৌক্তিকতা অনেক আছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত খাবার শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এতে আপনার ওজন বেড়ে যাবে।

রক্তে গ্লুকোজ এর পরিমান বেড়ে গেলে ডায়াবেটিস এর মত রোগে ভুগতে পার। রক্তনালীতে অতিরিক্ত পরিমান কোলেস্টেরল জমা হলে শরীরে রক্ত চলাচল ব্যহত হবে। এতে উচ্চ রক্ত চাপ, হৃদরোগ, মস্তিষ্কের স্ট্রোক হতে পার। তাছাড়া আপনার ডাইজেস্টিভ সিস্টেমটি ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। এতে আপনি বিভিন্ন ধরনের জটিল পেটের পীড়ায় ভুগবেন। তাই দুপুর বেলা খেতে হবে সাধারণ খাবার এবং পরিমানে সকালের চেয়ে একটু কম।

৩। Eat dinner like a poor man- রাতের বেলা খাও গরীব মানুষের মতঃ

রাতে যখন আমরা ঘুমিয়ে পড়ি তখন আমাদের শরীরের তেমন শক্তিক্ষয় হয় না। তাই খাবার থেকে এইসব শক্তি জমা হয় রক্তে। ফলে রক্তে গ্লুকোজ এবং কোলেস্টেরল এর পরিমান বাড়ে। হজম ক্ষমতা দুর্বল হলে রাতের অতিরিক্ত খাবার শরীরে খুবই খারাপ প্রভাব ফেলে।

তাছাড়া রাতে ভালো ঘুমানোর জন্যও অল্প খেতে হবে। ভাত বা রুটিতে থাকে প্রচুর পরিমানে কার্বোহাইড্রেট। যা শরীরের ওজন বৃদ্ধির জন্য দায়ী। রাতের বেলা এই ধরনের খাবার পরিহার করাই ভালো। এগুলো বাদে অন্যান্য তরল জাতীয় খাবার খাওয়া যেতে পারে।

খাওয়ার এই প্যাটার্নটি অনুসরণ করে আমরা আমাদের বিভিন্ন শারীরিক রোগ বালাই থেকে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ থাকতে পারি। শরীর সুস্থ থাকলে মন ভালো থাকবে। মন ভালো থাকলে যে কোনো কাজে সফলতা অর্জন সম্ভব।

Related Posts

20 Comments

মন্তব্য করুন