পরিপাক ক্রিয়ায় মদের প্রভাবঃ এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সর্বপ্রথম মুখ থেকেই প্রকাশ পায়। সাধারণতঃ মানুষের মুখে লালা সাদৃশ এক ধরনের ধাতু থাকে।। এ্যালকোহল পান করার কারণে মুখের লালা উৎপাদনের শক্তি ক্রমান্বয়ে কমতে থাকে, যদ্দরুন মাড়ীতে ক্ষত এবং ফোলা বা স্ফীতি দেখা দেয়। সুতরাং শরাবে অভ্যস্থ ব্যক্তিদের দাঁতগুলি খুবই দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়। তারপর কণ্ঠ এবং খাদ্যনালিতে তার প্রভাব দেখা দেয়। উভয় অঙ্গ পরস্পর একে অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত এবং উক্ত অঙ্গদ্বয় নেহায়েত কঠিন কাজ সম্পাদন করে।
উক্ত অঙ্গ দুটির উপর অনুভূতিশীল বিশেষ এক ধরনের আবরণ থাকে। এ্যালকোহল পান করার কারণে উক্ত আবরণটির উপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। ফলে অঙ্গদ্বয় ক্রমান্বয়ে দুর্বল হতে থাকে।
অঙ্গদ্বয়ের মধ্যে ক্যান্সার সৃষ্টির মূল কারণ হিসেবে মদ বা এ্যালকোহল ব্যবহারকেই ধরে নেওয়া হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে যে সকল সংস্থা ক্যান্সারের মত মারাত্মক ব্যাধিকে প্রতিরোধ করতে সচেষ্ট, তারা ২৯৮০ সালরে পর থেকে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে যথেষ্ট সতর্কতা ও দূরদর্শিতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে আসছে। এ কথা সর্বজন বিদিত যে, এ্যালকোহল পান করার কারণে পাকস্থলিতে ধ্বংসাত্মক ব্যাধির সৃষ্টি হয়। কারণ, রক্তে এক বিশেষ ধরনের চর্বি থাকে, যা প্রতিরক্ষামূলক কাজ করে। তা এ্যালকোহল ব্যাবহারের কারণে বিগলিত হয়ে যায়। অর্থাৎ এক ধরনের প্রতিরক্ষামুলক আবরণ সৃষ্টি করে। যার উপর হাইড্রোক্লোরিক এসিডের ক্ষতিকারক প্রভাব কার্যকয়ী হয় না।
যদিও এটা সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয় যে, যেমনিভাবে মদ বা এ্যালকোহল কণ্ঠনালী এবং খাদ্যনালিতে ক্যান্সার সৃষ্টির মূল উৎস হিসেবে কাজ করে। তেমনিভাবে পাকস্থলিতে ক্যান্সার সৃষ্টির ব্যাপারেও এ্যালকোহল উল্লিখিত ভুমিকা পালন করে থাকে।
মদের সর্বাপেক্ষা ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে ডিওডেনাম এর উপর। উক্ত স্থানটি খুবই স্পর্শকাতর এবং রাসায়নিক প্রভাবজনিত হয়ে থাকে। শরাব ডিওডেনিয়ামের উক্ত বৈশিষ্ট্যকে প্রভাবিত করে থাকে, যা বিশেষ ধরনের হজমকারী লালা উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখে।
শরাব হজম শক্তিকে ধ্বংস করার পর কলিজা থেকে সৃষ্ট লালা নির্গত করার ব্যাপারেও বিঘ্ন সৃষ্টি করে। মধ্যপায়ীদের ডিওডেনিয়াম এবং পিত্তবরণ সর্বদাই রোগাক্রান্ত থাকে অর্থাৎ উক্ত অঙ্গদ্বয়ের কার্যক্রম প্রায়ই যথাযথভাবে হয় না। পাকস্থলীর ইক্ত সমস্যা পারিপাক ক্রিয়া বিশেষ কার্যক্রম চালু রাথার কারণেই সম্ভব হয়ে থাকে। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত শরাবপায়ীদের এ নিয়ন্ত্রণ শেষ হয়ে যায়। তাদের পরিপাকক্রিয়াটি অনিয়মিত চলতে থাকে। যার ফলে শরীরের স্থলতা(মেদ)বেড়েযায়। কারণ, তাদের অপ্রত্যাশিত হজমক্রিয়ায় পরিপাকযন্ত্রের ফাঁকা স্থান চর্বি জমতে শুরু করে।
মূলত চর্বির আধিক্য হৃদযন্ত্রের উপর ছড়িয়ে পড়ে। হৃদযন্ত্রের রোগসমূহ বিস্তার লাভ করে। মদের সর্বাপেক্ষা ক্ষতিকর প্রভাব কিডনীর উপর পতিত হয়। মানুষের কিডনী ঐ অনুভুতি প্রবণ করে তোলে। এ অবস্থা প্রত্যেক মদ্যপকেই গ্রাস করে। কিডনীর উপর দুইভাবে মদের প্রভাব পতিত হয়।
১. মদ্যপানের অবস্থায় কিডনীর এ্যালকোহল সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ হয়ে যায়। ফলে মদ্যপায়ীর স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড ব্যাহত হয়।
২. কিডনীর সফল কার্যক্রম হল, একটি বিষয় থেকে অন্য বিষয়ের অনুভূতি লাভ। আর উক্ত অনুভূতি মদের সার্বক্ষনিক প্রভাবে বিনষ্ট হয়ে যায়। অবশেষে কিডনীকে সর্বক্ষণ একই বিষয়ের অনুভূতির চর্চা করতে হয়। এভাবে সর্বক্ষণ অপ্রয়োজনে শ্রম ও কষ্টের ফলে কিডনীর দুর্বলতা দেখা দেয়।
মদের এ প্রভাব কিডনীর জন্য বিপদজনক পরিণাম ডেকে আনে। তন্মমধ্যে সর্বপেক্ষা প্রসিদ্ধ হল কিডনী সঙ্কুচিত হওয়া। জীবদ্দশায়ই মদ পানকারীর কিডনী সম্পুর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যেতে দেখা দেয়। আরও বড় আশঙ্কা হল, মদ ব্যবহারে পর্যায়ক্রমে কিডনী সকল কার্যক্রম ধ্বংস করে দেয়।
ধ্বংসশীল কার্যাবলীর প্রথম হল মদ্যপানের দ্বারা কলিজা এমন কতগুলি রক্ত অঙ্গ সৃষ্টি করে, যা কলিজা নিজে নিজে সৃষ্টি করতে পারে না। ফলে কলিজার রক্ত তৈরি ক্ষমতাটি দুর্বল হয়ে পরে। ফলে সমস্ত মদ্যপায়ীরা আভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল হয়ে যায়। যদিও তাদের বাহ্যিক চেহারা টলমলে রক্তিম বর্ণ দেখা যায় এবং তাদেরকে হৃষ্টপুষ্ট মনে হয়। কলিজার রক্ত উৎপাদন ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে তাদের হাড্ডির মজ্জাও নষ্ট হয়ে যায়।
তাছাড়া কলিজার ঐ শক্তি যার দ্বারা দেহ-রক্ষাকারী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের বিভিন্ন প্রকার গ্লোবিন তৈরি হয়, বিশেষ হরে তৈরি হয়, উহা মদ্যপায়ীদের দেহ ভয়াবহভাবে হ্রাস পায়। ফলে মদ্যপায়ীদের মধ্যে রাগ প্রতিরোধ ক্ষমতা খর্ব হয়ে পড়ে। কখনও মদ হৃদক্রিয়াকে হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ফলে মদ্যপায়ী অচেতন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। একে কলিজার দেউলিয়াপনা বলা হয়। মদ পানে কলিজা ক্ষতিহ্রস্থ হয় নাই, এমন কোন দৃষ্টান্ত কলিজার ক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। এ বিষয়টিকে ব্যক্ত করার জন্য এর চেয়ে জোরালো আমার কোন বক্তব্য নেই।
শরাব বা মদের ভয়াবহ ক্ষতি থেকে বাচার জন্য আমাদের মদ সহ, ছাড়াও যেমন বিড়ি, তামাক, ইত্যাদি পবিহার করা অপরিহার্য।