জ্যোতিবিজ্ঞান বা এস্ট্রনমি বিজ্ঞানের এমন একটি শাখা যা নিয়ে মহাকাশ বিজ্ঞানিদের জল্পনা কল্পনার অন্ত নেই।সেই সাথে মহাকাশপ্রেমিরা সারা বছর জুড়ে অপেক্ষা করে জ্যোতিবিজ্ঞান সম্পর্কে মজার মজার তথ্য পাওয়ার জন্য। জ্যোতিবিজ্ঞান কিংবা এস্ট্রনমি শব্দটি গ্রীক শব্দ থেকে উৎপত্তি হয়েছে।ইংরেজি ভাষায় এস্ট্রনমি হলো নক্ষত্রের নিয়ম কিংবা নক্ষত্র চর্চা ।প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের একটি শাখা হিসেবে পরিচিত জ্যোতিবিজ্ঞান।গনিত, পদার্থবিজ্ঞান এবং রসায়নকে ব্যবহার করে জ্যোতিবিজ্ঞানে গ্রহ,উপগ্রহ,ছায়াপথ, ধুমকেতু,মহাজাগতিক বস্তুর সম্পর্কে বিচার,বিশ্লেষণ, পর্যালোচনা করা হয়। জ্যোতিবিজ্ঞানীরা মহাজাগতিক বস্তু এবং বিজ্ঞানের ঘটনাসমূহের ব্যাখ্যা এবং অনুসন্ধান করে থাকে। মহাকাশ সম্পর্কিত গবেষণায় জ্যোতিবিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত। এটি বিজ্ঞানের একটি বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা।
পৃথিবীর নির্দিষ্ট ভূখণ্ডের বাইরে ঘটে যাওয়া সমস্ত বিষয়টি জ্যোতিবিজ্ঞান এর অংশ বিশেষ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সাধারণত প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের প্রাচীনতম শাখা হিসেবে জ্যোতিবিজ্ঞান সুপরিচিত। প্রাচীন জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যবলনীয়, গ্রীক,ভারতীয়,মিশরীয়রা পূর্বে রাতের আকাশে তারা অবলোকন করত।পেশাদার জ্যোতিবিজ্ঞান রয়েছে দুটি উপশাখায় বিভক্তঃ
১.তাত্ত্বিক
২.পর্যবেক্ষণমূলক
১.তাত্তিক জ্যোতিবিজ্ঞানঃমহাজাগতিক বস্তুসমূহকে কম্পিউটার এর মাধ্যমে বিচার বিশ্লেষণ করাই এই জ্যোতিবিজ্ঞানের আওতাভুক্ত।
২.পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতিবিজ্ঞানঃমহাকাশ জ্যোতিবিজ্ঞানিক বস্তু সমূহকে বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা এবং সেই তথ্য সমূহকে পদার্থবিজ্ঞানের সুত্র সমূহের আলোকে বিচার বিশ্লেষণ করাই এই জ্যোতিবিজ্ঞান এর কাজ।
জ্যোতিবিজ্ঞানের এই দুটি শাখা একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত। কারণ তাত্তিক জ্যোতিবিজ্ঞানে মহাকাশ বিজ্ঞানের জটিল বিষয়সমূহের নিয়ে তথ্য এবং উপাত্ত সংগ্রহ করা হয়।আর পর্যবেক্ষণমূলক জ্যোতিবিজ্ঞানের সেই তথ্য উপাত্তর ফলাফলসমূহর সত্যতা যাচাই করা হয়।
পৃথিবীর বায়ুমন্ডল এর বাইরে মহাজাগতিক বস্তু সমূহ নিয়ে আলোচনা, পর্যালোচনা এবং সেই বিষয়সমূহ নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করাই জ্যোতিবিজ্ঞানের কাজ। কিন্তু বর্তমান কালে অধিকাংশ জ্যোতিবিজ্ঞান পদার্থবিজ্ঞানের সাথে আলোচনা এবং পর্যালোচনা করা হয়। তবে বর্তমান কালে জ্যোতিবিজ্ঞানকে আধুনিক জ্যোতিঃপদার্থবিজ্ঞান ধরা হয়।
গ্রহ এবং নক্ষত্রগুলোর অবস্থানগত মানচিত্র অংকনই প্রাচীন জ্যোতিবিজ্ঞানের প্রধান আলোচনার উপজিব্য বিষয় সমূহ। এই সকল ধারণ থেকেই চাঁদ, সূর্য, গ্রহ এবং নক্ষত্রসমূহ নিয়ে ব্যাখ্যা করা শুরু হয়। প্রাচীন বিজ্ঞনের এই সকল ধারণাই আধুনিক কালের জ্যোতিমিতি হিসেবে পরিচিত।সাধারণত প্রাচীনকালে জ্যোতিবিজ্ঞান চর্চার এক বিরাট বিপ্লব সাধিত হয়। তারই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে জ্যোতিবিজ্ঞান অনেক দূর এগিয়েছে।সর্বপ্রথম ব্যবিলনীয়রা জ্যোতিবিজ্ঞান চর্চার সূত্রপাত ঘটায়।তাছাড়া পরবর্তীতে গ্রীস এবং হেলেনীয় ব্যবিলনীয়রা দেখানো পথ অনুসরণ করেন।
পূর্বে যখন জ্যোতিবিজ্ঞানের এতটা বিস্তর ঘটেনি তখন নক্ষত্রের, সূর্য, চন্দ্রের পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে তাদের অবস্থান লিপিবদ্ধ করা হয়।তখন থেকে হালকা হালকা জ্যোতিবিজ্ঞান চর্চা শুরু হয়। পরবর্তীতে মিসরের জ্যোতিবিজ্ঞানী টলেমির গবেষণার উপর ভর করে জার্মানের জ্যোতিবিজ্ঞানের জোহানেস কেপলার কয়েকটি সূত্র প্রদান করে। পরবর্তীতে সূত্র সমূহ আধুনিক পদার্থ বিজ্ঞানের মূল ভিত্তি হয়ে থাকে। সপ্তাদশ শতকে বিজ্ঞানীদের দূরবীক্ষণের উদ্ভাবনের ফলে জ্যোতিবিদ্যা চর্চা শুরু হয়ে থাকে।
আধুনিক জ্যোতিবিদ্যাকে বিজ্ঞানের মৌলিক শাখা হিসেবে খুবই সুপরিচিত। সাধারণত মানুষের মহাবিশ্ব সম্পর্কে আগ্রহ দেখে এবং কৌতুহল থেকে আধুনিক জ্যোতিবিদ্যার বিস্তৃতি ঘটেছে।জ্যোতিবিজ্ঞান সম্পর্কে জানার নির্দিষ্ট কোনো সীমা পরিসীমা নেই।জ্যোতিবিজ্ঞান এর গবেষণা কোন বিশ্বাস কিংবা দর্শন এর জ্ঞান মাধ্যমে সীমিত করা যায় না।
জ্যোতিবিজ্ঞান বিষয়ে মানুষের আগ্রহের অন্ত নেই।কারণ মানুষ সবসময় চেয়েছে অজেনাকে চিনতে,অদেখাকে দেখতে।বর্তমানে জ্যোতিবিদ্যার চর্চা এগিয়েছে বহুদূর। তাছাড়া বিশ্বের অন্যান্য দেশ জ্যোতিবিদ্যায় চর্চায় এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশ এই দিকটায় রয়েছে খানিকটা পিছিয়ে আমার মতো অনেক শিক্ষার্থী জ্যোতিবিজ্ঞান নিয়ে আগ্রহ থাকলেও বাংলাদেশে জ্যোতিবিজ্ঞান নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের কোন ধরণের সুযোগ নেই।তবে যদি জ্যোতিবিদ্যাকে এগিয়ে নেবার ইচ্ছা থাকে সংশ্লিষ্টদের তাহলে এই বিষয়টি দেশের প্রায় প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে সেই সাথে গবেষণা খাতে অর্থের ব্যবস্থা করতে হবে।