আম কথাটার সাথে আমরা সবাই পরিচিত। আম খুবই লোভনীয় একটা ফল। কাঁচা এবং পাকা দুভাবেই খাওয়া যায়।
আম গাছ বড় হয় কিন্তু হাইব্রিড গাছ আজকাল বাড়ির ছাদেও লাগানো যাই। সাধারনত গ্রাম অঞ্চলে বড় বড় আম বাগান থাকে। যেখানে অনেক বড় বড় আমগাছ থাকে। যখন ঝড় হয় প্রচন্ড তখন অনেক আম ঝরে পড়ে গাছ থেকে। ঝড় শেষ হলে গ্রামের ছেলে মেয়েরা বাগানে যাই আম কুড়াতে। সেই আম দিয়ে আচার, মোরব্বা, খাটা , আম-ডাল, চাটনি, সালাদ কত কি হয়। কাঁচা আম এমনিতেই খোয়া যাই।
ছোট বেলাই বাবার সাথে যেতাম আমাদের নিজেদের বাগানে আম কুড়োতে। খুব ভয় লাগত যখন বিদুৎ চমকাতো, বাজ পড়ত। তবে খুব মজা লাগত কারন বাড়ির সবাই একসাথে আম-বাগানে যেত। গ্রামের মানুষো আসত কারন আমাদের বাগান অনেক বড় ছিল।
ঝড়ে যখন আম পড়ত দেখতে খুব ভালো লাগত। টুপ-টাপ করে আম পড়ত চারিদিকে। কোনটা রেখে কোনটা কুড়াব? এদিকে কুড়াতে যাই তো ওদিকে শব্দ শুনে মনে হয় অনেক বড় আম পড়েছে। আবার এদিকে ফিরে আসি… আবার মনে হয় ওদিকে গেলে ভালো হত… হয়ত অনেক বড় আম পড়েছে। এভাবে বেশ মজা লাগত।
যখন একটু বড় হলাম আর যেতাম না আম কুড়াতে বাগানে। আমার একটা ছোট বোন ছিল সেও যেতনা। অন্যেরা কুড়াত। বিকেলে শুধু একটু ঘুরতে যেতাম বাগানে।
এখন আমি উচ্চ মাধ্যমিকে মাত্র ভর্তি হয়েছি। আগের দিন ঝড় হয়েছে। বাড়িতে পুরুষ মানুশ কেও নেই। কাজে গেছে। তখন আনেকটা সকাল হয়েছে। গ্রামের মানুশের আম কুড়ানো শেষ। আমাদের জন্য যে কাজের লোক আম কুড়িয়েছে তার বাড়ি একটু দুরে, সে পরে আম দিয়ে যাবে। আম্মু হটাৎ বলল আজ আম-ডাল রান্না করব তোরা দুই বোন বাগান থেকে কয়টা আম নিয়ে আয়। এই সময় কেও বাগানে আম কুড়াই না, অনেক বেলা হয়েছে।
আমরা যেহেতু বড় হয়েছি তাই লজ্জা লাগাটাই স্বাভাবিক। তো গেলাম আম্মুর কথা মত। বাগানে অনেক আম আছে এখনো। আনতে গেলাম কয়েকটা কিন্তু আম দেখে লোভ সামলাতে না পেরে ব্যাগ ভর্তি করে কূড়ালাম দুই বোন আমরা। এবার বাড়ি ফেরার পালা।
বাড়ির পথে হাটছি দুইজন খুব আনন্দে। প্রায় বাড়ির সামনে চলে এসেছি হটাৎ দেখি আমাদের স্কুলের দুই বড় ভাই সামনের রাস্তা দিয়ে হেটে আসছে। আমরা দেখা মাত্রই লুকিয়ে পড়লাম গাছের আড়ালে। বড় ভায়েরাও বুঝতে পেরে দাঁড়িয়ে গেল। আমরা দুই বোন লজ্জাই লাল হয়ে গেছি, এত বড় মেয়েরা আম কুড়াতে এসেছে লোকে দেখলে কি বলবে এই ভেবে। অনেক্ষন হয়ে গেল প্রায়… আমরাও বের হচ্ছিনা আড়াল থেকে আবার ভায়েরাও যাইনা। উনারা দেখার চেস্টা করছেন। আমাদের ইয়ো সে যে অবস্থা লজ্জাই…।। । মনে হচ্ছিল গাছের ভীতর ঢুকে যাই। অবশেষে উনারা আমাদের অবস্থা বিবেচনা করে চলে গেলেন। আমরাও হাফ ছেড়ে বাঁচলাম আর পন করলাম আর কোনদিনও যাবনা আম কুড়াতে…
আর যাইনা কোনদিনও আম কুড়াতে আর। সেদিনই প্রথম আম কুড়াতে লজ্জা করেছিল আমাদের।