আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন সবাই। আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন।সবাইকে মাহে রমজানের শুভেচ্ছা। দেখতে দেখতে মাহে রমজান শেষ পর্যায়ে। আমরা এই রমাজান এর বাকিটুকু দিন ইবাদত বন্দিগীর মাধ্যমে অতিবাহিত করব সেই আশা ব্যক্ত করে আমি আমার লিখা শুরু করেছি।আজ আমি আপনাদের এমন কিছু আমলের কথা তুলে ধরব যা সালাতের পর আমল করবেন।
সালাতের পরই উঠে যাওয়া উচিত নয়। হাদিসে এসেছে, “যখন কোন মুসলিম সালাত আদায় করার পর তার সালাতের স্থানে বসে থাকে, তখন ফেরেশতাগণ অনবরত তার জন্য দু’আ করতে থাকেন— “হে আল্লাহ্! এই ব্যক্তিকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ্! এই ব্যক্তিকে রহমত করুন।” (এভাবে তারা বলতেই থাকেন) যতক্ষণ না সেই ব্যক্তি অযু নষ্ট করে বা তার স্থান থেকে উঠে যায়।” [সহিহ ইবনে খুযাইমা: ১/৩৭২, সহিহ আত তারগিব: ১/২৫১; হাদিসটির সনদ সহিহ]
অভ্যাস করতে পারেন কয়েকটি সহজ যিকর দিয়ে—
✓রাসূসুল্লাহ (সাঃ) প্রত্যেক ফরয নামায শেষে প্রথমে আল্লাহু আকবার তারপর ৩ বার আসতাগফিরুল্লাহ্ বলতেন। |মুসলিম,১২২২|
✓তারপর_এই_দোয়া:
اللّٰهُمَّ أَنْتَ السَّلاَمُ، وَمِنْكَ السَّلاَمُ، تَبَارَكْتَ يَا ذَا الْجَلاَلِ وَالْإِكْرَامِ
উচ্চারণঃ আল্লা-হুম্মা আনতাস্ সালা-ম, ওয়া মিনকাস্ সালা-ম, তাবা-রক্তা ইয়া যালজালা-লি ওয়াল-ইকর-ম
অর্থঃ হে আল্লাহ! আপনি শান্তিময়। আপনার নিকট থেকেই শান্তি বর্ষিত হয়। আপনি বরকতময়, হে মহিমাময় ও সম্মানের অধিকারী! [মুসলিম ১/৪১৪, নং ৫৯১]
✓প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করুনঃ
আবু উমামাহ (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“যে ব্যাক্তি প্রতেক ফরয নামাযের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ব্যতিত আর কোন বাঁধা থাকবে না।” (নাসায়ী হা/ ৯৪৪৮ তাবারানী ৭৮৩২)
✓প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর তিন তাসবিহ পাঠ করুনঃ
৩৩ বার سُبْحَانَ اللّٰهِ সুবহানাল্লাহ
৩৩ বার الْحَمْدُ لِلّٰهِ আলহামদুলিল্লাহ
৩৩ বার اللّٰهُ أَكْبَرُ আল্লাহু আকবার
আর একশত পূর্ণ করার জন্য বলবে-
لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِيرٌ
উচ্চারণঃ লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বদীর।
অর্থঃ একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কোনো হক্ব ইলাহ নেই, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সকল প্রশংসা তাঁরই এবং তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান।
তার পাপ সমুহ মাফ হয়ে যাবে, যদিও তা সমুদ্রের ফেনার মত হয়।” (সহীহ মুসলিম হা/১২৩০)
✓অধিকহারে দুরুদ পড়ুনঃ
দরুদ শরীফ ১০ বার,ফজর ও মাগরিবের পর। কেয়ামতের দিন রাসূল (সা:) এর শাফা’আত লাভ করবে।
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রাযি.) থেকে বর্ণিত, রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, من نسي الصلاة عليّ خطئ طريق الجنة “যে ব্যক্তি আমার উপর দুরুদ ভুলে গেল, সে জান্নাত ভুলে গেল। (ইবনু মাজাহ হা/৯০৪)
✓সূরা ইখলাস, ফালাক্ব ও সূরা নাস, প্রত্যেকটি ৩ বার করে, ফজর ও মাগরিবের পর। রাসূল (সা.) বলেন, সকাল-সন্ধ্যায় এগুলো পাঠ করলে তোমার আর কিছুরই দরকার হবে না।
✓ফজর ও মাগরিবের পর ৭ বার পড়বে –
– ﺃﻟﻠﻬﻢ ﺃﺟﺮﻧﻲ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺎﺭ
উচ্চারনঃ আল্লাহুম্মা আজিরনি মিনান নার।
অর্থঃ “হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দাও”
✓জাহান্নাম থেকে আশ্রয় এবং জান্নাত চাওয়ার দোআ: সকাল ও সন্ধায় ৩ বার করে:
اللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ الْجَنَّةَ وَأَعُوْذُ بِكَ مِنَ النَّارِ
উচ্চারনঃ আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল জান্নাতা ওয়া আ‘উযু বিকা মিনান্নার।
অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে জান্নাত চাই এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।
[আবূ দাউদ, নং ৭৯২; ইবন মাজাহ্ নং ৯১০। আরও দেখুন, সহীহ ইবন মাজাহ, ২/৩২৮]
✓সাইয়েদুল ইস্তিগফার বা আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়ার শ্রেষ্ঠ দোয়াঃ
এই দোয়া সকালে পড়ে রাতের আগে মারা গেলে অথবা রাতে পড়ে সকালের আগে মারা গেলে সে জান্নাতে যাবে। [বুখারী-৬৩০৬]
✓দুনিয়া ওআখেরাতের সকল চিন্তাভাবনার জন্য আল্লাহ্ই যথেষ্ট হবেন। ফজর ও মাগরিবের পর ৭ বার পড়বেঃ
حَسْبِيَ اللّٰهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيْمِ
উচ্চারণঃ হাসবিয়াল্লা-হু লা ইলা-হা ইল্লা হুয়া, ‘আলাইহি তাওয়াক্কালতু, ওয়াহুয়া রব্বুল ‘আরশিল ‘আযীম।
অর্থঃ আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট, তিনি ছাড়া আর কোনো হক্ব ইলাহ নেই। আমি তাঁর উপরই ভরসা করি। আর তিনি মহান আরশের রব্ব। [আবূ দাউদ ৪/৩২১]
✓কোনো কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না [ফজর ও মাগরিবের পর তিন বার বলবে]-
بِسْمِ اللّٰهِ الَّذِيْ لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِيْ الْأَرْضِ وَلاَ فِيْ السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْمُ
উচ্চারণঃ বিস্মিল্লা-হিল্লাযী লা ইয়াদ্বুররু মা‘আস্মিহী শাইউন ফিল্ আরদ্বি ওয়ালা ফিস্ সামা-ই, ওয়াহুয়াস্ সামী‘উল ‘আলীম।
অর্থঃ আল্লাহ্র নামে; যাঁর নামের সাথে আসমান ও যমীনে কোনো কিছুই ক্ষতি করতে পারে না। আর তিনি সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।”
[আবূ দাউদ, ৪/৩২৩, নং ৫০৮৮; তিরমিযী, ৫/৪৬৫, নং ৩৩৮৮]
✓কিয়ামতের দিনে আল্লাহর সন্তুষ্টি [ফজর ও মাগরিবের পর তিন বার বলবে]-
رَضِيْتُ بِاللّٰهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلاَمِ دِيْنًا وَّبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا
উচ্চারণঃ রদ্বীতু বিল্লা-হি রব্বান, ওয়াবিল ইসলা-মি দীনান, ওয়াবি মুহাম্মাদিন সল্লাল্লা-হু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামা নাবিয়্যান।
অর্থঃ আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নবীরূপে গ্রহণ করে আমি সন্তুষ্ট।
[আহমাদ ৪/৩৩৭; নং ১৮৯৬৭; নাসাঈ]
✓এছাড়া আমরা দৈনিক অন্যান্য তাসবীহ গুলো পড়বো [এগুলো আমরা দিনের যে কোন সময় পড়তে পারবো] যেমনঃ
লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হ -১০০ বার
লা ইলাহা ইল্লা আংতা সুবহানাকা ইন্নী কুংতু মিনায-যোয়ালিমীন -১০০ বার।
লা হাওলা ওয়া কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ -১০০ বার
সুব্হানাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহী, সুব্হানাল্লা-হিল ‘আযীম -১০০ বার
লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলক ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া ‘আলা কুল্লি শাই’ইন ক্বদীর -১০০ বার
আসতাগফিরুল্লাহ ওয়া আতুবু ইলাইহি -১০০ বার
প্রতি রাতে সুরা বাকারার শেষ ২ আয়াত পাঠ করা।
“যে ব্যক্তি সূরা বাকারার শেষের দুটি আয়াত পাঠ করবে, সে রাত তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে”