তিন নদীর মোহনা। বড় বড় ঢেউ এসে আছড়ে পরছে পাথরের খন্ডগুলোতে। নদীতে চলছে মস্ত বড় সব জাহাজ আর লঞ্চ। শান দিয়ে বাধানো বড় গাছটার নিচে বসে সূর্যাস্ত দেখা যায় খুব সুন্দর করেই।
কি ভাবছেন? আমি কোন কল্পকাহিনী বলছি? না। আমি বলছি আমার চাঁদপুর ভ্রমণের কাহিনী। আমি সুফিয়ান। ঘুরাঘুরি করি আর বিচিত্র সব এলাকার বিচিত্র সব খাবার খেয়ে থাকি। আজকের ব্লগে জানতে পারবেন চাঁদপুর ভ্রমণের আদ্যোপান্ত তো চলুন শুরু করি।
প্রথমেই সকাল ৬.৩০ এ পৌছে গেলাম সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে। এখান থেকে প্রতিদিন আধাঘন্টা পর পর চাঁদপুরের উদ্যেশ্যে লঞ্চ ছেড়ে যায়। আমরা সকাল ৭ টার লঞ্চে উঠলাম। যেহেতু জার্নিটা মাত্র ৩ ঘন্টার তাই আমি ১০০ টাকা দিয়ে ডেকের টিকেট কাটলাম। ৭ টা বেজে যখন ৫ মিনিট তখনই আমাদের লঞ্চ চলতে শুরু করলো। সকাল বেলার নাস্তা এখনো করিনি। কারণ চাঁদপুরের তাজা ইলিশ যে আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
এক কাপ চা নিয়ে চলে গেলাম ছাদে। আর উপভোগ করলাম সুন্দর সূর্যোদয়। দেখতে দেখতে সকাল ১০ টায় চলে এলাম চাঁদপুরে। লঞ্চ টার্মিনালে পৌছতে না পৌছতেই ছোট ছোট নৌকা আমাদের লঞ্চের কাছে চলে এলো। তাতে ছিলো তাজা ইলিশের সমাহার।
লঞ্চ থেকে নেমে আমরা ৬০ টাকা দিয়ে পেটপুরে নান রুটি আর সবজি দিয়ে নাস্তাটা সেরে নিলাম। তারপর একটা অটো ভাড়া করে চলে গেলাম শাহাবুদ্দিন স্কুল এন্ড কলেজে। শাহাবুদ্দিন স্কুলএন্ড কলেজ হলো এমন এক প্রতিষ্ঠান যা তৈরি হয়েছে প্রাকৃতিক সকল উপাধান দিয়ে। এটি একটি দর্শনীয় স্থান।
তারপর সেখান থেকে গেলাম শাহরাস্তিতে অবস্থিত রাস্তি শাহ এর মাজার দেখতে। এখানে আছে মস্ত এক দিঘী যার তিনটি পাড়। কথিত আছে এই দিঘীটি নাকি পরীরা খনন করেছিলো।
শাহ-রাস্তি থেকে চলে গেলাম হাজীগঞ্জ বড় মসজিদ দেখতে। চাঁদপুর জেলার রয়েছে অনেক ইতিহাস। চাঁদপুরের নামকরণ নিয়ে রয়েছে মতান্তর কেউ বলে চাঁদ সওদাগরের নাম থেকে হয়েছে তো কেউ বলে চান পাগলের নাম থেকে হয়েছে।
এরপর আমরা চলে এলাম মিনি কক্সবাজার নামে পরিচিত বালুচরে। এখানে প্রতি বছর শীতের সময় বহু পর্যটক আসে। এখানে আসতে ট্রলার ভাড়া লেগেছে মাত্র ৪০ টাকা। যদি রিজার্ভ নিয়ে আসেন তাহলে একটু দামাদামি করেই ট্রলার ঠিক করবেন।আর একটি কথা, যারা সাতার জানেন না তারা রিস্ক নিবেন না। কারন এখানে কিছুদিন পর পরই বড় বড় দূর্ঘটনা ঘটে। সেখানে গিয়ে দেখলাম মুন্সীগঞ্জ থেকে ঘুরতে আসা কিছু মানুষ ফুটবল খেলছে। আমিও যোগ দিলাম তাদের সাথে।
যাইহোক এখন আমরা চলে যাবো ইলিশ খেতে। আমরা চলে গেলাম বড় স্টেশনে। এখানে কাচা মাছ আপনি পছন্দ করে ভেজে নিয়ে খেতে পারবেন। আমরা ইলিশ পছন্দ করে দামাদামি করে ১২০ টাকা দিয়ে ভেজে তারপর খেলাম। চাঁদপুরের তাজা ইলিশ দিয়ে পেটপুরে খেয়ে নিলাম। এক কথায় অসাধারণ ছিলো। সময় এখন ঘড়ির কাটায় বিকাল ৫ টা বেজে ৬ মিনিট। হেটে হেটে চলে গেলাম তিন নদীর মোহনা দেখতে। প্রচন্ড বাতাস তার সাথে লঞ্চ আর জাহাজের সাইরেন, পাথরের খন্ডে এসে আছড়ে পরছে বড় বড় ঢেউ আহ কি চমৎকার লাগছে।
একটু পর সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে একটা বড় ডাব খেলাম মাত্র ৩০ টাকা দিয়ে। অবাক হয়ে গেলাম দাম শুনে। এমন ডাব ঢাকায় সাধারণত ৭০-৮০ টাকা হয়ে থাকে। শুধু কি দামে ভালো? কি চমৎকার তাদের ব্যাবহার। এসেছিলাম শুক্রবার। পরদিন কলেজ খোলা না থাকলে থেকে যেতেম এখানে।
সন্ধ্যা ৭ টার লঞ্চে ফিরে এলাম ইট- পাথরের শহর ঢাকায়। তো এই ছিলো আমার এক দিনের চাঁদপুর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা। এক দিনের ভ্রমণের জন্য সেরা একটি স্থান এই জেলা। চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন চাঁদপুর থেকে মাত্র ১০০০-১৫০০ টাকা খরচ করে। আমার কিন্তু মাত্র ৭৮০ টাকা লেগেছিলো। কেমন লাগলো কমেন্টে অবশ্যই জানাবেন। ধন্যবাদ।