আসসালামু আলাইকুম।।
লা-মাসিয়া। ফুটবল ফ্যানদের কাছে যা বার্সার আঁতুড় ঘড় নামেই বেশী পরিচিত। মাসিয়ার নাম শুনলেই ফুটবল পিপাসুদের চোখের সামনে ভেসে উঠে মেসি, জাভি, ইনিয়েস্তা, বুসকেটসদের মত সবুজ ক্যানভাসের পিকাসোদের নাম, যাদের কাছে বলের প্রতিটি ছোঁয়া যেন তুলির একেকটি আঁচর! ৯০ মিনিট পার হয়ে যাওয়ার পরেও যাদের নান্দনিক শিল্পকর্মের রেশ দর্শকদের চোখে রয়ে যায় আরো বহু, বহুক্ষন!
অনেক ফুটবল বোদ্ধাদের মতেই মাসিয়া তার সর্নালী অতীত পেছনে ফেলে এসেছে অনেক আগেই। কিন্তু এটা আসলে কতটা সত্য? একটা একাডেমির সাফল্য কি? প্রতিবছরই কি একজন করে মেসি, জাভি কিংবা ইনিয়েস্তার মত গ্রাজুয়েট পাওয়া সম্ভব? যে মানুষগুলো থেকে ফুটবলের ইতিহাস নতুন করে শুরু করা যায়, প্রতি বছরই এমন কিছু খেলোয়াড় প্রডিউসকরাকে যদি একটা একাডেমির মানদন্ড ধরা হয়,তবে তা বড় অন্যায় হয়ে যাবে।
জাভি, মেসি, ইনিয়েস্তা, বুসি, পিকে, ফেব্রিগাস, পেদ্রোদের মত একটা গোল্ডেন জেনারেশন সব সময় পাওয়া সম্ভব নয়। নাহলে মাঠে কেন আজও মেসির মত আরেকজন খুঁজে পাওয়া গেলো না?
আমরা তাই মাসিয়াকে বাতিলের খাতায় ফেলে না দিয়ে বাস্তবতার দিকে চোখ ফেরাতে চাই। আরেকজন মেসি, জাভি কিংবা ইনিয়েস্তা হয়ত আমরা পাবোনা, কিন্তু নিশ্চই আঁতুড়ে এমন কেউ বড় হচ্ছে, যারা নিকট ভবিষ্যতে নিজেদের নাম ফুটবল দুনিয়ায় চেনাতে পারবে স্বতন্ত্র ভাবে।
আপনাদের জন্য রয়েছে নতুন এক মাসিয়ানের গল্প; “লামিনে ইয়ামাল”।
লামিনে ইয়ামাল; ঊষাক্ষনের রক্তিম সূর্য!
২০১৯ সালের ডিসেম্বরের ২৭ তারিখ, আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত হলো লা-লীগা প্রমিজেজ (অনুর্দ্ধ ১২ দলের বহুজাতিক ক্লাবের প্রতিযোগিতা) এর বার্সেলোনা ভার্সাস রিয়েল বেটিসের ম্যাচের একদম অন্তিম সময়ে দর্শনীয় এক গোল করে বসলো এক পিচ্চি। পরের দিন মাদ্রিদ ভিত্তিক স্পেইনের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক সেই পিচ্চিকে নিয়ে হেড লাইন করে ফেললো
“নিজের মধ্যে মেসির প্রতিচ্ছবি দেখাচ্ছে লামিনে ইয়েমাল!”
এমনকি লা-লীগার অফিসিয়াল পেইজও সেই গোলের ভিডিও দিয়ে ইয়ামালকে মেসির সাথে তুলনা করে ক্যাপশন দিয়ে পোস্ট দেয়!😍
এখনো ১২ পার না হওয়া এক কিশোরকে এখনি মেসির সাথে তুলনা করা অবশ্যই বাড়াবাড়ি, কিন্তু কিছু কিছু প্রতিভা আপনাকে বাধ্য করবে নিজের সীমা অতিক্রম করে তাকে নিয়া বাড়াবাড়ি রকমের বাড়াবাড়ি করতে, ইয়ামাল তেমনই একজন!
লা-মাসিয়ায় ভর্তি হতে হলে আপনার জন্য দুইটা রাস্তা খোলা আছে। প্রথমত, আপনাকে লিওনেল মেসি, কিংবা লুইস সুয়ারেজের সন্তান হতে হবে, তাহলে সুরসুর করে সেই পিচ্চিকাল থেকেই মাসিয়ার এন্ট্রির টিকেট পেয়ে যাবেন।
আর যদি এদের সন্তান হয়ে জন্মানোর সৌভাগ্য না হয় তাহলে? একটা বাচ্চাকে শৈশবেই এমন কিছু প্রতিভা দেখাতে হবে, যা মেসি কিংবা জাভিরা শৈশবেই দেখিয়েছিলো। আর লামিনে ইয়ামালের বাবার নাম যেহেতু কোন বার্সেলোনা প্লেয়ারের সাথে মিলে যাচ্ছেনা, সুতরাং বুঝাই যাচ্ছে শৈশবে নিজের প্রতিভার বিচ্ছুরন ঘঠিয়েই মাসিয়ায় নিজের জায়গা করে নিয়েছে ইয়ামাল!
২০০৭ সালের ১৩ই জুলাই বার্সেলোনা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে মাতারো শহরে মরোক্কান পিতা এবং ইকুইটেরিয়াল গিনির মাতার সংসারে জন্মগ্রহন করে ইয়ামাল। বার্সেলোনা যখন প্রথম ইয়ামালকে স্কাউট করে, তখন তার বয়স মাত্র সাড়ে চার। প্রতিবেশী এক শহরের একাডেমিতে খেলার সময় বার্সার নজর কারে ইয়ামাল। কিন্তু লা-মাসিয়ায় ভর্তির জন্য সর্বনিন্ম ৫ বছর বয়স প্রয়োজন। কোন ঝুকি না নিয়ে বার্সা তখনি ইয়ামালের বাবার সাথে মৌখিক কথা বলে মাসিয়াতে ইয়ামালের নাম এনরোল করে রাখে, যেন ঠিক পাঁচ বছর পূর্ন হবার সাথে সাথে মাসিয়ার ‘প্রি-বেঞ্জামিনে’ যোগ দিতে পারে ইয়ামাল।
তখন থেকেই বার্সেলোনার দর্শন, সংস্কৃতি এবং খেলার ধরনের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়ে, সময়কে প্রধান প্রতিপক্ষ ধরে প্রতিটা দিন নিজেকে নিজের চেয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে ইয়ামাল। প্রতিপক্ষ যে বয়সের কিংবা ফিজিক্যালিটিরই হোকনা কেন, নিজের দক্ষতা, সক্ষমতা এবং প্রতিভার বিচ্ছুরন দিয়ে প্রতি ম্যাচেই গোলের বিষ্ফোরন ঘটিয়ে চলছে ইয়ামাল। বয়স ভিত্তিক প্রায় প্রতিটি প্রতিযোগীতারই টপ গোল স্কোরারের তালিকায় উপড়ের দিকেই থাকে ইয়ামালের নাম। ধারাবাহিক এই ভালো খেলার কারনে উ-১২ দলেই অধিনায়ত্বের আর্ম ব্যান্ড উঠে যায় ইয়ামালের বাহুতে!👀
কথা শুরু হয়েছিলো লা-লীগা প্রমিজেজ নিয়ে। ২০১৯ এ অনুষ্ঠিত এই ট্যুর্নামেন্টেও ৭ গোল করে সর্বাধিক গোল স্কোরার হয় ইয়ামাল। এবং ট্যুর্নামেন্টের মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার হিসেবেও নির্বাচিত হয় , কিন্তু বার্সেলোনা বয়স ভিত্তিক দলগুলোতে ব্যক্তিগত পুরষ্কার থেকে খেলোয়াড়দের দূরে রাখে যেন তাদের ভীতর অল্প বয়সেই কোন প্রকার অহংকার না এসে পরে, একারনে MVP এওয়ার্ড নিতে পারেনি ইয়ামাল। কিন্তু এই বয়সেই নিজেকে মেসির সাথে ব্রাকেট বন্দি করতে পারা একটা উ-১২ ট্যুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়ারের পুরষ্কারের চেয়ে কম অর্জন কি?😮
ধন্যবাদ।।❤