- আচ্ছামুআলাইকুম। সবার জন্য রইল ঈদের শুভেচ্ছা। জীবনের অনেক গুলো বছর পার করে দিয়ে একটা সময়ে এসে যখন সমাজের চারপাশের মানুষ গুলোর দিকে তাকালাম তখনই মনে হল,জীবন চলার পথে অনেক অসঙ্গতি। কিছুতেই মেলাতে পারিনি অনেক কিছু। কষ্ট পেয়েও চুপ করে ছিলাম। এমন কেন? কেন এমন হচ্ছে? কত প্রশ্ন মনে এসেও উত্তর খুঁজে পাইনি বা খুঁজতে চেষ্টা ও করিনি।
- আজকের এ সমাজ,সংসার আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে সমাজে আমাদের ও কিছু দায় বদ্ধতা আছে। আমাদের ছেলে মেয়েরা যা দেখছে,যা শিখছে তাতে ভুল হতে পারে। আমরা পারি সে ভুলকে শুধরে দিতে। আমরা একটু চেষ্টা করলেই আমাদের জীবন থেকে শিক্ষা দিয়ে ,আমরাই আমাদের পরবর্তী জীবন গুলোকে বদলে দিতে পারি।
- ভোরের আজান শোনার সাথে সাথে বিছানা ছেড়ে উঠে যেতে হবে এটা ছিল আমার মায়ের কড়া আইন। কারও সাধ্য ছিল না ফযর নামাজ না পড়ে ঘুমিয়ে থাকা। নামাজ পড়ে পড়তে বসা তারপর সময় মতো নাস্তা করা ,সংসারের টুকিটাকি কাজে হাত লাগানো প্রতিদিনের নিত্য অভ্যাস। এতে কোন ত্রুটি হতো না। আমরা বুঝতেই পারিনি আমাদের মনের অজান্তে কখন হয়ে গেছে আমাদের সকালের সৌন্দর্য চর্চা অজুর মাধ্যমে,হয়ে গেছে শারীরিক ব্যায়াম,পেয়েছি সুস্বাস্থ্য সকালের সময় মতো নাস্তায়। তারপর নিত্যদিনের রুটিন মাফিক শিক্ষা।
- আমার আম্মা আমাদের এ সবকিছুর একজন সেরা প্রশিক্ষক ছিলেন। কত গুণের কথা বলবো। বলে শেষ করা সম্ভব নয়। অসাধারণ গুণের অধিকারী একজন মায়ের সন্তান হিসেবে সব সময় আমরা প্রশংসা শুনে এসেছি। সবাই বলতে ছেলে মেয়ে গুলো কত ভালো। এখন তো সবাই এক বাক্যে একটা কথাই বলে রত্নগর্ভা মা। কথাটাতে আমার একটু অন্যরকম মনে হয়। রত্নগর্ভা মা না বলে রত্ন মায়ের সন্তান বললে হয়তো ঠিক হতো। কত শ্রম কত সাধনা কত প্রশিক্ষণ দিয়ে একটা সন্তানকে মানুষ করা।
- তাই সন্তানের ভালো হওয়ার জন্য পুরোপুরি অবদান মা বাবারই থাকে।প্রত্যেক মা তার সন্তানের একজন শিক্ষক,একজন ডাক্তার,একজন বন্ধু,একজন অভিভাবক। সব মায়ের প্রতি আমার শ্রদ্ধা সম্মান রেখেই কথাগুলো বলছি কিন্তু আমার আম্মা সব ব্যপারে আরও বেশি পারদর্শী,আরও বেশি ব্যতিক্রম।আমাদের আত্মীয় স্বজন,বন্ধু বান্ধব এবং পরিচিত মানুষদের কথায় বুঝতে পারতাম সব সময়।এতটা গভীর ভাবে ভাবিনি কখনো।এখন আমি অবাক হই আমাদের আম্মার কথা ভেবে।সংসারের সব কিছুর প্রতি খেয়াল রাখার পরও দৃষ্টি নন্দন হাতের কাজ যা শেখার জন্য আমাদের আত্মীয় স্বজনকে দেখতাম সব সময় আম্মার সাথে সাথে থাকতে।
- আমাদের জন্য তিনি ছিলেন রূপ চর্চার সেরা প্রশিক্ষক। হিজাবি সৌন্দর্য কিভাবে ফুটিয়ে তুলবেন আমাদের মাঝে এ নিয়ে চিন্তা আর সৌন্দর্য দান কোনটাতে ত্রুটি ছিল না। আমাদের আরবি শিক্ষক আমাদের আম্মা। এখনও কোন দোয়া পড়লে উপকার হবে সে চিন্তায় অস্থির থেকে আমাদেরকে বুঝিয়ে দিতে পারলেই খুশি।
- সকালে ঘুম থেকে উঠা থেকে শুরু করে আবার ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত কত নিয়ম।নিয়ম মানতে মানতে নিয়মের মধ্যে বন্ধী মনে হতো। সবার সাথে সম্মান দেখিয়ে কথা বলা,ছোটদের স্নেহ করা। সামাজিকতা বজায় রাখা। পাশাপাশি অন্যান্য দক্ষতা অর্জন যেমন খেলাধুলায় অংশ গ্রহণ ,গান,আবৃত্তি সব কিছুর সেই প্রশিক্ষণ দিয়ে সেরা করে তোলার চেষ্টা এ যেন আমাদের জীবনের পরম পাওয়া।
- মানুষ আমাদের হীরার টুকরো বা সোনার ছেলে মেয়ে বললে খুশি হতাম কিন্তু কখনো ভাবিনি আসলে এখানে আমাদের ও কিছুটা মায়ের গর্ব করার মতো বিষয় ছিল কারণ আমরা মা বাবাকে ভয় পেয়েছি,মা বাবার কথা মেনে চলেছি। কখনো যদি কিছু অমান্য হয়েছে মনে মনে কষ্ট পেয়েছি। এ কষ্ট আর পরে ভুল করতে দেয়নি।
- আমাদের জীবনের এ শিক্ষা যদি আমাদের বর্তমান প্রজন্মকে আমরা ধরিয়ে দিতে পারি তাহলে আজকের সমাজে যে সমস্যা গুলো চোখে পড়ে সেগুলো আর চোখে পড়তো না।
- কোন মায়ের অভিশাপে সমাজ দূষিত হতো না। কোনো মা বাবাকেই বৃদ্ধাশ্রমে যেতে হতো না। অবর্ণনীয় কষ্টে দিন কাটাতে হতোনা পরিবারের বৃদ্ধ মানুষ গুলোকে।
পরবর্তী প্রজন্মের প্রত্যেকটা সন্তান তার জীবন চলার পথকে সুন্দর সুখময় করে তুলবে এ শুভকামনা রইলো সবার জন্য।