আসসালামু আলাইকুম সম্মানিত দর্শকমণ্ডলী।। আজকে আমি বাংলাদেশের অন্যতম একটি মারাত্মক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করব।।। সমস্যাটি হচ্ছে স্ট্রোক ( stroke) ।। স্ট্রোক কি??
যদি মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহে কোনো ব্যাঘাত ঘটে এবং স্নায়ুতন্ত্রের কাজের ব্যাঘাত ঘটলে তাকে স্ট্রোক (stroke) বলে।।। আরেক ভুল ধারণার ব্যাপারে জানিয়ে রাখি যে, স্ট্রোক হয় মস্তিষ্কে, হার্টে নয়।।। স্ট্রোক কেন হয়?? আমাদের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বা মস্তিষ্কের রক্তনালির মধ্য রক্ত জমাট বেধে বাধাগ্রস্ত হওয়া এই দুই ভাবে স্ট্রোক হতে পারে।।। সাধারণত উচ্চ রক্তচাপ এর কারনে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হয়ে স্ট্রোক হতে পারে।।।
এখন আসি এই রোগের লক্ষণ নিয়ে।। এই রোগের লক্ষণগুলো হঠাৎ করেই প্রকাশ পায়।। যেমনঃ বমি হওয়া, প্রচন্ড মাথা ব্যাথা করা, কয়েক মিনিটের মধ্যে রোগীর জ্ঞান হারান, ঘাড় শক্ত হয়ে যেতে পারে, মাংসপেশি শিথিল হয়ে যেতে পারে, শ্বসন এবং নাড়ির স্পন্দন কমে যায়, মুখ মন্ডল লাল বর্ণ ধারণ করে ইত্যাদি।।।অনেক সময় খুব মারাত্মক উপসর্গ ছাড়াই শুধু মুখ বেঁকে যাওয়া বা অল্প সময়ের জন্য অজ্ঞান হয়ে গিয়ে আবার জ্ঞান ফিরে আসা এ জাতীয় লক্ষণ দেখা যায়।।। স্ট্রোক কতটা মারাত্মক সেটা বলতে হলে অন্তত কয়েকদিন রোগীকে পর্যবেক্ষণ করা দরকার, সে সময় তাঁকে হাসপাতালে এবং চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে রাখতে হয়।।। তাই স্ট্রোক হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে।।। উপযুক্ত চিকিৎসা করা হলে রোগীর বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তবে যদি রক্তক্ষরণজনিত স্ট্রোক হয় তাহলে বাঁচার নিশ্চয়তা দেয়া সম্ভব নয়।। যদি বেঁচে যায় তাহলে কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন অব্দি তার জ্ঞান ফিরে পায়।। তবে রোগী ছটফট করে এবং আস্তে আস্তে আসার হয়ে যাওয়া অঙ্গে দৃঢ়তা ফিরে আসে।।।জ্ঞান ফিরে এলেও বাক নিয়ন্ত্রণকেন্দ্র যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তবে রোগীর কথা জড়িয়ে যায়, পক্ষাঘাত বা অবশ হয়ে যাওয়া অঙ্গ যেমন হাত সংলগ্ন পেশি নড়াচড়ায় শক্তি ফিরে।। আসে কিন্তু হাত দিয়ে সূক্ষ্ম কাজ করার ক্ষমতা সাধারণভাবে পুরোপুরি ফিরে আসেনা।। চিকিৎসার প্রাথমিক পর্যায়ে আরোগ্যলাভ দ্রুত হতে থাকে কিন্তু দুমাস পরে উন্নতি ক্রমশ কমে আসে।। হঠাৎ আক্রমণ এ স্নায়ু যে কার্যক্ষমতা হারায় সেগুলো দ্রুত আরোগ্য লাভ করে এবং কার্য ক্ষমতা ফিরে পায়।।। আর যেসব স্নায়ু পুরোপুরি কার্যক্ষমতা হারায় সেগুলোর ক্ষমতা চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়।।।
এখন আসি চিকিৎসা সম্পর্কে।। মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বেধেছে কিনা তা নির্ণয় করে এ রোগ নিশ্চিত করা যায়।। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ বন্ধ করা সম্ভব না কিন্তু অনেক সময় অস্ত্রোপচার এর মাধ্যমে জমে থাকা রক্ত বের করা যায়।।। তারপর একজন ফিজিওথেরাপিস্ট এর পরামর্শ মোতাবেক কাজ করলে রোগীর অঙ্গ শক্ত হয়ে যাওয়া আটকানো সম্ভব।।।
এখন আসি প্রতিরোধের উপায় নিয়ে।। ধূমপান পরিহার, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, ডায়াবেটিসের নিয়মিত ঔষধ সেবন, দুশ্চিন্তামুক্ত সুন্দর এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করলে এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব।।।।