টাইটানিক বিশ্বের সর্ববৃহৎ সামুদ্রিক জাহাজ। প্রাচিন গ্রিকদের শক্তিশালী দেবতার নাম ছিল টাইটান। আর তার নামানুসারেই এই জাহাজটার নাম রাখা হয় টাইটানিক। এর পুরো নাম RMS TITANIC (Royal mail steamer Titanic)
জাহাজটি এতই বড় ও মজবুত যে এর নির্মাতারা ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন স্বয়ং ঈশ্বরও এই জাহাজকে ডুবাতে পারবেন না! (নাউজুবিল্লাহ) সমুদ্রে একটি পাটকাঠি ডুবে যাবে তবুও এই জাহাজ ডুববে না! জাহাজটির নাম দেওয়া হয়েছিল টাইটানিক। অথচ সবার ধারণা ভুল প্রমান করে ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিল রাত ১১ টা ৪৫ মিনিটে উত্তর আটলান্টিক সমুদ্রের ডুবন্ত একটি আইসবার্গের সাথে ধাক্কা লেগে সমুদ্রের নীল জলে তলিয়ে যায় এই টাইটানিক।
হল্যান্ডের “হোয়াইট স্টার লাইন ” কোম্পানি এ জাহাজ টি নির্মান করে। জাহাজটির নির্মানকাজ শেষ হয় ১৯১১ সালের ৩১শে মে। টাইটানিক নির্মান করতে ৩০০০ জন শ্রমিকদের ২৬ মাস সময় লেগেছিল। ৭০০০ টন এবং ২৭৫ মিটার দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট জাহাজ টি নির্মান করতে সেসময় খরচ হয়েছিল ৭.৫ মিলিয়ন ডলার।
জাহাজ টি প্রায় তিনটি ফুটবল খেলার মাঠের সমান বড় ছিল। জাহাজে স্ক্রু মেম্বার সহ ৩৪০৭ জন যাত্রী বহন করতে সক্ষম ছিল।
১৯১২ সালের ১০ই এপ্রিল বিখ্যাত ক্যাপ্টিন এডওয়ার্ড জন স্মিথ এর নেতৃত্বে ৮৮৫ জন স্ক্রু মেম্বার এবং ১৩১৭ জন যাত্রিসহ সাউদাস্পটন থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করে। টাইটানিক টি যখন পরিক্ষামুলক ভাবে ভাষানো হয়। তখন জাহাজ টি দেখতে জড়ো হয়েছিল প্রায় এক লক্ষ দর্শক। যাত্রার শুরুতেই মাত্র চার ফুটের জন্য “SSCT of New York ” জাহাজের সাথে সংঘর্ষ এড়াতে সক্ষম হয়।
১৪ই এপ্রিল দুপুর দুইটার “America ” নামের একটি জাহাজ থেকে রেডিওর মাধ্যমে টাইটানিক জাহাজ কে জানায় তাদের যাত্রা পথের সামনে বড় একটি আইসবার্গ রয়েছে। “mesaba” নামের আরও একটি জাহাজ থেকে একই সতকর্তা পাঠানো হয়। জাহাজের ক্যাপ্টিন এই সতর্কবার্তা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়।
নিস্তব্ধ আটলান্টিকের বুকে সবে মাত্র প্রবেশ করেছে টাইটানিক। আটলান্টিকের তাপমাত্রা শুন্য ডিগ্রির কাছাকাছি নেমে যায়। টাইটানিক যখন দুর্ঘটনাস্থলের কাছাকাছি চলে আসে তখনই জাহাজের ক্যাপ্টিন সামনে আইসবার্গ এর সংকেত পান। এগুলোর মাত্র ৮ ভাগের ১ ভাগ পানির উপরে থাকে। সবচেয়ে বড় অংশটাই দেখা যায় না।
তখন তিনি জাহাজের গতি সামান্য দক্ষিণ দিকে ফিরিয়ে নেন। সে সময় টাইটানিকের পথ পর্যবেক্ষন কারীরা সরাসরি টাইটানিকের সামনে সেই আইসবার্গটি দেখতে পায় কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। টাইটানিকের ফার্স্ট অফিসার মুর্ডক আকস্মিকভাবে বামে মোড় নেওয়ার অর্ডার দেন এবং জাহাজটিকে সম্পূর্ণ উল্টাদিকে চালনা করতে বা বন্ধ করে দিতে বলেন। টাইটানিককে আর বাঁচানো সম্ভব হয় নি। এর ডানদিক আইসবার্গের সাথে প্রচন্ড ঘষা খেয়ে চলতে থাকে। ফলে টাইটানিকের প্রায় ৯০ মিটার অংশ জুড়ে চিড় দেখা দেয়। টাইটানিক জাহাজটি যেই স্থানে ডুবেছিল সেই স্থানের নাম হলো ‘গ্রেট ব্যাংকস অফ নিউফাউন্ডল্যান্ড’।
রাত ২ টা থেকে ২ টা ২০ মিনিটের মধ্যে টাইটানিকের সম্পূর্ণ অংশ আটলান্তিকের বুকে তলিয়ে যায়। ডুবে যাওয়ার শেষ মুহূর্তে জাহাজের বৈদ্যুতিক সংযোগ বিকল হয়ে যায়। যার কারণে সেই পরিবেশটি আরও হৃদয় বিদারক হয়ে ওঠে। টাইটানিক যখন সমুদ্রের বুকে তলিয়ে যায় ঠিক তার এক ঘন্টা ৪০ মিনিট পর রাত ৪ টা ১০ মিনিটে সেখানে আসে ‘দি কারপাথিয়া’ নামের একটি জাহাজ। যারা সমুদ্রের বুকে ভেসে বেড়াচ্ছিলেন তাদেরকে উদ্ধার করে সকাল সাড়ে আটটার দিকে নিউইয়র্কে চলে যায়।
দীর্ঘ ৭৩ বছর পর ১৯৮৫ সালে যন্ত্রচালিত অনুসন্ধান শুরু করে একদল বিজ্ঞানী। যেই স্থানটিতে টাইটানিক জাহাজটি ডুবেছিল সেই স্থানের ১৩,০০০ মিটার পানির নিচে সন্ধান পান টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের। রবার্ট বালার্ড নামক ফরাসি এই বিজ্ঞানীর ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছে ছিল টাইটানিককে খুঁজে বের করবেন। বড়ো হয়ে তিনি সেই কাজেই নামলেন। সন্ধান পেলেও এর রহস্য উদঘাটন করা সম্ভব হয় নি।