নয়াভিরাম সৌন্দর্যে ভরপুর এ লাল কাঁকড়ার সমুদ্র সৈকত। বন্ধুদের মুখে লাল কাঁকড়ার কথা এতো শুনেছি যে, সাগরের গর্জন শোনা বাদ দিয়ে লাল কাঁকড়া খুজে বেরাচ্ছি। হা করে চোখ টানটান করে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছি। আজ লালের খবর নেই। চোখ ব্যথা করছে, ঘাড় লেগে আসছে – কম হলেও একটাতো বেরোবে। উ হু, কোন খবর নেই। চারপাশে এদের মাটি উঠানোর কারুকার্য দেখা যাচ্ছে। মনে হয় এইতো বের হবে কিন্তু বের হলো না। ভগ্ন মনে সাগরের ডাকে সারা দিলাম। এ হচ্ছে আরেক কর্মঠ গর্জনশীলা ঢাকি বেজে যাচ্ছে তো বেজেই যাচ্ছে। থামার নামটি মাত্র করছে না। সবসময় মনে হচ্ছে এই বুঝি ঝড় শুরু হলো। সূর্য ডুবে যাওয়ার কাছাকাছি। সব বন্ধু মিলে সূর্যাস্ত দেখবো ঠিক করলাম। কি অপূর্ব দৃশ্য একথালা সূর্য আস্তে আস্তে সাগর গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে! কিন্তু লাল কাঁকড়া কোথায়? মন থেকে এর ছবি আর সরাতে পারছিনা। আকাশে মেঘের আনাগোনা বৃষ্টি নামতে পারে। মাগরিবের আযান পড়ছে- আস্ত সূর্য হারিয়ে গেলো সমুদ্র গর্ভে। ফিরে যাচ্ছি, চলে যাওয়ার প্রতিশ্রুতিতে। কে যেন বলে উঠলো এই লাল কাঁকড়া। সারা মুখ খশিতে লাল হয়ে গেল। সত্যিতো এতো দেখি লালে লাল ছোট্ট এক কাঁকড়া। ছোট হলে হবে বি বেটার ঝাঝ আছে। গর্ত থেকে বের হচ্ছে আবার দ্রুত গর্তে ঢুকে পড়ছে। এ যেন উঁকি ঝুকি খেলা শুরু করে দিয়েছে। এটাই দেখতে চেয়েছিলাম। ভারি সুন্দর দেখতে। আকারে খুবই ছোট। অনেক চেষ্টার খড়ি পোড়ালাম আমরা দেখার জন্য কিন্তু কেউ ধরতে পারলাম না ওটাকে। যাক মনে তো শান্তি মিলেছে। লাল কাঁকড়ার দেখা, সমুদ্রের গর্জন ও বন্ধুদের আড্ডায় মুখরিত হয়ে ছিলো সেদিন কুয়াকাটার লাল কাঁকড়ার মোড়। আনন্দে আনন্দে কখন যে বৃষ্টি এসে গেছে টেরই পাইনি। সৈকত পাড়ের বৃষ্টি -এ কি আর কিছু, মূহুর্তে কাক ভেজা হয়ে গেলাম আমরা। আশ্রয়ে দৌঁড়ে যেতে না যেতেই বৃষ্টি শেষ। মনে পড়ে গেল আমার সেই নিজের লেখা কবিতা-
“ রাখাল তরুর ছায়াতে,
যায় ভিজে তার পানিতে।
যেই বাঁচিতে দেয় ছোটা,
গাঁয়ের পথে কাক ভেজা।
নতুন কাপড় বদনে,
রোদ দেখা দেয় গগনে।।”
ভেজা কাপড়ে বসে যাই সবাই সমুদ্রের টোনা মাছের বারবিকিউ খেতে খেতে। বারবিকি্উয়ের মসলার ঘ্রাণে মুখরিত চারপাশ। ভরপেট হয়ে গেল খাওয়া সবার। খাওয়া শেষে যার যার কাপড় শুকিয়ে শরীরেই ঝড় ঝড়। এ যেন প্রাকৃতিকভাবে প্রাকৃতিক দান। অবশ্য আমদের জন্য রোদ না উঠুক, চাঁদ কিন্তু ঠিকই উঠেছিলো। ভিজে যাই আর যাই করি, আবার কবে আসবো সেই পরিকল্পনা করি মনে মনে।