তারিখটা ঠিকঠাক মনে নেই। হঠাৎই একদিন গিন্নি আবদার করে বসলো, তাকে কুয়াকাটা বেড়াতে নিয়ে যেতে হবে গিন্নির অনুরোধ রক্ষার্থে গাজীপুর থেকে সাকুরা পরিবহনে রাত ৯টার টিকিট কাটা হয়। গিন্নিসহ গাড়ি ছাড়ার নির্ধারিত সময়ের আগেই সাকুরা পরিবহন কাউন্টারে উপস্থিত। ঘন কুয়াশাচ্ছন্ন শীতের রাত ছিলো। তাই সাথে শীত নিবারনের জন্য গরম কাপড় ছিলো বেশ। যাই হোক রাত ৯ টা বাজলো, গাড়িও আসলো। উঠলাম গাড়িতে। শীতের ঘন কুয়াশা ভেঙে সাকুরা চললো যেন সড়ক পথে বিমানের ছোঁয়া।
যাই হোক ঘন কুয়াশা ভেঙে সাকুরা চলতে চলতে মধ্যরাতের দিকে পৌঁছে মাওয়া ফেরি ঘাটে। তখন ঘন কুয়াশার কারনে ফেরি চলাচল বন্ধ। গাড়ি থামলো। ভাবছিলাম একটা ঘুম দিই। কিন্তু না ঘুম আর দেয়া গেলোনা। কারন, যতটা না শীতের কষ্ট তারচেয়েও বেশি মশার যন্ত্রণা। ঘুমানোর অনেক চেষ্টা করার পর ব্যর্থ হয়ে গাড়ি থেকে নামলাম। পেটে টান লেগেছিল। বউকে বললাম কিছু খাবে কি না। সে বললে রাস্তায় কিছু খাবেনা। যাই হোক আমি একাই রাস্তার পাশে ফুটপাতের দোকান থেকে রুটি পরোটা খেয়ে নিলাম।
হালকা খাবার খাওয়ার পর প্রচন্ড শীতের মধ্যেই বাইরে কিছুক্ষণ হাঁটলাম। কুয়াশায় ভিজেও যাচ্ছিলাম। তবুও বাইরেই হাঁটছি। কারন, গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে অধৈর্য হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর আবার গাড়িতে উঠে বসলাম। গাড়ি ঠাঁই দাঁড়িয়ে। বসে থাকতে থাকতে রাত পেরিয়ে ভোর। ভোর পেরিয়ে সকাল। সকাল পেরিয়ে দুপুর।
এরপর বাজলো বিকেল তিনটা। ঘন কুয়াশা একটু হালকা হলো হলো। ফেরি চলতে শুরু করলো। ফেরিতে উঠাও হলো। এবার ফেরি পার হওয়ার অপেক্ষা। ঘন্টা দুই পর ফেরি পার হলাম। ফেরি ধীরে চলার কারনে এখানে ছিলো বিরক্তির আরেকটি কারন। ফেরি পার হয়ে সাকুরা আবারও ছুটে চললো কুয়াকাটার দিকে। মনেও আশা জাগছে এবার হয়তো কুয়াকাটা যাওয়া হবে।
সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা। কুয়াকাটায় গাড়ি থামলো। এর আগে আরেকবার যাওয়ার কারনে আমার কুয়াকাটার প্রায় সবকিছু চেনাজানা ছিলো ভালোই। গাড়ি থেকে নেমেই সোজা চলে গেলাম সমুদ্রের পাড়ে। কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে হোটেলে উঠলাম। হোটেল আগে থেকেই বুক করা ছিলো। ফ্রেশ হয়ে আবারও সমুদ্রের কাছে। অতঃপর রাতের খাবার খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।
পরদিন ভোর। সেজেগুজে সূর্যোদয় দেখা। অতঃপর সমুদ্রের গা ঘেসে টৃলারে করে বরগুনা জেলায় অবস্থিত মিনি সুনৃদরবন দেখতে যাওয়া। উল্লেখ্য, গিন্নির মতে এটাই ছিলো কুয়াকাটা ভ্রমনের সবচেয়ে উত্তম সময়।
তিন দিন অবস্থান করেছিলাম কুয়াকাটায়। ঘুরে বেড়িয়ে ছিলাম অনেক জায়গা। তবে বেশি সময় কেটেছিলো সমুদ্র পাড়েই। বিশেষ করে নিশিরাতে সমুদ্রের জলে পা ভিজিয়ে হাঁটাহাঁটি।
চতুর্থ দিন সকালে রওয়ানা দিলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে। আসার সময় আবারও সাকুরা তার তেজ দেখালো। এবার ফেরি ঘাটে আর তেমন দেরি হয়নি। ঠিকঠাক ছয় ঘন্টা পরই চলে এসেছিলাম। সব মিলিয়ে কিছু আনন্দ আর কিছু দূর্ভোগ ছিলো পুরু ভ্রমনেই।