গল্পটি লিখার আগে আপনাকে আমি ধন্যবাদ জানাতে চাই। তখন আমাকে সুযোগ দিয়েছিলেন, একটু জিরোনোর। আসলে, তখন একটু খারাপ লেগে উঠেছিল আমার। অনেক দিনের পুরনো স্মৃতি লিখছিলাম তো.. তাই হয়তো..
আসলে একটা সময় কাঁদতে কাঁদতে আজ আমার আর কান্না হয়না। কান্নাগুলো হাঁপানি হয়ে বের হয়। দোয়া করুন যাতে গল্পটি এ পর্বেই শেষ করতে পারি..
[ আগের পর্বটি পড়ুন এখানে ক্লিক করে 👉 পর্ব 1 ]
আজ আপনাদের বলব আমার প্রাক্তন এর নাম। সুমাইয়া আফরোজা -আমার জীবন থেকে নেওয়া একটি অখন্ড নাম। প্রাক্তন শব্দটি লিখতে, বলতে ও পড়তে কঠিন। তাই আমরা শর্টকাটে প্রাক্তনকে এক্স বলে ফেলি। আসলে কি জানেন? প্রাক্তন আর এক্স যে এক নয়..
সেই হচ্ছে এক্স বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড, যার সাথে আপনি কোন একসময় প্রেমে জড়িত ছিলেন। আর যার অবর্তমানেও তাকে আপনি ভালোবাসেন, সে আপনার প্রাক্তন..
চলুন এখন মূল গল্পতে আসি:
এস.এস.সি’তে ব্যবসায় শিক্ষা শাখা থেকে জিপিএ 4.50 -এ উত্তীর্ণ হওয়ায় শহরের একটি সরকারি কলেজে লেখাপড়া করার সুযোগ হয় আমার। গ্রাম থেকে প্রথমবার শহরে যাওয়ার ছেলেরা যেমন থাকে, আমিও কিছুটা সেরকমই ছিলাম। শহুরে জীবনযাপন আর শহুরে মানুষদের চলাফেরা তেমন বুঝে আসত না আমার। যেকোনো কাজেই এগোতে ভয় করত। তবে আত্মসম্মান রক্ষার্থে সে এক্সপ্রেশন আমি গোপন রাখতাম। আমার জীবনের প্রথম অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল HTC One M9 Prime -আমি শহরে হোস্টেলে থাকাকালিন আম্মুর কাছ থেকে উপহার পাই। আমার ছোট চাচা সেটি আমার আম্মুকে দেন, আর আম্মু দিয়ে দেন আমাকে। মোবাইলের কোয়ালিটি একটু ভালো হওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ার প্রায় সকল অ্যাপ আমি ইন্সটল করে ফেলি। গ্রামে থাকাকালীন অবস্থায় বড় ভাইদের এন্ড্রয়েড মোবাইল ঘাটাঘাটি করার কারণে মোবাইল সম্পর্কিত কিছু ব্যাসিক এবং ব্যবহারের অভিজ্ঞতাও ছিল আমার ভিতরে। যার ফলে তেমন একটা অসুবিধায় পড়তে হয়নি মোবাইল ব্যবহারে। আমার রুমমেটদের নাম্বার গুলো ফোনের কন্টাক্টে এড করার পর IMO নামের সফটওয়্যারটিতে অনেকগুলো কন্টাক্ট অটোমেটিকলি যুক্ত হয়ে যায়। কিছু কিছু অপরিচিত প্রোফাইলও যুক্ত হয়।
সেগুলোর মধ্যে একটি প্রোফাইল দেখে আমার একটু অবাক লাগে! প্রোফাইলটার নাম ছিল “®i©hy“।কোন কারন ছাড়াই আমি প্রোফাইলটিতে নক করি। দেখি কোন রিপ্লাই আসে না। আবারও নক করি। ম্যাসেজ সেন্ড হয়, সে সীনও করে কিন্তু রিপ্লাই দেয়না। একটু ইগোতে লেগে যায় আমার, তাই আর নক দিইনা। সন্ধ্যাবেলার নাস্তা শেষে আমি ইমোতে আবারো ঢুকি দেখি সে রিপ্লাই দিয়েছে। লিখেছে, “আপনি কে?”
আমার কোত্থেকে কতগুলো রাগ উঠে গেল আর আমি তৎক্ষণাৎ Photo Editor সফটওয়্যারের মাধ্যমে একটি গাধার ছবির উপর “®i©hy” লিখে তাকে সেন্ড করি। এরপর তার রাগে ভরা একটা রিপ্লাই আসে, বড় করে। বস্তুতঃ এটাই আমাদের প্রথম কথা বলা..
দিন যায় রাত আসে, রাত যায় দিন আসে, আর আমাদের মধ্যে একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক সৃষ্টি হয়ে যায়। তার সাথে প্রথম মুঠোফোনে কথা বলি ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে। একজন আরেকজনের কন্ঠ চেক করছিলাম আমরা। সে মন্তব্য করল, আমার কন্ঠটা একটু মেয়েলি টাইপের। বুঝলাম না কেন সে এই কথা বলল। অনেক ম্যাচিউরিটি নিয়ে তার সাথে আমি কথা বলেছিলাম। যাই হোক, তার গলাটা একটু ছেলে সুলভ হলেও আমার খুব ভাল লেগে যায়।
এরপর থেকে একজন আরেকজনের প্রতি বিশ্বাস আর ভালোলাগা শুরু হয়। কখন যে আমি ওকে এবং সে আমাকে ভালোবেসে ফেলি, বুঝে উঠতে পারিনা। কোনদিন স্বীকার করিনি যে, আমরা একজন আরেকজনকে ভালোবাসি…
সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতায়, আর একে অপরের প্রতি বিশ্বাস থাকায় আমরা দেখাও করি ২ বার। হ্যাঁ শুধু ২ বারই। এর বেশি না। পরিস্থিতিগুণে এর বেশি দেখা করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি..
আমি ছেলে হিসেবে বেশ লাজুক ছিলাম। ফলে একাকী দেখা করতে যাওয়ার মত সাহস জোগাতে পারিনি প্রথমবার। তাই আমার রুমমেটের সাহায্য নিতে হয়। পরেরদিন দেকা করতে যাবো.. হুররে! এ নিয়ে খুবই এক্সাইটেড ছিলাম আমি, বলে বোঝাতে পারবোনা।
শীতকাল; তখন রাতের প্রায় ৮ টা বাজে। হেস্টেল থেকে আমি আর রুমমেট নিউমার্কেটে যাই। সেখান থেকে তার জন্য মোটামুটি মানের একটি ঘড়ি কিনি। ১১টার দিকে ফিরি। সবকিছু ঠিকঠাক। পরেরদিন সকাল ৯টার দিকে আমি আর আমার রুমমেট রওনা দিই চকবাজার থেকে পটিয়ার পথে..
গল্পটা আপনাকে শোনাচ্ছি.. আপনার কেমন লাগছে জানিনা। তবে ওই দিনের খুশিটা এখন আমার আবার অনুভূত হচ্ছে.. পোস্টটা লিখছি, আর খুশিতে আপ্লুত হয়ে যাচ্ছি আমি… মনে হচ্ছে আগামীকালই তার সাথে প্রথম দেখা করতে যাবো..
সকাল ৯ টায় চকবাজারের বহদ্দারহাট থেকে নতুন-ব্রিজ পর্যন্ত যাওয়ার গাড়ি ধরি আমি আর আমার রুমমেট। গাড়ি চলছে। ইতোমধ্যে সে অনেকবার কল দিয়ে ফেলেছে জানা নেই। কিছুক্ষণ পর মোবাইলটা এমনে হাতে নিই। আর তখনই একটা ম্যাসেজ আসে। চেক করে দেখি তার ম্যাসেজ। সে বলেছে তাড়াতাড়ি আসতে। সে বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারবেনা। তার সাথের বান্ধবীটা চলে যেতে চাইছে..
শীঘ্রই আমরা গাড়ী থেকে নেমে নতুন ব্রিজ হতে পটিয়া যাওয়ার বাস ধরি। লাল রঙের বিআরটিসি’র বাসটায় উঠে পড়ি আমরা দু’জন। পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় আধাঘণ্টার কাছাকাছি সময় চলে যায়। জানিনা সে কতগুলো কল দিয়েছে আমায়। ভয়ে মোবাইলটা সাইলেন্ট করে রেখেছিলাম। কলগুলো রিসিভ করছি না। সমবয়সী তো.. শুরুতেই অকথ্য গালাগাল দিয়ে মনটা নষ্ট করে দিতে পারে দেরী করার কারণে। যাইহোক, পটিয়া কলেজের সামনে পৌঁছেই তাকে পেয়ে গেলাম…
ইমোতে সে আমাকে কয়েকটা ফটো দিয়েছিল তার। ওখানে দেখেছি সে একটু চিকন গঠনের আর চেহারাটা বাংলা নাটকের নায়িকা মিথিলার মত। বাস্তবে দেখছি সব ঠিক আছে, কিন্তু একটা জিনিস দেখে আশ্চর্য হলাম। সে আমার চেয়ে প্রায় তিন ইঞ্চি লম্বা!!
অতঃপর সাইলেন্টলি একটা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ি দুজন দুজনকে দেখে! আস্তে করে সে বলে, “তুই যে মোটা.. তা তো জানতাম না..”
আমি বলি, “তুই যে এত লম্বা চিন্তা করতে পারিনি”
– হ্যাঁ হ্যাঁ.. তাহলে তো আমরা মটু পাতলু তাই না?
– হাহাহাহাহা! বরাবর বলেছিস.. আচ্ছা, আশেপাশে কোথাও ভালো রেস্টুরেন্ট আছে কিনা দেখতো।
– ঠিক আছে চল.. আমরা নোঙ্গরে গিয়ে বসি..
– কি? সেটা আবার কি?
– রেস্টুরেন্ট!
– ওহ! আমিও বলি তুই নৌকায় না গিয়ে নোঙরে বসাী কথা বলছিস কেন!
– হাহাহা! চল আগে গিয়ে বসি সেখানে…
– চল….
অতঃপর আমরা চারজন সেখানে যাই। একটা মধুর সময় কাটিয়ে আসি। ব্যাপারটাকে পজিটিভলি ভাবুন। আমরা কেউ কাউকে ছুঁইনি পর্যন্ত। শুধু মাঝে মাঝে কথা বলার ছলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতাম একজন আরেকজনের দিকে। আমার রুমমেট আর সুমাইয়ার ওই বান্ধবী কথা বলছিল কিছু একটা নিয়ে। হয়তো আমাদের বিষয়ে। ওদিকে খেয়াল না করে সে ফাঁকে আমরা একজন আরেকজনকে উপহার গুলো দিয়ে দিই। সে আমাকে অবাক করে দেয়! অবাক হই এজন্য যে, সেও একটা কালো রঙের কিনেছে আমার জন্য! আমাদের নিজেদের মধ্যে এমন মিল দেখে একটু অবাক হয়ে যায় আমার রুমমেট। হাসতে থাকে সুমাইয়ার বান্ধবীও। একটু পরে চিকেন বিরিয়ানির অর্ডার দিয় আমরা…
খেয়েদেয়ে আমরা কিছুক্ষণ গল্প জুড়ে দিই। আর এদিকে যে দূপুর একটা বেজে গেছে! তার কলেজ ছুটি দিয়ে দিয়েছে! সেটার প্রতি খেয়াল ছিল না.. যখন খেয়াল আসে, তখন সে আর এক মিনিটও বসতে চাইনি। আর এদিকে আমার যেন শিকড় গজিয়ে ছড়িয়ে পড়েছে! আর উঠতে পারছিলাম না আমি। মনে হচ্ছিলো.. ওই সময়টাতে যেন আমি যুগের পর যুগ কাটিয়ে দিতে পারতাম!
কিন্তু কি আর করার। চলে তো আসতেই হবে। টাইম এন্ড টাইড ওয়েট ফর নন। রেস্টুরেন্টের সিঁড়ি থেকে নামছিলাম। নামার পথে কি যেন মনে আসলো আমার.. হঠাৎ তার হাতটা একবার ধরে ফেলি!
বিশ্বাস করুন আমি যেন তখন একটা পরিপূর্ণ যুবক হয়ে যাই! সেটা ছিল আমাদের প্রথম হাত ধরা.. এরপর বিদায়; আর কিছুটা অশ্রুসিক্ত চোখ নিয়ে আমরা যার যার নিজেদের গন্তব্যের দিকে রওনা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিই।
আসার পথে মনে হচ্ছিল যেন প্রাণ ভোমরা টা রেস্টুরেন্টে রেখেই আমি চলে আসছি। গাড়িতে বসে ছিলাম, সাইলেন্ট অফ করলাম। ঠিক তখনই একটা মেসেজ টোন বেজে উঠলো। চেক করে দেখি সে লিখেছে, “আজ তো নিজের হাতে খাইয়ে দেওয়ার কথা ছিল তোর.. ভুলে গেছিস কেন?”
নিমিষেই মুখটা বিমর্ষ হয়ে যায় আমার… ইশ… ভুল হয়ে গেছে আমার! ভুলে যাওয়া রোগের পক্ষে/বিপক্ষে কোনো রকম জবাব নেই আমার কাছে..
প্রিয় পাঠক, আপনার কেমন লাগছে জানিনা। কিন্তু এতটা দিন পর আজ আমি আবার আনন্দে আপ্লুত হচ্ছি! কল্পনার জগতে যেন হারিয়ে গিয়েছি আমি! আনন্দের গল্পটা শেয়ার করতেও অনেক ভাল লাগছে আপনাদের নিকট…
গল্পটি পড়ে কেমন লেগেছে তা কমেন্ট বক্সে জানিয়ে দিন। পরবর্তী পর্বে টুইস্ট অপেক্ষা করছে এই গল্পের… অপেক্ষায় থাকুন…