দীর্ঘদিন ধরে একা থাকা হাতিটা এবার সঙ্গীনির খোঁজে বনত্যাগ করতে লাগলো। সিংহের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে শেষমেশ পাড়ি দিল সেই বিশাল নদীটি। ওপারে থাকতে নদীর এপার ঠিক মতো দেখা যেত না; আবছা আবছা লাগতো। কিন্তু আজ সে বুঝতে পারলো, এপারটাই অনেক বেশি সুন্দর..
(এ গল্পের প্রথম পর্ব পড়ুন 👉 পর্ব – ১ )
নদীর এপারের বালির চরটা যেন সৈকতের চেয়ে কম সুন্দর নয়। কাশফুলগুলো দেখে মনে হচ্ছে যেন জমিনে মেঘ করেছে। একটু দূরে একটা জঙ্গল। পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ আর কাঠবিড়ালিদের কোলাহল মধ্যাহ্নকে চিত্রায়িত করছে বিভিন্ন রঙে। হাতি যে জঙ্গলে আগে ছিলো, তার চেয়েও শতগুণ বেশি সুন্দর এই বন।
তাহলে কেনই বা এপার/ওপারের বাসিন্দারা একে অপরের সাথে দেখা বা যোগাযোগ করতে পারেনা? কি এমন হয়েছিলো, যেটা দুইটা বনকে আলাদা করে রেখেছে?
অনেক ভেবে শেষে খাবারের খোঁজে ঘুরে বেড়াতে লাগলো হাতিটি। কিছু গমের গাছ দেখতে পায়। আপাতত সেগুলো খেয়েই মধ্যাহ্নভোজ সম্পন্ন করে হাতিটি। খেয়ে-দেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছিলো। এমন সময় একটা বক এসে বসলো তার পাশে।
– হাতি ভাই। তোমাকে তো আগে কখনো এ জঙ্গলে দেখিনি। নতুন এসেছো নাকি?
– হাঁ ভাই। আমার একটা পরিবার দরকার। এভাবে একাকী থাকা আসলে যাচ্ছেনা আর। অন্তত বুড়ো বয়সে সাহায্য-সহযোগীতার জন্য একজনকে দরকার হয়।
– হুম, তাতো অবশ্যই। আমারও পরিবার আছে। কিন্তু তোমার নেই কেন ভাই?
– আমি ছোটবেলায় মায়ের কাছ থেকে হারিয়ে গিয়েছিলাম। এক শিকারী আমাকে অজ্ঞান করে বধ করে নিয়ে যাচ্ছিলো। সৌভাগ্যক্রমে আমার হুঁশ ফিরে আসে আর আমি পালিয়ে ওধারের বনটায় গিয়ে আশ্রয় নিই।
– ও! বুঝেছি। দলচ্যুত হয়েছিলে। তার মানে তুমি ওইপারের লোক?
– হাঁ ভাই। আচ্ছা এপারে কোন হাতির দল আসা-যাওয়া করতে দেখেছিলে কখনো?
– অনেক হাতিই তো আসে যায়। কেউই এপারে থাকেনা।
– কেন? এত সুন্দর বনে তারা থাকেনা কেন?
– এ বন যত সুন্দর, ততই এখানকার বাসিন্দাদের মন ও চরিত্র কুৎসিত। বড্ড কুৎসিত। জানোনা হয়তো। জানবেই বা কি করে; তুমি তো এপারের না।
– কি বলতে চাইছো বক ভাই?
– এপারের বাসিন্দারা মানুষের সাথে পাঞ্জা লড়ে বেঁচে থাকে। মাঝে মধ্যে কয়েকদল মানুষ আসে এখানে। তারা এ বনের বড় বড় গাছগুলো কেটে নিয়ে যায়। শত শত প্রাণী বাসস্থান হারায়। নদীর মাছ সব তুলে নিয়ে যায়। ফলে আমরা বকেরা অনেক কষ্টে মাছ অল্প কিছু মাছ পাই। তা দিয় আমাদের হয়না।
– ও… আচ্ছা! তাহলে এজন্যই ওপারের রাজা সিংহরাজ তাঁর বনে নতুন সদস্যের আগমনকে মেনে নেননা। দেখতে পেলেই তাদের বধ করা হয় শুনেছি।
– হাঁ ভাই। ঠিক শুনেছো।
– কিন্তু বক ভাই, মানুষ নাহয় যেতে পারবেনা মানলাম। কিন্তু এ বনের পশু-পাখিরাও কেন ওই বনে যেতে পারবেনা?
– কারণ আছে হাতি ভাই। আমি শুনেছি, এ বনের কয়েকটা হায়েনা দূরদেশের মানুষদের সাথে যোগাযোগ রাখে। তারাই মূলত কৌশলে এ বনের বিভিন্ন জীবজন্তুকে ধরে ফেলে; কিন্তু খায়না।
– খায়না কেন?
– কারণ, তারা সেগুলো মানুষদের কাছে রান্না করা মাংসের বিনিময়ে বিক্রি করে। মাংসখেকো প্রাণীদের জন্য সেগুলো সবচেয়ে মজার খাবার।
– এ বনের রাজা নেই?
– হাহা! হায়েনারা দল বেঁধে এ বনের রাজা অমরসিংহকেও ধরে বিক্রি করে দিয়েছে মানুষদের কাছে। সেদিন বোধ হয় রান্না করা মাংসের উৎসব করেছিলো তারা। বেশ কয়েকদিন শিকারেও বের হতে দেখেনি তাদের কেউ..
– এখন এ বনের রাজা কে?
– রাজা হায়েনাধর। এক বিশাল হায়েনা সে। সে-ই আমাদের আগের রাজা অমরসিংহকে ধরার জন্য হায়েনাদের উপর নেতৃত্ব দিয়েছিলো।
– খুব খারাপ হলো রাজা অমরসিংহের সাথে।
– কতো সিংহ এলো গেলো, কিন্তু তাঁর মতো ভালো রাজা আর দেখিনি আমি।
হাতির মনে নতুন একটা উদ্যম জেগে উঠলো। এ বনকে স্বাধীন করতে হবে। রাজা হায়েনাধরকে বধ করা খুবই দরকার।
তবে মুখ ফুটে কিছু বলেনা সে। বকটা একটু পর বিদায় নিয়ে চলে যায়। হাতি রাতের খাবারের সন্ধানে নেমে পড়ে। এ বনে এভাবেই কিছুদিন চলে যায় তার। অতঃপর দূরের এক পাহাড়ের চূড়ায় কেউ দলবেঁধে আসছে মতো কিছু একটা দেখতে পায়…