আমাদের বর্তমান ইয়ং জেনারেশন ‘সকাল’ চিনে না। অপরিকল্পিতভাবে মধ্যরাতের পর ঘুমানোয় সকালবেলা জাগতে পারে না। স্নিগ্ধ সকালের নৈসর্গিক দৃশ্য তাই এদের কাছে অজানা। সকালের মোহনীয় আবেশ আর অকৃত্রিম সৌন্দর্যের পশরা এদের কাছে অদেখাই রয়ে যায়। অথচ দিনের পুরোভাগে এই সময়টুকু যতটা সৌন্দর্যমন্ডিত আর আকুলতায় ভরপুর তেমনটি আর নেই। আজকের এই আলোচনায় আমি প্রতিদিন সকালে উঠে কী কী করা উচিৎ আর সেগুলো করলে কি উপকার পাওয়া যায় তা নিয়ে কথা বলব।
১। হাতমুখ ধোয়াঃ
সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথমেই প্রাকৃতিক প্রয়োজন শেষ করে হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হওয়া জরুরি। এতে চোখ থেকে ঘুমঘুম ভাব চলে যাবে এবং নিজেকে অনেক প্রাণবন্ত লাগবে।
কিন্তু আমরা গতানুগতিক ধারায় চলতে পারি না। তারবদলে আমরা ঘুম ভাঙ্গার সাথে সাথেই বালিশের নিচ থেকে মোবাইল বের করে তাতে বুঁদ হয়ে পরি। এর ফলে মনের সজীবতা বিঘ্নিত হয়। আর নির্জীব মনে সকাল শুরু হল কীভাবে একটা আস্ত দিন ভালো কাটতে পারে!
২। পানি পান করাঃ
ভালোভাবে ফ্রেশ হওয়ার পর এক থেকে দুই গ্লাস পরিস্কার পানি পান করা উচিৎ। এটি পেটের বিভিন্নরকম পীড়া যেমন গ্যস্ট্রিক, আলসার, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি রোগের জন্য ভীষণ উপকারী। কিন্তু সুযোগ থাকলেও প্রাকৃতিক এই পথ্যকে আমরা হেলায় উড়িয়ে দেই। একবার ভাবুন তো, পেটকে সুস্থ রাখার জন্য এই কাজটি কি খুবই কঠিন?
৩। খোলা জায়গায় হাঁটাহাঁটি করাঃ
এরপর কমপক্ষে ৩০ মিনট কোনো খোলামেলা জায়গায় হাঁটাহাঁটি করতে হবে। এতে মুক্ত বাতাস গায়ে লাগবে এবং মন ভালো হয়ে উঠবে। সুস্থভাবে দিনাতিপাত করার জন্য শরীর এবং মন উভয়কেই সুস্থ রাখা জরুরি। মুক্ত বাতাসে হাঁটাহাঁটি করা একদিকে যেমন শারীরিক ব্যয়াম ঠিক তেমনই মনের সুস্থতার পরিচায়ক। এতে মানসিক চাপ তথা মনমরা ভাব দূর হবে। ডায়াবেটিসের সমস্যায় এই কাজটি আরও অধিক ফলপ্রসু।
৪। পুষ্টিকর নাস্তা করাঃ
ইংরেজিতে একটা কথা আছে- ‘ইট ব্রেকফাস্ট লাইক এ কিং। ইট লাঞ্চ লাইক এ সিটিজেন। ইট ডিনার লাইক এ পুওর ম্যান।’ অর্থাৎ সকালের নাস্তাতে অবশ্যই পুষ্টির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। আপনি যতই শারীরিক ব্যায়াম করেন আর মুক্ত বাতাস গায়ে লাগান পুষ্টিকর খাবার না খেলে এসব কিছুই অর্থহীন। কারণ বেঁচে থাকার প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে খাবার। আর এই খাবারে যদি পুষ্টিগুণ না থাকে তাহলে শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধবে। তাই আমাদের উচিৎ সকালের নাস্তায় বিশেষভাবে পুষ্টিগুণ অক্ষুন্ন রাখা।
৫। কিছুক্ষণ বিশ্রাম করা এবং সারাদিনের সব কাজের পরিকল্পনা করাঃ
সকালের নাস্তা সেরে কিছুক্ষণ বিশ্রাম করা উচিৎ। কিছুক্ষণ বলতে অনধিক ১৫ মিনিট। আর এই সময়টাতে সমস্ত দিনের পরিকল্পনাটাকে গুছিয়ে নিতে হবে।
যে কোনো কাজ শুরু করার পূর্বে আমাদের উচিৎ শরীর এবং মনকে কিছুক্ষণের জন্য বিশ্রাম দেওয়া। এতে কাজ করার পূর্ণ এনার্জি আসবে। প্রফুল্ল মনে কাজে নেমে পরার আগে এই বিশ্রামটুকু অতীব জরুরি।
প্রতিদিন সকালে উঠে আমরা যদি এই পাঁচটি কাজ করতে পারি তাহলে আমরা যে কোনো কাজেই সফলতা অর্জন করতে পারব। সবথেকে বড় যে সুবিধা সেটা হলো, খুব সকাল থেকে কাজ শুরু করায় কাজ করার জন্য একটা প্রকান্ড দিন হাতে পাওয়া যায়। এতে করে সময়ের সুষ্ঠ বণ্টন করে অধিক কাজ করা যায়। সাকালেই কর্ম পরিকল্পনা করে রাখায় প্রতিটি কাজে প্রয়োজনীয় সময় ব্যয় করা যায়। মন প্রফুল্ল থাকায় কাজগুলো হয় নিখুঁত।
তাই আসুন আমরা আজ থেকেই সকালে ঘুম থেকে ওঠা এবং উপরোক্ত পাঁচটি কাজ করার চর্চা করি।