মিসেস সাথী আর ওনার স্বামী আজ দুজনেই বৃদ্ধ হয়েছে। ওনাদের চলতে একটু বেগ পোহাতে হয়। ওনাদের কোনো অভাব নাই। শহরে একটি বাড়ি আছে ওনাদের। ওনাদের দুটো ছেলে সন্তান। দুজনেই বিদেশে থাকে পরিবারসহ। বাসায় ছোটবেলা থেকেই একটি কাজের মেয়ে থাকে ওনাদের দেখাশোনা করার জন্য। ওর নাম রিনা। রিনা কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা করে। এই পরিবার রিনার পড়াশোনার ব্যয় বহন করে। রিনাদের মা-বাবা বেঁচে নেই। তাই পরিবারের সকলে রিনাকে নিজেদেরই একজন মনে করে।
মিসেস সাথীর বয়স হয়েছে। সে মাঝে মাঝে অসুস্থ হয়। সে জন্য বড় ছেলে পরিবারসহ দেখতে আসে মাকে। একমাস থাকার পর আবার বিদেশ চলে যায়। এরপর ছোট ছেলে বিদেশ থেকে মাকে দেখতে আসে। মা ছেলেকে আর বিদেশ যেতে দেয় না। ওনাদের দেখাশোনা করার জন্য ছোট ছেলে পরিবারসহ দেশেই থেকে যায়। বাড়ির সবাই বেশ আনন্দে সময় অতিবাহিত করছিল।
তিন বৎসর পর মা আবার অসুস্থ হয়ে পড়ে। বড় ছেলে পরিবারসহ মাকে দেখতে আসে। মা এক মাস পর মারা যায়। বড় বউ ছোট ভাইয়ের পরিবারসহ বাড়ি থেকে চক্রান্ত করে বের করে দেয়। বৃদ্ধ শশুরের কাছ থেকে বাড়ি লিখে নেয়। দুই বৎসর পর রিনাকে একটি বেকার ছেলের সাথে বিয়ে দেয়। রিনার পড়াশোনা বন্ধ করে দেয়। রিনা অনেক কান্নাকাটি করে।
বড় বউ বৃদ্ধ শশুরকে বাড়িতে একা ফেলে দিয়ে আবার বিদেশ চলে যায়। এমন সময় ছোট ছেলের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। অসুস্থ হয়ে যায় বড় বউয়ের এমন দূর্ব্যবহারের কারণে। ছোট ছেলের সমস্ত টাকা-পয়সা, সম্পত্তি আত্মসাৎ করে। এরপরেও বাবার পাশে এসে দাঁড়ায়। বাবার দেখাশোনা করে। অসুস্থ হলে চিকিৎসা করায়। নিজের বাসায় নিয়ে আসে। সবসময় খেয়াল রাখে। মানসিক সান্তনা দেয়। বাবা খুশি থাকে।
রিনা শ্বশুর বাড়িতে গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি পড়াশোনা শেষ করে চাকুরি করে। মাঝে মাঝে বাবাকে দেখতে আসে। বাবা খুশি হয়। পাঁচ বৎসর পর বাবা অনেক অসুস্থ হয়। এরপর হসপিটালে মারা যায়। ছোট ছেলে আবার পরিবারসহ বিদেশ চলে যায়।
সেখানে সে অনেক ভালো একটি চাকুরি পায়। বড় বাড়ি কিনে। ছেলে অনি ইঞ্জিনিয়ার হয়। আর মেয়ে অনা বড় ডাক্তার হয়।ওদের জীবনে কোন অভাব থাকে না। ওরা নিজেদের দেশে আসতে চায়। বাবা ওদেরকে দেশে নিয়ে আসে। ওরা অনেক বেড়ায়, অনেক আনন্দ করে। ওদের চাচির বিরুদ্ধে মামলা করে ওদের দাদার বাড়ি ফেরত পায়।
ওদের চাচির আত্মসাৎ করা সম্পত্তি ধূলিসাৎ হয়ে যায়। সে এখন দরিদ্র অবস্থায় জীবনযাপন করতে থাকে। অনির বাবা দেশে বেড়ানো শেষ করে ওদেরকে আবার বিদেশ নিয়ে চলে যায়। সেখানে ওরা সুখে-শান্তিতে দিনযাপন করতে থাকে। ওরা সবসময় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ায়।