ইচ্ছা, শব্দটি সবার পরিচিত। মানুষ স্বভাবতই চিন্তাশীল। মানুষের বর্তমান পরিস্থিতি তাদের চিন্তাশক্তির ফল।আর ইচ্ছা ছাড়া এই চিন্তাশক্তি কোন কাজের না।
ছোটবড় সবার কিছু না কিছু ইচ্ছা আছে।তবে একটা শিশুর ইচ্ছা আর একটা প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ইচ্ছা আলাদা।কিন্তু সমবয়সীদের ইচ্ছে গুলো একইরকম।
একটা শিশু যখন জন্ম নেয় তখন তার একটাই ইচ্ছা, মাকে পাওয়া। সে মা ছাড়া কিছুই বোঝেনা।আস্তে আস্তে সে বড় হতে থাকে তেমনিভাবে সে পারিপার্শ্বিক এর সাথে পরিচিত হতে থাকে।
যখন তার বয়স ২ বা ৩ বছর তখন সে একটু বলতে শেখে।তখন তার ইচ্ছে গুলোকে প্রকাশ করে।কোনকিছুর আবদার করে। একটি শিশুর প্রিয় সঙ্গী তার মা আর খেলনা। ছোটবড়, দামি -স্বল্পদামি খেলনা তার প্রথম ইচ্ছে হয়ে থাকে।
আবার কিছু সময় পার হলে তার চিন্তাধারার পরিবর্তন হয়।তখন খেলাধুলা আর পড়াশোনা তার প্রিয় হয়ে ওঠে।
স্কুল জীবন, কলেজ জীবন, প্রতিটি ধাপে সে নতুন নতুন বিষয় শেখে।
প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর তার ইচ্ছাও অনেকটা বদলে যায়।এখন আর খেলনার চিন্তা আসেনা।ভবিষ্যৎ এর চিন্তা ঘিরে ধরে তাকে।তার মনে স্বপ্ন আসে একটা যোগ্যতাসম্পন্ন চাকরি পাওয়ার। হয়তোবা কারও ভাগ্যে স্বপ্ন পূরণ হয়, আবার কেউ কেউ শুধু স্বপ্ন দেখেই সব ভুলে যায়।
আরও কিছু সময় পর তারমনে ইচ্ছে জাগে একজন সঙ্গী পাওয়ার।যার সাথে সুখ দুঃখ ভাগ করতে পারবে। যার সাথে কিছু রঙিন স্বপ্ন দেখবে।
তারপর
একটা শিশু হয়ে যায় আরেক শিশুর জন্মদাতা। তখন তার অতীত,শৈশবকাল, কৈশোরকাল খুজে পায় তার সন্তানের মাঝে । এই প্রাপ্তি কে জীবনের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি মনে করে।তখন সে তার সন্তানের সেসব ইচ্ছে পূরণ করে যেসব ইচ্ছে সে পূরণ করতে পারেনি।
বয়স আরও বৃদ্ধি পেলে সে হয়ে যায় বৃদ্ধ, একা একা চলতে কষ্ট হয়।চোখে দেখতে পায়না।মাথার চুল সব সাদা হয়ে গেছে। আর যত্ন নিতে হয়না। শেষ বয়সে এসে স্বপ্ন দেখে নাতি নাতনির সাথে খেলা করার।
আর হঠাৎ করে একদিন তার অস্তিত্ব মুছে যায় এই পৃথিবী থেকে।পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে চলে যায় না ফেরার দেশে।
আমরা এ গল্প থেকে একটা বিষয় বুঝতে পারি সেটা হল,সময়ের সাথে সাথে আমাদের ইচ্ছেও বদলে যায়।
একজন মানুষ পাঁচ বছর বয়সে যেটা চায় চল্লিশ বছর বয়সে সেটা চায়না।তাই কোন বাচ্চা যখন একটা খেলনার জন্য যেদ করে আমাদের উচিত সেই সময় তার ইচ্ছা পূরণ করা।নয়তো আপনার বাচ্চাকে বললেন,বাবু বড় হও তখন পুতুল কিনে দিব।একবার ভেবে দেখুন তো দশ বছর বয়সী ছেলে/মেয়েটা পড়াশোনা করবে নাকি পুতুল খেলবে।
আবার দেখা যায় একজন ১৫-১৬ বছরের ছেলে একটা মোবাইল চাইল, কিন্তু তার মা বাবা বলল আরও বড় হও তখন মোবাইল দিব। কিন্তু তখন সেই ছেলেটি এটা মেনে নিতে পারেনা।এটা তো শুধু একটা উদাহরণ। এরকম হাজার হাজার কারণ আছে।
পৃথিবীতে পাগল আর কিছু মানুষ ছাড়া সবাই অসুখী। আর সবার দুঃখের কারণ একটাই, সেটা হল ইচ্ছে পূরণে বাধা।
তিনবছর বয়সে যে বলটার দরকার ছিল, সেটা ত্রিশ বছর বয়সে অপ্রয়োজনীয়। মানুষ হেরে গেলে কষ্ট পায়না,কারণ প্রতিযোগীতায় হার ও একটা অংশ। কিন্তু যখন তার ইচ্ছে পূরণ হয়না,সেটা তাকে হার এর থেকেও বেশি যন্ত্রণা দিয়ে থাকে।
পরিশেষে একটা কথাই বলব :- মানুষ বাঁচার জন্য আত্মহত্যা করে,মরার জন্য নয়।
ভাল লাগলে শেয়ার করবেন।ধন্যবাদ।