আমাদের পুরো বিশ্বব্রহ্মান্ড রহস্যে ঘেরা। এতো সব রহস্য যে বিজ্ঞানীরা আজও সেই রহস্যগুলোর কূল-কিনারা করতে পারেন নি। ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে অনেক বিখ্যাত বিজ্ঞানীদের নাম, যারা নিজের শ্রম ও মেধা দিয়ে বিজ্ঞানের দুনিয়ায় নিজেদের অমর করে গেছেন। তবুও হয়নি সব রহস্যের উদ্ঘাটন, এখনও ঘুরছে রহস্যের চাকা। এমনি এক রহস্যের নাম হচ্ছে ডার্ক ম্যাটার। এটি এতই রহস্যময় এবং দুর্বোধ্য যে, এটির অস্তিত্ব নিয়েও অনেকে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন এবং আজও তা প্রমাণ করা যায়নি। শুধু পাওয়া যায় তার অস্তিত্ব থাকার পেছনে কয়েকটা অকাট্য যুক্তি, আর তাই পদার্থবিজ্ঞানীরা এখনোও মাথা কুটে কুটে মরছেন এই রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য।
ডার্ক ম্যাটার আসলে কিঃ বিজ্ঞানীরা শুধু জানেন এটি একটি পদার্থ কিন্তু এই পদার্থ কি দিয়ে তৈরি অথবা এর ধর্ম সম্পর্কেও তাঁরা নিশ্চিত নন। অনেক বিজ্ঞানীরা আবার মজা করে বলেন, এটি নাকি অনেকটা পেঁচার মত। আলোর সাথে দা-কুমড়ো সম্পর্ক এর ডার্ক ম্যাটারের। এটি আলো শোষণও করে না, আবার আলোকে প্রতিফলনও করে না। তাই এটি অদৃশ্যমান। তবে এর মহাকর্ষ বলের প্রভাব পুরো মহাবিশ্বে বিদ্যমান। আমাদের এই বিশ্বব্রহ্মান্ডের মাত্র ৪ শতাংশ দৃশ্যমান এবং ২১ শতাংশ হচ্ছে ডার্ক ম্যটার ও বাদবাকি ৭৫ শতাংশ ডার্ক এনার্জির দখলে। যদিও এই হিসাব নিয়ে অনেকে ভিন্ন ধারণা পোষণ করেন, কিন্তু এই ব্যাপারে সবাই নিশ্চিত যে পুরো মহাবিশ্বের প্রায় মাত্র ৪ থেকে ৫ ভাগই আমাদের আমাদের দৃষ্টির আওতায় পড়ে।
ডার্ক ম্যাটার কি দিয়ে তৈরিঃ যেহেতু এটি অদৃশ্যমান, তাই এটা বলা হয়ে থাকে যে ডার্ক ম্যাটার আমাদের পরিচিত কোন পারটিক্যাল দিয়ে তৈরি নয়। এক হাইপোথিসিস অনুযায়ী, এটি তৈরি হয়েছে উইম্প অথবা Wimp (Weak Interacting Massive Particle) এর দ্বারা, যার ধর্ম হছে এটি অন্যান্য পদার্থের সাথে খুবই দুর্বল মিথস্ক্রিয়া করে যার দরুন এটি খুব সহজেই একটি বস্তুর ভেতর দিয়ে অনায়াসে চলে যেতে পারবে। অর্থাৎ ডার্ক ম্যাটার যদি আমাদের শরীরের ভেতরেও চলে যায়, আমরা কোনকিছুই টের পাব না। শুধু আলো নয়, ডার্ক ম্যাটার ম্যাগনেটিক ফিল্ড অর্থাৎ তড়িৎ- চৌম্বকীয় তরঙ্গ দিয়েও এর অস্তিত্ব বোঝা যাবে না। তবে বিজ্ঞানীরা মনে করেন কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর একটি পারমানবিক কণা (এক্সিয়ন) এর মত ডার্ক ম্যাটার আচরণ করে যদিও এটি প্রমাণিত নয়।
মহাবিশ্বে ডার্ক ম্যাটারের ভুমিকাঃ যতই আমরা এটি নিয়ে চুলচেরা আলোচনা করি না কেন, ডার্ক ম্যাটারের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। মহাবিশ্বের এই হাজারো গ্যালাক্সি গঠন হতে পারতো না যদি ডার্ক ম্যাটার না থাকতো। আমাদের এই মহাবিশ্বকে এক সুতোয় গেঁথে রেখেছে ডার্ক ম্যাটার। না হলে আমদের পৃথিবী এই গ্যালাক্সীতে থাকতো না। মজার বিষয় হলো আমাদের অর্থাৎ প্রাণের জন্মও হতো না যদি আমদের পৃথিবী সূর্য থেকে একটু দূরে সরে যেত। কারণ দূরে সরে গেলে পৃথিবীতে সূর্যের তাপ কম পাওয়া যেতো, প্রাণের জন্ম অসম্ভব ছিল। আবার সূর্যের কাছেও থাকলে প্রাণের জন্ম সম্ভব নয়, কারণ পৃথিবীর আবহাওয়া গরম থাকতো। কি রহস্যময়, তাই না?
হয়তো একদিন মানুষ জেনে যাবে প্রকৃতির সব রহস্য, হাতের মুঠোয় আনবে পুরো বিশ্বব্রহ্মান্ডকে। সেদিন হয়তো জানা যাবে ডার্ক ম্যাটারের আসল উদ্দেশ্য, তার প্রকৃত সংজ্ঞার পরিচয়। মানবজাতি ওই দিনটি না আসা পর্যন্ত থামবে না, কৌতূহলের আদিম রথে পাড়ি দিতেই থাকবে অজানাকে জানার জন্য, অসম্ভবকে সম্ভব করার লক্ষ্যে।