প্রশ্নঃ শিক্ষানবীশ ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে পাওয়া যাবে?
উত্তরঃ প্রথমে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বি.আর.টি.এ.) অফিস থেকে ছাপানো আবেদনপত্র ও মেডিকেল সার্টিফিকেটের জন্য ফরম সংগ্রহ করতে হবে। এরপর মেডিকেল সার্টিফিকেটের ফরমটি একজন রেজিস্টার্ড ডাক্তার কর্তৃক পূরণ করতে হবে। তারপর আবেদনপত্রটি যথাযথভাবে পূরণ করে এবং নির্ধারিত ফি সংশ্লিষ্ট ব্যাংকে জমা দিয়ে চার কপি পাসপোর্ট সাইজের এবং এক কপি স্ট্যাম্প সাইজের ফটোসহ বি.আর.টি.এ অফিসে জমা দিতে হবে।
আবেদনপত্র পাওয়ার পর যথাযথ বিবেচিত হলে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ তিনমাসের জন্য শিক্ষাণবীশ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করে থাকে। অতঃপর কর্তৃপক্ষের দেয়া সময়সীমার মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে হবে।
প্রশ্নঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স কিভাবে পাওয়া যাবে?
উত্তরঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে হলে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ কর্তৃক দেয়া শিক্ষাণবীশ ড্রাইভিং লাইসেন্সের মেয়াদ কালের মধ্যে ধার্য়কৃত ফিস জমা দিয়ে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আবেদন পত্র পাওয়ার পর লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের নির্ধারিত তারিখে লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে হবে।
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মোটরযানের যে শ্রেণীর (যথা- মোটরগাড়ি, মোটর সাইকেল, বেবিট্যাক্সি বা হালকা মোটরযান, বাস অথবা ট্রাক তথা ভারী মোটরযান) মোটরযানের জন্য আবেদন করা হয়েছে- সেই শ্রেণীর গাড়ি নিয়ে বি.আর.টি.এ অফিসের নির্ধারিত স্থানে ব্যবহারিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য যেতে হবে। এই ব্যবহারিক পরীক্ষা তিনটি ধাপে সম্পন্ন হয়ে থাকে। যথা- (১) জিগ জ্যাগ টেস্ট (২) র্যাম্প টেস্ট ও (৩) রোড টেস্ট।
উক্ত তিন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষ ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান করবেন। (মধ্যম মানের ও ভারী যানবাহনের লাইসেন্স পেতে হলে অবশ্যই একটি হালকা মোটরযানের লাইসেন্স আগে থেকেই থাকতে হবে এবং সেই লাইসেন্সের বয়স তিন বৎসর অতিক্রান্ত হতে হবে না হলে মধ্যম বা ভারী লাইসেন্সের আবেদন করা যাবে না।)
প্রশ্নঃ লিখিত পরীক্ষায় কত সময় দেওয়া হয় এবং পরীক্ষায় পাশ মান কত?
উত্তরঃ লিখিত পরীক্ষার জন্য সাধারণত ২৫-৩০ মিনিট সময় দেওয়া হয় এবং শতকরা ৬৬ ভাগ মার্ক পেলে উত্তীর্ণ হওয়া যায়।
প্রশ্নঃ কি কি বিষয়ের উপর লিখিত পরীক্ষা হয়?
উত্তরঃ তিনটি বিষয়ের উপর লিখিত পরীক্ষা হয়। যথাঃ (১) রোড সাইন, ট্রাফিক সিগন্যাল ও ট্রাফিক চিহ্ন বিষয়ে। (২) ট্রাফিক নিয়মাবলী। (৩) মোটরযান ও এর ইঞ্জিন সংক্রান্ত প্রাথমিক জ্ঞান বিষয়ে।
প্রশ্নঃ কোন কোন বিষয়ের উপর মৌখিক পরীক্ষা হয়?
উত্তরঃ রোড সাইন, ট্রাফিক সিগন্যাল ও ট্রাফিক চিহ্নগুলিকে বাস্তবে চিনতে পারে কিনা এবং মোটরযান ও এর ইঞ্জিন সম্বন্ধে বাস্তব ধারনা আছে কিনা। তদুপরি বয়স ও শারীরিক দিক থেকে উপযুক্ত কিনা ইত্যাদি বিষয়ে মৌখিক প্রশ্ন করা হয়।
প্রশ্নঃ লিখিত পরীক্ষায় কি ধরনের প্রশ্ন থাকে?
উত্তরঃ (১) উপরে উল্লেখিত তিনটি বিষয়ের উপর ছোটখাটো প্রশ্ন থাকে যাতে অল্প কথায় উত্তর দেয়া যায়। (প্রশ্ন পত্রের প্রত্যেকটি প্রশ্নের নিচে যে ফাঁকা জায়গা থাকে সেখানে দু-এক কথায় উত্তর লিখতে হয়)। অথবা, (২) প্রশ্নপত্রে প্রত্যেকটি প্রশ্নের একাধিক উত্তর দেওয়া থাকে। যে উত্তরটি সঠিক তাতে টিক চিহ্ন দিতে হয় এবং কয়েকটি ছোটখাটো প্রশ্নের উত্তর হাতে লিখতে হয়।
প্রশ্নঃ প্রাকটিক্যাল টেস্ট বা ব্যবহারিক পরীক্ষা কিভাবে হয়?
উত্তরঃ পরীক্ষার্থী মোটরযানের যে শ্রেণীর জন্য লাইসেন্স পেতে চায় সেই শ্রেণীর গাড়ির সাহায্যে মাঠে প্রাকটিক্যাল টেস্ট দিতে হয়। এই প্রাকটিক্যাল টেস্ট এ ইঞ্জিন চালু করা, গিয়ার পরিবর্তন করা, সিগন্যাল লাইট ব্যবহার করা, গাড়ি থামানো, সামনে অগ্রসর হওয়া ও পিছনের দিকে চালানো ইত্যাদি সুষ্ঠুভাবে পারে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়।
মাঠ পর্য়ায়ের পরীক্ষার প্রথম ধাপ জিগ জ্যাগ টেস্ট। মাঠে যে আঁকা-বাঁকা রাস্তা মার্কিং করা থাকে তার ভেতর দিয়ে গাড়ি নিয়ে অগ্রসর হওয়া এবং পরে একই রাস্তায় পিছনের দিকে গাড়ি চালাতে পারে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়। জিগ জ্যাগ টেস্ট এ মার্কিং করা রাস্তায় যে পতাকা দেওয়া থাকে সেটা গাড়ির ধাক্কায় পড়ে গেলে অকৃতকার্য় বলে গণ্য হবে।
মাঠ পর্য়ায়ের দ্বিতীয় ধাপ হলো র্যাম্প টেস্ট। জিগ জ্যাগ টেস্ট এ কৃতকার্য় হওয়ার পর র্যাম্প টেস্ট দিতে হয়। একটি র্যাম্পের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যাবার সময় পরীক্ষকের নির্দেশ অনুযায়ী একটি খাড়া উঁচু জায়গায় গাড়ি থামাতে হবে। এরপর গিয়ার নিউট্রাল করে হ্যান্ড ব্রেক টেনে গাড়ি দাঁড়া করাতে হবে এবং ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে হবে। পুনরায় ইঞ্জিন চালু করে এক নম্বর গিয়ারে দিয়ে এক্সেলারেটরে চাপ দিতে হবে। আস্তে আস্তে এক্সেলারেটর প্যাডেলে চাপ বৃদ্ধি করতে হবে এবং একই সাথে ক্লাচ প্যাডেল থেকে পা এমনভাবে উঠাতে হবে যাতে হান্ড ব্রেক বা পার্কিং ব্রেক মুক্ত করলে গাড়ি পিছনের দিকে না গিয়ে আস্তে আস্তে সামনের দিকে অগ্রসর হয় (যদি আপনি গাড়ি নিয়ে র্যাম্পের উপরে উঠাতে ব্যর্থ হন বা আপনার গাড়ি পিছনের দিকে গড়িয়ে আসে এবং র্যাম্পের দুই পাশের যে দিকে গাড়ির সাথে ঘষা লাগে তাহলে র্যাম্প টেস্টে অকৃতকার্য় বলে গণ্য হবেন।
মাঠ পর্য়ায়ের তৃতীয় ধাপের পরীক্ষার নাম রোড টেস্ট। জিগজ্যাগ টেস্ট ও র্যাম্প টেস্টে কৃতকার্য় হওয়ার পর রোড টেস্টে অংশগ্রহণ করতে হবে। এই পর্য়ায়ে চালক যদি ভালভাবে রাস্তায় গাড়ি চালাতে পারেন এবং গিয়ার বদলানো, সিগন্যাল লাইট ব্যবহার করা, হাত দিয়ে নির্দেশ দেয়া, ওভারটেক করা বা অন্য গাড়িকে ওভারটেক করতে দেয়া ইত্যাদি নিয়ম-কানুনগুলি সুষ্ঠুভাবে পালন করে গাড়ি চালাতে সমর্থ হন তাহলে রোড টেস্টে কৃতকার্য় বলে গণ্য হবেন।
প্রশ্নঃ জিগ জ্যাগ টেস্টের জন্য মাঠে যে আঁকাবাঁকা রাস্তা মার্কিং করা হয় তার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ কিভাবে ধার্য় করা হয়?
উত্তরঃ গাড়ির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের দেড়গুণ ধরে মাঠে মার্কিং করা হয়। অর্থাৎ মার্কিং করা রাস্তার প্রস্থ গাড়ির প্রস্থের দেড়গুন এবং বাঁক গাড়ির দৈর্ঘের দেড়গুন ধরে মাঠ মার্কিং করা হয়ে থাকে।
প্রশ্নঃ মাঠ পর্য়ায়ে যে পরীক্ষার কথা বলা হয়েছে তা কি সব শ্রেণীর ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রযোজ্য?
উত্তরঃ না, এটা শুধু হালকা মোটরযানের ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য প্রযোজ্য। মধ্যম মানের ও ভারি যানবাহনের লাইসেন্সের জন্য উক্ত পরীক্ষা ছাড়াও রাস্তায় গাড়ি চালিয়ে ড্রাইভিং পারদর্শিতা যাচাই পরীক্ষা দিতে হয়। সেই সঙ্গে গাড়ির কি কি ত্রুটি হতে পারে এবং সেই ত্রুটি নিরুপনের দক্ষতা যাচাই করা হয়। মধ্যম মানের ও ভারি যানবাহনের লাইসেন্স প্রাপ্ত ব্যক্তি তিন বৎসরের পূর্বে এই পরীক্ষা দিতে পারে না।
প্রশ্নঃ ড্রাইভিং লাইসেন্স কতদিন পর নবায়ন করতে হয়?
উত্তরঃ অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে দশ বৎসর পর এবং পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ক্ষেত্রে পাঁচ বৎসর পর পর নবায়ন করতে হয়।
প্রশ্নঃ ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য মোটরযানকে কয় শ্রেণীতে ভাগ করা যায় ও কি কি?
উত্তরঃ ৫ শ্রেণীতে। যেমনঃ (১) হালকা মোটরযান, (২) মধ্যমমানের মোটরযান, (৩) ভারি মোটরযান, (৪) মোটর সাইকেল, (৫) মোটর ক্যাব।
প্রশ্নঃ লাইসেন্স পেতে হলে বয়স ও শিক্ষাগত যোগ্যতা বিষয়ে আইনের কি বিধান আছে?
উত্তরঃ (১) অপেশাদার ড্রাইভারের ক্ষেত্রে- স্পষ্টভাবে লিখতে ও পড়তে পারে এবং নূন্যতম বয়স ১৮ বছর হতে হবে। (২) পেশাদার ড্রাইভারের ক্ষেত্রে- স্পষ্টভাবে লিখত ও পড়তে পারে এবং নূন্যতম বয়স ২০ বছর হতে হবে।
প্রশ্নঃ ভারি মোটরযান কোনগুলো?
উত্তরঃ যে সমস্ত মোটরযানের ওজন ১৪৫০০ পাউন্ডের অধিক এবং সিটের সংখ্যা চালকসহ ৩১ জনের বেশি।
প্রশ্নঃ হালকা মোটরযান কোনগুলো?
উত্তরঃ যে সমস্ত মোটরযানের ওজন ৬০০০ পাউন্ডের অধিক নয় এবং সিটের সংখ্যা চালকসহ ১২ জনের বেশি নয়।
প্রশ্নঃ শ্রেণী অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্সকে কয় শ্রেণীতে ভাগ করা যায় ও কি কি?
উত্তরঃ লাইসেন্সের শ্রেণী অনুযায়ী লাইসেন্সকে নিম্নলিখিত পাঁচ শ্রেণীতে ভাগ করা যায়। যথা- (১) শিক্ষাণবীস ড্রাইভিং লাইসেন্স, (২) অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স, (৩) পেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্স, (৪) পি.এস.ভি. লাইসেন্স, (৫) ইনস্ট্রাকটর লাইসেন্স।
(আগের পর্ব)